জেলার অন্য ২৬ হাটে খাজনা দেড় থেকে দুই শতাংশ, কেসিসি আদায় করে ৫ শতাংশ # ১৫ বছরে আদায় করা ১৬ কোটি টাকা পড়ে আছে ব্যাংকে # পশু বিক্রির হাসিল কমানোর দাবি
এ এইচ হিমালয় : খুলনা নগরবাসীর সুবিধার জন্য প্রতিবছর জোড়াগেট পাইকারী কাঁচাবাজারে পশুর হাট স্থাপন করে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। কিন্তু উচ্চহারে খাজনা আদায় করায় সেই হাট থেকে পশু কিনতে গিয়ে নাজেহাল হন মানুষ। খুলনা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় স্থাপিত হাটগুলোতে সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই শতাংশ পর্যন্ত খাজনা আদায় করা হয়। কোথাও কোথাও এর চেয়েও কম নেওয়া হয়। কিন্তু কেসিসির পশুর হাটে খাজনা দিতে হয় ৫ শতাংশ হারে।
ক্রেতাদের ভাষ্য, প্রতি বছর কোরবানির গরু ও ছাগলের দাম বাড়ছে। মাঝারি আকারের গরুর দামই কয়েক বছর আগে লাখ টাকা ছুঁয়েছে। এমন একটি গরু কেসিসির ওই হাট থেকে কিনতে হলে ৫-৭ হাজার টাকা খাজনা পরিশোধ করতে হয়। এটিকে বাড়াবাড়ি উল্লেখ করে তারা এবার খাজনা কমানোর দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে প্রতিবছর হাট থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা রাজস্ব আদায় করা হলেও সেই টাকা নগরবাসীর কোনো উপকারে আসে না। হাট থেকে আয়ের বিপুল অংশ কেসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মানির পেছনে ব্যয় হয়। সরকারকে ভ্যাট, আয়কর দিয়ে বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। গত ১৫ বছর হাট থেকে আয় করা ১৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যাংকেই পড়ে আছে।
কেসিসি থেকে জানা গেছে, নগরীর জোড়াগেট পাইকারী কাঁচাবাজারে পশুর হাট বসছে দীর্ঘদিন ধরে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত কখনো ইজারা দিয়ে, কখনো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হাট পরিচালনা করতো কেসিসি। উচ্চ দরের কারণে ২০০৯ সালের পর থেকে ইজারা দরপত্রে কেউ সাড়া দেয়নি। সেই থেকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হাট পরিচালনা করে আসছে কেসিসি। চলতি বছরও ইজারায় কেউ অংশ না নেওয়ায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হাট পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১ জুন থেকে হাট শুরু হবে,চলবে ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত। এবারও ৫ শতাংশ হারে খাজনা আদায় করার কথা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এবার জেলায় ২৬টি পশুর হাট বসবে। খুলনার সবচেয়ে বড় পশুর হাট বসে ডুমুরিয়া উপজেলার শাহপুরে। হাট থেকে ২ শতাংশ করে রাজস্ব আদায় করা হয়। ডুমুরিয়া উপজেলার আঠারো মাইল ও চুকনগরেও বড় হাট বসে। সেখানে আদায় করা হয় ২ শতাংশ হারে।
ডুমুরিয়া উপজেলা প্রশাসনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ২ শতাংশ হারে রাজস্ব আদায়ের সিদ্ধান্ত হলেও গরু ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের কাছ থেকে আরও কম রাখা হয়।
তেরখাদা উপজেলার ইখড়িতে বড় হাট বসে। হাটের ইজারাদার মিলটন মুন্সি জানান, গরুর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৪০০ টাকা এবং সাধারণ ক্রেতাদের কাছ থেকে দেড় শতাংশ হারে খাজনা আদায় করা হয়। এই টাকাও অনেকে দেন না।
কেসিসির রাজস্ব কর্মকর্তা এস কে তাছাদুজ্জামান বলেন, সরকারি হাট পরিচালনা নীতিমালায় ৫ শতাংশ হারে খাজনা নেওয়ার কথা রয়েছে।
কেসিসির বাজার শাখা থেকে সরকারি হাট বাজারগুলোর ব্যবস্থাপনা ইজারা পদ্ধতি ও বণ্টন সম্পর্কিত নীতিমালা সংগ্রহ করে দেখা যায়, ৫ শতাংশ খাজনা আদায়ের কথা কোথাও উল্লেখ নেই। সেখানে সিটি করপোরশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত কমিটি টোল বা খাজনার হার নির্ধারণ করবেন বলে উল্লেখ রয়েছে।
কেসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রহিমা সুলতানা বুশরা বলেন, অনেক আগে কেসিসির সাধারণ সভায় পশুর হাটে ৫ শতাংশ হারে খাজনা আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়। সেই থেকে ৫ শতাংশ হারেই আদায় করা হচ্ছে।
খুলনা সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, শহরের হাটে পশুর দাম বেশি থাকে। এখানে ৫ শতাংশ মানে অনেক টাকা। যেহেতু আলোচনার মাধ্যমে টোল নির্ধারণের সুযোগ রয়েছে, সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেসিসির উচিত হাটের টোল কমিয়ে দেওয়া।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালে এই হাটে বিক্রি হয় ৬ হাজার ২২৭টি পশু। হাসিল হিসেবে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২০২৩ সালে ৬ হাজার ২০টি পশু বিক্রি থেকে আদায় হয়েছে ২ কোটি ২১ লাখ টাকা। ২০২২ সালে ৬ হাজার ৭৬০টি পশু বিক্রি থেকে আদায় হয়েছে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। নগরীর বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিবছর এই হাট থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা রাজস্ব আদায় হলেও তা নগরবাসীর উপকারে আসে না। আয়ের বিপুল অংশ কেসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মানীর পেছনে খরচ হয়। সরকারকে ভ্যাট, আয়কর দিয়ে বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। গত ১৫ বছর হাট থেকে আয় করা টাকার মধ্যে খরচ বাদ দিয়ে ১৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যাংকে পড়ে আছে।