স্টাফ রিপোর্টারঃ জীবনের সবচেয়ে নির্মম লড়াইটা এখন লড়ে যাচ্ছেন খুলনার দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা ইউনিয়নের খেজুরিয়া গ্রামের প্রিয়াংকা রায়। একা হাতে সংসার আর দুই শিশুপুত্র উৎসব ও দিপ্তর জীবন বাঁচানোর সংগ্রামে তিনি ভেঙে পড়েছেন, তবু হাল ছাড়েননি। গত দশ বছর ধরে দুই সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত, প্রতিমাসে নিয়মিত রক্ত দিতে হয় তাদের। কিন্তু সীমিত আয়ের পরিবারে চিকিৎসার খরচ এখন পাহাড়সম বোঝা।
তবুও একবিন্দু আশা নিয়ে প্রিয়াংকা রায় সমাজের সহমর্মী মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন আমার সন্তানদের সুস্থ জীবন ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলোরে উন্নত চিকিৎসা করাতে হবে। আমাদের পক্ষে এত বড় খরচ বহন করা সম্ভব নয়। আমি সকল হৃদয়বান মানুষের কাছে সাহায্য চাই। তাঁদের ছোট্ট সহায়তাই আমার দুই সন্তানের জীবন বাঁচাতে পারে।
থ্যালাসেমিয়া একটি জেনেটিক রক্তজনিত রোগ, যেখানে রক্তে স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন তৈরি হয় না। ফলে রোগীদের নিয়মিত রক্ত নিতে হয়, যা না করলে তারা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়।
প্রিয়াংকার দুই সন্তানকেই প্রতি মাসে অন্তত দুইবার রক্ত দিতে হয়। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। কিন্তু এখন আর চিকিৎসার খরচ মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।
প্রিয়াংকা রায় বলেন, প্রতিটি মাসেই ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। ওষুধ, রক্ত, ভাড়া, হাসপাতাল ফি সব মিলিয়ে টানাটানি পড়ে যায়। তবুও চেষ্টা করছি, কারণ এরা আমার প্রাণের টুকরো।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, থ্যালাসেমিয়ার স্থায়ী চিকিৎসা হলো বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট একটি জটিল ও ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। এই চিকিৎসা বর্তমানে বাংলাদেশে সীমিত, তবে ভারতে ব্যাঙ্গালোরে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে।
প্রিয়াংকার স্বামী নিখিল বিশ্বাস একজন দিনমজুর। প্রতিদিন শ্রমের বিনিময়ে যা আয় হয়, তা দিয়ে ঘর চালানোই কঠিন। এখন সেই সামান্য আয়ের বড় অংশ চলে যায় চিকিৎসায়।
নিখিল বিশ্বাস বলেন, আমরা যা পারি সব করেছি। ধার করেছি, গয়না বিক্রি করেছি। এখন আর কিছুই নেই। চিকিৎসার খরচ এত বেশি যে, আমাদের ঘর প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে। শুধু সমাজের মানুষদের সহানুভূতিই এখন ভরসা।
গ্রামের প্রতিবেশী সুভাষ রায় বলেন, প্রিয়াংকা অসহায়ভাবে দুই সন্তানকে নিয়ে যুদ্ধ করছেন। আমরা স্থানীয়ভাবে কিছু সহায়তা করার চেষ্টা করছি। কিন্তু চিকিৎসার খরচ এত বেশি যে, এটি সমাজের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়।
প্রিয়াংকা রায় নিজেই এখন সন্তানদের জীবন বাঁচাতে মানুষের কাছে হাত বাড়িয়েছেন। তিনি বলেন, আমি কারও কাছে ভিক্ষা চাইছি না, শুধু আমার সন্তানদের জীবনের জন্য একটু সহানুভূতি চাইছি। সবাই যদি সামান্য একটু সাহায্য করেন, হয়তো আমার সন্তানরা আবারও স্কুলে যেতে পারবে, খেলতে পারবে, হাসতে পারবে।
যে কেউ এই দুই শিশুর চিকিৎসায় সহায়তা করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন। বিকাশ/নগদ নম্বর: ০১৯৪৬-৯৩০৮৪০ (প্রিয়াংকা রায়)
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৭,০০০ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম নেয়। সঠিক সচেতনতা ও রক্তদানের সংস্কৃতি না থাকায় অনেক শিশুই সময়মতো চিকিৎসা পায় না।চিকিৎসকেরা বলছেন, এই রোগের প্রতিরোধে বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা জরুরি।
দুই শিশুর মুখে স্বাভাবিক হাসি ফিরিয়ে আনতে এখন দরকার সমাজের সহমর্মিতা। প্রিয়াংকা রায়ের মতো হাজারো মা প্রতিদিন লড়ছেন সন্তানের জীবনের জন্য।মানুষের ছোট্ট সহযোগিতাই হতে পারে তাদের জীবনের আলো।