ডিগ্রি পর্যায়ের তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি

ডিগ্রি পর্যায়ের তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য প্রকাশিত তালিকা থেকে বাদ পড়াদের যুক্ত করা এবং তালিকার ভুল-অসঙ্গতি সংশোধন করা হয়নি গত চার মাসেও। ফলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তালিকায় যুক্ত করাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা তোলারও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বেসরকারি কলেজের ডিগ্রি পর্যায়ের তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।এ আলোকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) মাঠ পর্যায় থেকে প্রতিষ্ঠান প্রধানের মাধ্যমে তালিকা সংগ্রহ করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। গতবছরের ৭ নভেম্বর ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নিয়োগ পাওয়া ৭৭০ জন শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করেছে মাউশি। কিন্তু এই তালিকায় ভুল ও নানা অসঙ্গতি পাওয়া যায়। ফলে নতুন করে তালিকা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু এই তালিকা এখনো সংশোধন করা হয়নি। এমনকি নতুনদের বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি মাউশি।তালিকায় মাউশির ভুল ও অসঙ্গতি ধরা পড়লেও দায় চাপানো হয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের ওপর। মাউশির কর্মকর্তা বলছেন, প্রতিষ্ঠান প্রধান থেকে যে তালিকা পাঠানো হয়েছে সে তালিকাই প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তালিকায় একজনের নাম একাধিকবার রয়েছে। আবার যোগ্য প্রার্থীর নামও বাদ দেওয়া হয়েছে। তালিকায় রয়েছে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদেরও তালিকা। আবার সরকারি কলেজের শিক্ষকদের নামও যুক্ত হয়েছে এই তালিকায়।আমিনুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক জানান, বিধি মোতাবেক নিয়োগ পেয়েছি এবং যোগ্য শিক্ষক হিসেবে আমার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নাম মাউশিতে পাঠানো হয়েছে। এর প্রমাণও রয়েছে। যে মেইল থেকে এই তালিকা মাউশিকে পাঠানো হয়েছে তার প্রমাণও রয়েছে। মাউশির উদাসীনতায় এমনটি হয়েছে। সারা দেশের যোগ্য শতাধিক শিক্ষক এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।মাউশির সংশ্লিষ্ট শাখার উপ-পরিচালক এনামুল হক হাওলাদার বলেন, নতুন তালিকায় যুক্ত শিক্ষকদের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করছি এ বিষয়ে দ্রুত মতামত আসবে। এরপরই তা বাস্তবায়ন করা হবে।তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাউশির অপর এক কর্মকর্তা বলেন, যাচাই-বাছাই করে তালিকা প্রকাশের জন্য তত্কালীন মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুকের সঙ্গে আমরা আলোচনাও করেছিলাম। কিন্তু আমাদের মতামত উপেক্ষা করে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে শিক্ষকরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছে। ঐ কর্মকর্তা আরো বলেন, ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাও অস্পষ্ট ছিল। মন্ত্রণালয় থেকে যত বিলম্বে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে শিক্ষকদের হয়রানি তত বাড়তে থাকবে বলে মনে করেন মাউশির এই কর্মকর্তা।তথ্য অনুযায়ী, আগে প্রকাশিত ৭৭০ জন শিক্ষকের তালিকা বিভিন্ন আঞ্চলিক কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সে আলোকে মাঠ পর্যায় থেকে যাচাই-বাছাই শেষে এমপিওভুক্তি করা হবে। যারা এমপিওভুক্তির যোগ্য নয়, তাদের এমপিওভুক্তির সুযোগও নেই। মাঠ পর্যায় থেকেই বাদ পড়ে যাবে।জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, বেসরকারি কলেজের ডিগ্রি স্তরটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী, ডিগ্রি স্তরে প্রতিটি ঐচ্ছিক বিষয়ে অনুমোদন পেতে হলে তিন জন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হয়। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী দুজন শিক্ষকের পদ রয়েছে। ফলে তৃতীয় শিক্ষক এমপিওভুক্ত হন না। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশ অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ডিগ্রি স্তরের ১৫৩ তৃতীয় শিক্ষককে (২০১০ সালের ২৮ আগস্ট পর্যন্ত নিয়োগ পাওয়া) এমপিওভুক্ত করা হয়। তবে ঐ সময়ের পর বিভিন্ন ডিগ্রি কলেজে নিয়োগ পাওয়া প্রায় সাড়ে ৮০০ তৃতীয় শিক্ষক এখনো এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। এর মধ্যে গত ৭ নভেম্বর ৭৭০ জনের তালিকা প্রকাশ করে মাউশি। যাতে নানা ভুল ও অসঙ্গতি রয়েছে। এখন বাদ পড়াদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।