পরিবেশবাদীদের উদ্বেগ
পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই প্লাটিক বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাত করছে দেশের একটি অ্যালকোহল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এক হাজার মিলিলিটার ও ৫০০ মিলিলিটার বোতলে সরবরাহের অনুমতি দিলেও মেলেনি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র।
অভিযোগ রয়েছে, অনুমতি ছাড়াই গেল কয়েক বছর ধরে প্লাটিক বোতলে দেশী লিকার অ্যালকোহল বাজারজাত করছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে, তেমনিভাবে অবৈধভাবে সহজেই পাচার ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে কোম্পানীর দাবি অনুমোদন নিয়েই প্লাষ্টিক(পেট) বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাত করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে কেরু এন্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড প্লাটিক বোতলে দেশী লিকার হিসেবে অ্যালকোহল বাজারজাতকরণের জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে আবেদন করে। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন, অর্থ ও পরিকল্পনা) মোহাম্মদ মামুন মিয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে পরিবেশ বান্ধব বোতলের ধরণ নির্ধারণে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের শর্তে বোতল ব্যবহারের অনুমতি দেন। পরে কেরু কোম্পানি বিষয়টি অনুমোদনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে আবেদন করে।
ওই আবেদনের পর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরী ১২ ফেব্রয়ারি স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানান, পেট বোতলে মদ বাজারজাতকরণের পূর্বে পরিবেশগত ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর উম্মুক্ত দরপত্রের (ওটিএম) মাধ্যমে প্লাটিক বোতল ক্রয় করে কেরু কোম্পানি অ্যালকোহল বাজারজাত করবে। ওই প্লাটিক বোতল প্রস্তুতকারকদের পরিবেশ ছাড়পত্র থাকলেও কেরু কোম্পানির ডিস্টিলারি প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র নেই। এছাড়া সরকার প্লাটিক বোতলকে ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাটিক’ নির্ধারণ করেছে। এ অবস্থায় ডিস্টিলারি প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশ ছাড়পত্র গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক।
তবে প্লাটিক বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাতকরণে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন অনুমতি না মিললেও কেরু কোম্পানির পূর্ব আবেদনেই সম্মতি দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সর্বশেষ গত ২৮ এপ্রিল অধিদপ্তরের উপ পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ হাবীব তৌহিদ ইমাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ অনুমতি দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করে কেম্পানি সংশ্লিষ্টরা জানান, বছর খানেক আগে এ বিষয়ে চিঠি চালাচালি শুরু হলেও কেরু কোম্পানি গত ৩/৪ বছর ধরেই কাঁচের বোতলের বদলে প্লাটিক বোতল ব্যবহার করছে। বিষয়টির বৈধতা দিতে তারা গত বছর থেকে মাদকদব্য অধিদপ্তর ও পরিবেশ দপ্তরে চিঠি চালাচালি করছে।
এদিকে, এ ঘটনাকে উদ্বেগজনক ও জনস্বার্ধবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশবাদীরা। তারা অবিলম্বে এটি বন্ধের দাবি জানান।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাফজুর রহমান মুকুল বলেন, মদ এমনিতেই একটি বিষক্রিয়া। তা’ আবার প্লাষ্টিকের বোতলে বাজারজাত করা হলে মাইক্রোপ্লাষ্টিক মদের সাথে যুক্ত হয়ে ভয়াবহ ক্ষতির দিকে ঠেলে দেবে। যেটি হবে খুবই বিপদজনক।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-রিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, কেরু কোম্পানি থেকে প্লাষ্টিক বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাতকরণের অনুমোদন চেয়েছিল। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর অনুমোদন দেয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পত্রে বলা হয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া প্লাষ্টিক বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাতকরণের কোন সুযোগ নেই। এর পরেও কোম্পানি প্লাষ্টিকে অ্যালকোহল বাজারজাত করলে সেটি আইনগতভাবে অপরাধের মধ্যে পড়বে।
কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপক (এফএল) মোঃ রাজিবুল হাসান বলেন, যেহেতু অন্যান্য পানি প্লাষ্টিক বোতলে বাজারজাত হচ্ছে সেহেতু অ্যালকোহল বাজারজাতকরনেও কোন বাধা থাকার কথা নয়। তাছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়েই প্লাষ্টিক(পেট) বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাত করা হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় পরিচালক মোঃ সাদিকুল ইসলাম বলেন, প্লাষ্টিকের বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাতকরণের কোন সুযোগ নেই। এমন কোন অনুমোদনও দেওয়া হয়নি। যদি কেউ করে থাকে সেটি অবৈধ। প্লাষ্টিকের বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাত করলে দু’টি ক্ষতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথমত: প্লাষ্টিক একটি ক্ষতিকর দ্রব্য। যিনি ওই পাত্রের দ্রব্য গ্রহণ করবেন তিনি যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হবেন তেমনি বোতলগুলো পথে-ঘাটে ফেলে দেওয়া হবে বলে সেগুলো পরিবেশেরও ক্ষতি করবে।