কারেন্ট জালের ব্যবহার, ঘের বৃদ্ধি ও কীটনাশক প্রয়োগই মূল কারণ
পলাশ কর্মকার, কপিলমুনি(খুলনা): কালের গর্ভে যেন হারিয়ে যেতে বসেছে মাছে-ভাতে বাঙালী প্রবাদ বাক্যটি। একটা সময় ছিল যখন বাঙালী মাছ ছাড়া ভাত খাওয়া ছাড়া কল্পনা করতে পারতো না। সেই বাঙালীর সব সাজে এখন মাছ খাওয়াটা যেন অনেকটা কল্পনার মতোই। তারপরেও বর্তমান সময়ের এই মাছ সংকটের নির্মম বাস্তবতাকে যেন মেতে নিতেই হচ্ছে মাছ খেকো বাঙালীদের।
হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতীর বিভিন্ন মাছ। বিল-জলাশয় পুকুর ভরাট হওয়া ও দুষণের কারণে বিলুপ্ত হচ্ছে এসব মাছ। অথচ এক সময় দেশীয় মাছে ভরপুর থাকতো কপিলমুনিসহ আশপাশ এলাকার জলাশয়গুলো। এসব মাছের মধ্যে আছে শিং, পুটি, টেংরা, মলা, ঢেলা, পাবদা, চাঁন্দা, খলিশা, কাঁচকি, কৈ, টাকি, বেলে, বাইন, গুলশা, বাতাশি, কাজরি, চাপিলা, কাকিলা, কুচো চিংড়ি, পোয়া, মাগুরসহ আরো অনেক জাতের মাছ। যা আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে, আর এ কারণে এখন শুধু কপিলমুনি এলাকানয়, দক্ষিনাঞ্চলের মানুষকে নির্ভর করতে হচ্ছে চাষের মাছের উপর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনার দক্ষিণে কপোতাক্ষ ও ভৈরব, ও শিবসা নদীর নব্যতা হারিয়ে নদীর শাখা উপ-শাখা মরে যাওয়া ও নদী পূনঃখনন করার ফলে এসব দেশীয় মাছ প্রায় শূণ্য হয়ে যেতে বসেছে। এছাড়া শস্য উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন জলাশয় থেকে পানি সেচ দেওয়ার কারণে শীত ও খরা মৌসুমে এসব জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জাতের মাছ। মিঠা পানির ৫৪ প্রজাতির মাছের মধ্যে ৩২ প্রজাতিই ছোট যার ৫ টি চরম বিপন্ন, ১৮টি বিপন্ন ও ৯ টি সংকটাপন্ন বলে মনে করা হচ্ছে।
এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে নদীতে দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে মৎস্য বিশেষজ্ঞরা যেসব সমস্যার কথা বলছেন তার মধ্যে রয়েছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বেশি পরিমাণ মৎস্য আহরণ, জলাশয়ে পর্যাপ্ত পানি না থাকা, জলাশয় ভরাট, অপরিকল্পিত বাঁধ, নদীতে অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদী। দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাওয়ায় এখন চাষের তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, বার্মার রুই ও সিলভার মাছের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে মাছে-ভাতে বাঙালীদের।
কপিলমুনি বাজারের মাছ বিক্রেতা রবিউল ইসলাম বলেন, আগে প্রায় দিনই আড়ৎ থেকে দেশী মাছ কিনতাম, এবং তা খুচরা বিক্রি করতাম, কিন্তু এখন খুব একটা দেশী মাছ পাওয়া যায় না।
পাইকগাছা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৈকত মল্লিক বলেন, এ এলাকাতে প্রায় সব জায়গায় মৎস্য ঘের তৈরী হওয়ায় বিল বলে কিছু নেই। নেই নদীর সাথে সরাসরি সংযোগও। জনসংখ্যার চাপের কারণে অতিরিক্ত মাছ আহরণ, ক্ষতিকর কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ নিধন, জমি-জলাশয়ে কীটনাশক প্রয়োগ ও মা মাছ ধরা দেশীয় মাছ হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।