শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের দাবি ক্লাস চালুর
টানা চার মাস পাঁচদিন বন্ধ থাকার পর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা থেকে ক্লাসে না ফেরার পুন:সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে, চার মাসেরও বেশি সময় ধরে অচলাবস্থায় পড়া এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সচল করার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। শিক্ষার্থীরাও ক্লাস চালুর দাবি জানিয়ে কুয়েটের রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত আবেদন দেওয়া হয়েছে। ক্লাস বন্ধ থাকায় কুয়েটের ছয় সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে।
চলমান পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ ঠিক করতে গতকাল সোমবার বেলা ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভা শুরু হয়ে চলে দুপুর একটা পর্যন্ত। সভায় সভাপতিত্ব করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মো. সাহিদুল ইসলাম।
সভা শেষে সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘কুয়েটের অচলাবস্থা নিরসনের জন্য দ্রæত ভিসি নিয়োগ দিতে সরকারের কাছে দাবি জানানো হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষকদের পূর্বের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে অর্থাৎ তারা ক্লাসে ফিরে যাবেন না। সভায় শিক্ষকরা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ভাইস চ্যান্সেলার দরকার। তার অবর্তমানে অনেক সিদ্ধান্ত এবং সংকট নিরসন দেওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে শিক্ষক সমিতি সরকারের কাছে অবিলম্বে একজন ভিসি নিয়োগ দেওয়ার জন্য জোর জানাচ্ছে।’
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. নুরুন্নবী মোল্লা বলেন, ‘ভিসি আসা মানে ক্লাসে যাওয়ার রাস্তা তৈরি হওয়া। এজন্য সরকারকে দ্রæত ভিসি নিয়োগ দিতে হবে’।
অপরদিকে, গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ছাত্র কল্যাণ কমিটি ও রেজিস্ট্রার বরাবর দেওয়া লিখিত আবেদনেও শিক্ষা কার্যক্রম দ্রæত চালুর দাবি জানানো হয়েছে। ওই আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১ তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৪ মে থেকে একাডেমিক কার্যক্রম চালু হওয়ার যে সিদ্ধান্ত সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা সেশনজটে পড়ে আছি। সিন্ডিকেটের ওই সিদ্ধান্ত দ্রæত বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।’
এছাড়া দীর্ঘদিন ক্লাস না হওয়ায় সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও। এক অভিভাবক জানান, কুয়েটের দায়িত্বশীল কেউ ফোনও ধরেন না। তিনি অবিলম্বে ক্লাস শুরুর দাবি জানিয়ে বলেন, ‘তা’ না হলে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে চলে যাবে। এর দায়ভার কে নেবে ?’
পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিরসনে ভিসি নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদিসহ অন্যান্য আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান রাখার স্বার্থে বিকল্প নির্দেশনা চেয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর রবিবার(২২ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমিতির পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রæয়ারি থেকে কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। পরে আন্দোলনের মুখে তৎকালীন ভিসি ও প্রোভিসিকে অব্যাহতি দিয়ে একজনকে অন্তর্বর্তীকালীন ভিসি নিয়োগ দেওয়া হলেও তিনি শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন। সেই থেকে এখনও কুয়েট অভিভাবকহীন।