ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। দাবি বাস্তবায়িত না হলে আগামী শনিবার (২৪ মে) প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাও করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটির নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেন গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ও জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারুক হাসান। ডিএনসিসি প্রশাসককে অপসারণ ও গ্রেপ্তারের দাবিতে দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা এ বিক্ষোভের আয়োজন করে।
সংগঠনটির নেতারা বলেন, দেশে আওয়ামী লীগের মতো ফ্যাসিবাদের যেমন জায়গা হয়নি, তেমনি জঙ্গিবাদের ঠাঁই হবে না। অন্তর্বর্তী সরকার দেশের মানুষ ও কোনো রাজনৈতিক দলের কথা না শুনে শুধু একটি দলের কথা শুনে দেশ পরিচালনা করছে। তারা দেশকে এনজিও প্রজাতন্ত্র বানানোর চেষ্টা করছে। সরকার নির্বাচন বাদ দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ দিচ্ছে বলেও সমাবেশে অভিযোগ তোলা হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে ফারুক হাসান বলেন, ২০১৮ সাল পর্যন্ত ডিএনসিসি প্রশাসক এজাজ নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সক্রিয় নেতা ছিলেন। শুধু নেতা বললে ভুল হবে, প্রথম সারির নেতা ছিলেন। হিযবুত তাহরীর করার কারণে একাধিকবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরপর আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগসাজশ করে কারাগার থেকে বেরিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগ করেছেন।
ফারুক হাসান বলেন, আওয়ামী লীগের ধান্দাবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি প্রতিটি অপকর্মের সঙ্গে এজাজ সম্পৃক্ত ছিলেন। এরপর আন্দোলন-সংগ্রাম শুরুর পর খোলস পাল্টে এ সরকারের নব্যবিপ্লবী বনে যান। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে তলে তলে গোপন চুক্তি করে এই এজাজ আজকে সিটি করপোরেশনের ‘জমিদার’।৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে গণঅধিকার পরিষদের এই নেতা বলেন, বৃহস্পতিবার (২২ মে) পর্যন্ত এ সরকার তথা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে আলটিমেটাম দিচ্ছি। এর মধ্যে এজাজকে অপসারণ করে গ্রেপ্তার করা না হলে আগামী শনিবার আমাদের কর্মসূচি হবে যমুনার সামনে।
সংগঠনটির উচ্চ পরিষদ সদস্য আবু হানিফ বলেন, প্রশাসক এজাজকে অপসারণ ও গ্রেপ্তার করতে হবে। তাকে যারা নিয়োগ দিয়েছে তারা কত টাকার বিনিময়ে, কোথায় কীভাবে লেনদেন হয়েছে এবং এর সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, ‘শ্রমজীবী মানুষের রক্তে অর্জিত জুলাই বিপ্লবকে বিক্রি করে দিচ্ছে কতিপয় স্বার্থান্বেষী সমন্বয়ক নামধারীরা। গাবতলীর পশুর হাটের সর্বোচ্চ ২২ কোটি টাকা দরদাতাকে ইজারা দেয়নি প্রশাসক এজাজ। ঢাকায় এনসিপি নামের নতুন রাজনৈতিক দলটির নেতাকর্মী তৈরির জন্য এজাজ সাহেব নিজেই এই খাস কালেকশনের দায়িত্ব নিয়েছেন। যেন এনসিপির দিকে মানুষ ধাবিত হয় সেই কাজ করছেন তিনি। কারণ ঢাকা থেকে এনসিপির অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচন করবে।’
সমাবেশের আগে ঢাকা উত্তর সিটির নগর ভবনের সামনে প্রশাসক এজাজের অপসারণের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। সমাবেশ শেষে নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ মিছিল হয়। গণঅধিকার পরিষদের কর্মসূচির পাশাপাশি তেজগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদেরও পৃথকভাবে নগর ভবনের সামনে ডিএনসিসি প্রশাসকের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা যায়।এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজকে নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রপন্থি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে যুক্ত করার অভিযোগকে ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রত্যাখ্যান করেছে ডিএনসিসি। গত রোববার (১৮ মে) এক বিবৃতিতে ডিএনসিসির মুখপাত্র ও তথ্য কর্মকর্তা ফারজানা ববি ডিএনসিসির ফেসবুক পেজের এক পোস্টে বিষয়টি উল্লেখ করেন। পরে ডিএনসিসির সেই পোস্টটি আবার প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ তার ভেরিফায়েড পেজেও শেয়ার করেন।
ডিএনসিসির সেই পোস্টে উল্লেখ করা হয়, এই অভিযোগগুলো মূলত তাদের কাছ থেকে এসেছে, যারা পূর্ববর্তী সময়গুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘন, পরিবেশের ক্ষতি ও স্বৈরাচারী আচরণের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং যাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে মোহাম্মদ এজাজ ধারাবাহিকভাবে সোচ্চার থেকেছেন।সেখানে আরও বলা হয়, মোহাম্মদ এজাজ একজন দীর্ঘদিনের পরিবেশকর্মী, লেখক ও চিন্তাবিদ। তিনি প্রায় ১৬ বছর ধরে নদী রক্ষা, জলাধার সংরক্ষণ এবং পানির ন্যায্য বণ্টন নিয়ে কাজ করে আসছেন। তিনি জল-সংকট, আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি ও পানির ওপর নির্ভরশীল মানুষের অধিকার নিয়ে অবস্থান করে কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠীর স্বার্থে আঘাত করেছেন। ফলে পরিকল্পিতভাবে তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে একটি চক্র।