পলাশ কর্মকার, কপিলমুনি(খুলনা): কপিলমুনি অঞ্চলে চিংড়ি ঘেরে দেখা দিয়েছে মড়ক। বাজারজাত করার আগেই অধিকাংশ চিংড়ি ঘেরের চিংড়ি মরে যাচ্ছে, ফলে চিংড়ি চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন। জলবায়ু পরিবর্তন, দূর্বল নার্সারী, তাপমাত্রা ওঠানামা, ত্রæটিপূর্ণ ঘের ব্যবস্থাপনা এবং চাষাবাদে ভাইরাসমুক্ত পোনা ব্যবহার না করা ও চাষের ক্ষেত্রে আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ না করাটা চিংড়িতে ভাইরাসসহ অন্যান্য রোগ বালাইয়ের কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
জানাযায়, খুলনা জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ এলাকায় ৮০’র দশকে শুরু হয় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চিংড়ি চাষ। শুরুর দিকে চিংড়ি চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় কপিলমুনিসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে পড়তে থাকে এ চাষ ব্যবস্থা। ৯০ দশকের মাঝামাঝিতে দেখা দেয় ভাইরাসসহ নানা রোগ বালাই। এর পাশ কাটিয়ে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে চিংড়ি চাষকে এগিয়ে নিতে থাকেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এবছর বেশিরভাগ চাষী বলছেন একই কথা, তারা চড়া মূল্যে হারির টাকা দিয়ে চিংড়ি চাষ করতে গিয়ে যেন বিপাকে পড়েছেন। একদিকে মড়কে সব শেষ, অন্যদিকে উৎপাদিত চিংড়ির মূল্য গত বছরের তুলনায় বাড়েনি, সবমিলে এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা।
কপিলমুনির উত্তর সলুয়া গ্রামের ঘের ব্যবসায়ী অর্জুন কর্মকার জানান, এবছর চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন গ্রেড শ্রেণী ভেদে প্রতি কেজি ৬‘শ থেকে ৯ ‘শ টাকায়। এছাড়াও প্রতি বছর মৌসুমের শুরুতেই চাহিদা বেশি থাকায় হ্যাচারী মালিকরা পোনার দাম বাড়িয়ে দেয়। অনেক চিংড়ি চাষী বলছেন চিংড়ি বাজারের এ দুরাবস্থা চলমান থাকলে ভবিষ্যতে চিংড়ি চাষ ও ব্যবসা হুমকির মুখে পড়বে। অপর ঘের ব্যবসায়ী শেখ ইসহাক আলী জানান, বছরের প্রথমেই চিংড়িতে ভাইরাসের কারণে এবছর আমরা একেবারেই ধরাশয়ী। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে চিংড়ি চাষ করেছি, কিভাবে সেটা পরিশোধ করবো তা ভেবে পারছিনা। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম খ্যাত হচ্ছে হিমায়িত চিংড়ি, যা রপ্তানি করে বাংলাদেশ সরকার প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করে থাকে। যার ফলে দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত হয়। এ পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, চিংড়ির বাজার মূল্য বৃদ্ধি, ভাইরাসসহ অন্যান্য রোগবালাই দমন করার ক্ষেত্রে সরকারীভাবে কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে চিংড়ি খাতে ধ্বস নামার আশংকা রয়েছে, ফলে দেশ হারাতে বসবে বৈদেশিক মূদ্রা।
এবিষয়ে পাইকগাছা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৈকত মল্লিক বলেন, বর্তমানে অধিক তাপমাত্রা ও ঘেরে পোনা ছাড়ার সময় নার্সিং পয়েন্টে না রাখার কারণে চিংড়িতে প্রতি বছর এভাবে মড়ক লেগে থাকে। ভাইরাস মুক্ত পোনা কিনা ঘেরে দেওয়ার আগে চাষীদেরকে সেটাও নিশ্চিত হতে হবে। চিংড়ি ঘেরে ৩ থেকে ৪ ফুট পানির গভীরতা থাকতে হবে, তা না হলে তীব্র গরমের কারণে মড়ক লাগে, চুন ব্যবহার না করলেও ক্যালসিয়ামের অভাবে চিংড়িতে মড়ক লেগে থাকে, আর ক্ষতিগ্রস্থ হন চাষীরা।