/ অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেট আজ

অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেট আজ

#৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব

#সংকুচিত বাজেটে চাপে থাকবে ভোক্তা

#বিকেল ৩টায় অর্থ উপদেষ্টার বাজেট পেশ করবেন

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে আজ। এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাকে প্রাধান্য দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। যার ফলে চলতি অর্থবছরের তুলনায় বাজেটে আকার কমেছে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে উন্নয়ন ব্যয়সহ সরকারি ব্যয় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার বিকেল ৩টায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের বাজেট বক্তব্য স¤প্রচার করা হবে।
সবশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। জুলাইয়ে নতুন অর্থবছর শুরুর পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। অর্থবছরের মাঝপথে কাঁটছাঁট করলে বাজেটের আকার দাঁড়ায় ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বাজেটের আকার আগের অর্থবছরের তুলনায় কমছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় কিছু কর্মসূচিতে ভাতার পরিমাণ ও উপকারভোগী বাড়ানোর পাশাপাশি গ্রামীণ পর্যায়ে কর্মসংস্থানে সুযোগ তৈরির উদ্যোগ থাকবে। এজন্য উজ্জীবিত করা হবে রাস্তাঘাট নির্মাণ, সংস্কারসহ গ্রামীণ অবকাঠামো খাতের কর্মযজ্ঞকে। জাতীয় সংসদ না থাকায় ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট এবার রাষ্ট্রীয় স¤প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হবে।
আজ বিকেল ৩টায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের বাজেট বক্তব্য স¤প্রচার করা হবে। ওইদিন বিকেল ৪টায় ধারণকৃত বাজেট বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত হবে। এছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে ‘ফিড’ নিয়ে অন্যান্য সব বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতারে একই সময়ে জাতীয় বাজেট বক্তব্য প্রচারের অনুরোধ করা হয়েছে তথ্য বিবরণীতে।
এর আগে সংসদের বাইরে বাজেট দেওয়া হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল তত্ত¡াবধায়ক সরকার। ওই বছরের ৯ জুন তখনকার অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। সেদিনও ছিল সোমবার। ওইদিন বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে স¤প্রচার করা হয়েছিল মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের বাজেট বক্তব্য। আওয়ামী লীগের চার মেয়াদে সাড়ে ১৫ বছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত টানা ১০বার, আ হ ম মুস্তফা কামাল পাঁচবার এবং আবুল হাসান মাহমুদ আলী একবার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেন। বিগত সরকারের আমলের এসব বাজেট জাতীয় সংসদেই উপস্থাপন করা হয়। পরে মাসজুড়ে সেই প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা হতো সংসদে। জুন মাসের শেষ দিকে সংসদে পাস হতো নতুন অর্থবছরের বাজেট।
সংসদ না থাকায় আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না এবারের বাজেটে। তবে বাজেট ঘোষণার পর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর নাগরিকদের কাছ থেকে মতামত চাইবে অর্থ মন্ত্রণালয়। মতামতের ভিত্তিতে তা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর আগামী ২৩ জুনের পর যেকোনো একদিন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন নিয়ে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে তা আগামী এক জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে।
দাম কমতে পারে যে সব পণ্যের
প্রস্তাবিত বাজেটে এলএনজি আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার হতে যাচ্ছে। বর্তমানে এলএনজি আমদানির সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয়। আবার গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রির সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ উৎসে কর দিতে হয়। এছাড়া বাইরেও এলএনজি মার্জিনের বিল পরিশোধের সময় গ্যাস বিতরণ সংস্থার কাছ থেকে ৫ শতাংশ উৎসে কর কাটা হয়।
জ্বালানি তেলেও শুল্ক কমছে
ক্রুড ফুয়েল অয়েল বা অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ওপর শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হতে পারে এবং অন্যান্য জ্বালানি আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ কমানো হতে পারে। এর ফলে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমতে পারে। এছাড়া স্থানীয় শিল্প যেমন টায়ার, টিউব, ব্রেক সু, ব্রেক প্যাড, মার্বেল ও গ্রানাইট উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর প্রস্তাব থাকতে পারে প্রস্তাবিত বাজেট।
চামড়া শিল্পে শুল্ক ছাড়
আসছে ঈদুল আজহায় কোরবানি পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করণে বড় উপকরণ হচ্ছে বিভিন্ন রাসায়নিক উপকরণ। এছাড়া সারা বছরই সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পে এমন উপকরণ সাশ্রয়ী মূল্যে রাখা জরুরি। সেই বিবেচনায় চামড়া শিল্পের জন্য কিছু রাসায়নিক উপাদানে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে ১ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঋণপত্রে কমছে উৎসে কর
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে উৎসে কর রাজস্ব আদায়ে কিংবা পণ্যের দামের ক্ষেত্রে বড় কোনো প্রভাব রাখে না। তবুও এক শ্রেণির ব্যবসায়ী এই উৎসে করের অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আসন্ন বাজেটে উৎসে কর বা সোর্স ট্যাক্স কমানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আগামী বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে স্থানীয় ঋণপত্রের কমিশনের উৎসে কর কমিয়ে অর্ধেক করা হচ্ছে। বর্তমানে ১ শতাংশ উৎসে কর রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে রয়েছে- ধান, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মটরশুঁটি, ছোলা, মসুর ডাল, আদা, হলুদ, শুকনো মরিচ, ডাল, ভুট্টা, মোটা আটা, আটা, লবণ, চিনি, ভোজ্যতেল, কালো গোলমরিচ, দারুচিনি, বাদাম, লবঙ্গ, খেজুর, ক্যাসিয়া পাতা, কম্পিউটার ও কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ এবং সব ধরনের ফল। সেক্ষেত্রে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে। যা সাধারণ মানুষের জন্য সুখবর বলা যায়।
ভ‚মি নিবন্ধনে কর কমছে
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ভ‚মি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে আসন্ন বাজেটে কিছুটা ছাড় দেওয়া হচ্ছে। কাঠার পরিবর্তে শতাংশে নিবন্ধন ফি ও কর নির্ধারণ করা হবে। ভ‚মি নিবন্ধনে অগ্রিম কর কিছুটা কমানো হতে পারে। এর ফলে ভ‚মি বা সম্পত্তি নিবন্ধনে কর কমবে না বলে মনে করেন কর্মকর্তারা। গত অর্থবছর ভ‚মি নিবন্ধন থেকে এনবিআর প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার কর পেয়েছে।
শুল্ক কমছে চিনি আমদানিতে
চিনির বাজার দর সহনীয় ও স্থিতিশীল রাখতে বিভিন্ন সময়েই সরকার অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনির ওপর বিদ্যমান শুল্ক-কর কমানোর উদ্যোগ নেয়। এবারে প্রস্তাবিত বাজেটে চিনির বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে পরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক প্রতি টন ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৪ হাজার টাকা করার প্রস্তাব রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সয়াবিন ও কাগজ শিল্পের কাঁচামালে শুল্ক হ্রাস
দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠায় ও স্থানীয় শিল্প বিকাশে সহায়ক হিসেবে সয়াবিন মিল কিংবা কাগজশিল্পের আমদানিকৃত কাঁচামাল বা উপকরণের ওপর শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব থাকছে প্রস্তাবিত বাজেটে। পাশাপাশি থাকছে নিউট্রালাইজড সয়াবিন তেলের শুল্ক রেয়াতের প্রস্তাব। অন্যদিকে নির্মাণ শিল্পের উপকরণ স্থানীয় শিরিশ কাগজ শিল্পের প্রয়োজনীয় ফেনোলিক রেজিন ও স্যান্ডপেপার জাতীয় কাঁচামালের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকছে বলে জানা গেছে।
কম দামে মিলবে সংবাদপত্রের নিউজপ্রিন্ট
সংবাদপত্রের শিল্পে ব্যবহৃত নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক কমানোর প্রস্তাব ছিল নোয়াবসহ সংশ্লিষ্ট সংগঠনের। সেই প্রস্তাবে সাড়া দিতে ও দেশীয় গণমাধ্যমকে আরও সহায়তা দিতে নিউজপ্রিন্ট আমদানির কাস্টমস শুল্ক ৫ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব বিবেচনা থাকছে প্রস্তাবিত বাজেটে।
সাশ্রয়ে মূল্যে মিলবে ক্রিকেট ব্যাট
দেশের জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। ক্রিকেট ব্যাট এখন দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। ব্যাট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানির চেষ্টা করছে। এছাড়া ব্যাট কম দামে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে চায় সরকার। সে উদ্দেশ্যে ব্যাট তৈরি কাঠ আমদানির ওপর শুল্ক কমতে পারে। ব্যাট তৈরির কাঠ আমদানিতে মোট শুল্কহার রয়েছে ৩৭ শতাংশ। যা কমিয়ে আগামী বাজেটে ২৬ শতাংশ করা হতে পারে।
দেশি সফটওয়্যার উন্নয়নে বাড়তি সুবিধা
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও ফ্রিল্যান্সাররা সফটওয়্যার তৈরি করতে বিদেশি অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ, ডেভেলপমেন্ট টুলস, সিকিউরিটি সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকেন। পাশাপাশি দেশে উৎপাদিত সফটওয়্যার রপ্তানিও হয়। রপ্তানিকে আরও উৎসাহ দিতে বিদেশ থেকে আমদানি করা অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ, ডেভেলপমেন্ট টুলস, সিকিউরিটি সফটওয়্যারে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হতে পারে প্রস্তাবিত বাজেটে।
মাটি ও পাতার তৈরি পণ্যে ভ্যাট প্রত্যাহার
মাটির ও পাতার তৈরি তৈজসপত্রের ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব আসছে। বর্তমানে এসব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। যা বাজেটে প্রত্যাহারের প্রস্তাব রয়েছে বলে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে। বিদেশি জুস নন-অ্যালকোহলিক জুস আমদানির ওপর সম্পূরক শুল্ক ১৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০০ শতাংশ করার প্রস্তাবও থাকতে পারে প্রস্তাবিত বাজেটে। ফলে বিদেশি জুস মিলতে পারে তুলনামূলক কম দামে।
পিভিসি পাইপ ও কপার ওয়্যার
পিভিসি পাইপ দেশে উৎপাদন করা হলেও এর উপকরণ আমদানি করতে হয়। যেকোনো অবকাঠামোগত কাজেও পিভিসি পাইপের ব্যবহার রয়েছে। ওই পাইপের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপকরণের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। একই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কপার ওয়্যারেও। এই পণ্যের উপকরণ আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে প্রস্তাবিত বাজেটে।
এছাড়া পরিবহণের টায়ার, টিউব, ব্রেক সু, ব্রেক প্যাড, মার্বেল ও গ্রানাইটের কাঁচামাল এবং যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর শুল্ক কমার প্রস্তাব থাকছে প্রস্তাবিত বাজেটে। যার ইতিবাচক প্রভাব ভোক্তার পর্যায়ে দামে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দাম বাড়তে পারে যেসব পণ্যের
নির্মাণ শিল্পের অন্যতম উপাদান হলো রড। রাজস্ব আদায়ে প্রস্তাবিত বাজেটে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। বর্তমানে আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে শুল্ক-ভ্যাট ৪০ শতাংশের বেশি। প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানিতে ভ্যাট ২০২৩ শতাংশ ও উৎপাদনে ভ্যাট ২০ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে বাতিল হতে পারে বিদ্যমান ফিক্সড আমদানি শুল্ক। শুল্ককর বাড়ানো হলে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি টনে রডের দাম বাড়তে পারে প্রায় ১ হাজার ৪০০ টাকা।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে স্টিলের মূল কাঁচামাল স্ক্র্যাপ আমদানিতে প্রতি টনে ফিক্সড শুল্ক আদায় করা হয় ১ হাজার ৫০০ টাকা। অন্যদিকে স্টিল থেকে বিলেট ও রড উৎপাদনে প্রতি টনে ফিক্সড ভ্যাট ২ হাজার ২০০ টাকা। সবমিলিয়ে আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট মিলিয়ে সরকার প্রতি টনে পাচ্ছে ৩ হাজার ৭০০ টাকা।
এসি-ফ্রিজে ভ্যাট বাড়ছে
মাত্র ছয় মাস আগে ফ্রিজ ও এয়ার কন্ডিশনার প্রস্তুতকারকদের ওপর কর্পোরেট কর দ্বিগুণ করার পর। এবার তাদের পণ্যে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে সরকার। ফলে দেশীয় উৎপাদনকারীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিতে পারে। বর্তমানে ফ্রিজ ও এয়ার কন্ডিশনারের উৎপাদন পর্যায়ে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপিত রয়েছে। তবে এনবিআর আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তা ১৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা করছে।
মোটরসাইকেল ও সাইকেলের যন্ত্রাংশ
বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ আমদানিতে ৩ শতাংশের অতিরিক্ত সব আমদানি, নিয়ন্ত্রণমূলক ও সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু এতে মোটরসাইকেলের দাম সেই অর্থে কমতে দেখা যায়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শুল্ক-ভ্যাট কিছুটা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। ২০১৮ সালের পর দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদনে ১০টির বেশি কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জাপানের হোন্ডা, ইয়ামাহা ও সুজুকি এবং ভারতের উত্তরা মোটরস, টিভিএস অটো ও হিরোর মতো প্রতিষ্ঠান। দেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে রয়েছে রানার অটোমোবাইলস।
সিগারেট
গত জানুয়ারিতে সিগারেটের চারটি স্তরে দাম ও শুল্ক দুটোই বাড়ানো হয়েছিল। আদেশে নি¤œ, মধ্যম ও উচ্চ স্তরে ১০ শলাকা প্রতি সিগারেটে সম্পূরক শুল্ক ৫ থেকে ৭ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। তবে তামাক শিল্পে ব্যবহৃত সিগারেট পেপারের ওপর সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ করার প্রস্তাব আসছে বাজেটে। সেক্ষেত্রে আরেক দফায় দামে প্রভাব পড়তে পারে।
দেশীয় মোবাইল ফোন
মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনে হ্রাসকৃত ভ্যাটহার বাড়ানো হচ্ছে। উৎপাদনের ক্যাটাগরিভেদে ২ থেকে আড়াই শতাংশ ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হচ্ছে প্রস্তাবিত বাজেটে। এর ফলে দেশে তৈরি মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারিতে বাড়তি শুল্ক
ঢাকাসহ সারা দেশে বিপদজ্জনক বাহনের নাম ব্যাটারিচালিত রিকশা। অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যাটারিচালিত রিকশার দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই রিকশার ১২০০ ওয়াটের ডিসি মোটরের কাস্টমস শুল্ক ১ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে।
কসমেটিক্স পণ্যে বাড়তি খরচ
নারীদের সৌন্দর্যবর্ধনে ব্যবহৃত লিপস্টিক, লিপলাইনার, আইলাইনার, ফেসওয়াশ, মেকআপের সরঞ্জাম আমদানির ন্যূনতম মূল্য বিভিন্ন হারে বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি কেজি লিপস্টিক আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য ২০ ডলার আছে। সেটি বাড়িয়ে ৪০ ডলার করা হতে পারে। একইভাবে অন্য সব কসমেটিক্সের ন্যূনতম মূল্য বাড়ানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্যে ভ্যাট দ্বিগুণ
একবার ব্যবহারযোগ্য (ওয়ান টাইম) প্লাস্টিক পণ্যের ওপর ভ্যাট দ্বিগুণ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে চা-কফি কাপ, প্লাস্টিক প্লেট ও বাটির মতো পণ্যের ওপর ভ্যাট বেড়ে ১৫ শতাংশে পৌঁছাবে। এর ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এসব পণ্যের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত পরিবেশবান্ধব এবং প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে তৈরি পণ্যের ওপর কোনো ভ্যাট আরোপ করা হবে না। পরিবেশ সুরক্ষায় এমন প্রস্তাব করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বেøড
সেলুনে শেভিং কাজে ব্যবহৃত বেøডের দাম বাড়তে পারে। কারণ স্টেইনলেস স্টিলের স্ট্রিপ থেকে প্রস্তুত বেøড এবং কার্বন স্টিলের স্ট্রিপ থেকে প্রস্তুত বেøডের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ শতাংশ করা হচ্ছে।
টেবিলওয়্যার
বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালি সামগ্রী, হাইজেনিক ও টয়লেটসামগ্রী উৎপাদনে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে এসব পণ্যের দাম বাড়বে।
দেশে তৈরি সুতা
দেশীয় টেক্সটাইল মিলে উৎপাদিত সুতার ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। প্রতি কেজি কটন সুতা ও মেন মেইড ফাইবারে তৈরি সুতার সুনির্দিষ্ট কর তিন টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ টাকা করা হচ্ছে। এতে দেশীয় সুতায় তৈরি গামছা, লুঙ্গিসহ পোশাকের দাম বাড়তে পারে।
হেলিকপ্টার
নতুন অর্থবছরে হেলিকপ্টার আমদানিতে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানো হতে পারে। তাতে হেলিকপ্টার আমদানির খরচ বাড়বে। এর আগে হেলিকপ্টার আমদানিতে শুল্ক ছিল না।
বিদেশি চকলেট
চকলেট আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব থাকছে বাজেটে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের চকলেটের শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য চার ডলার। এটি বাড়িয়ে ১০ ডলার করা হচ্ছে। এতে আমদানি করা সব ধরনের চকলেটের দাম বাড়তে পারে।
বিদেশি খেলনা
স্থানীয় শিল্প সুরক্ষায় প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশি খেলনার ট্যারিফ মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। এতে বিদেশি খেলনার দাম বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মার্বেল-গ্রানাইট
বাসা-বাড়ির মেঝেতে ব্যবহৃত মার্বেল-গ্রানাইট পাথর আমদানির সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে মার্বেল-গ্রানাইটের দাম বাড়তে পারে। এছাড়া শুল্ক-কর বৃদ্ধিতে দাম বাড়ার আশঙ্কা আছে- তারকাঁটা, সব ধরনের স্ক্রু, নাট-বোল্ট, ইলেকট্রিক লাইন হার্ডওয়্যার, পোল ফিটিংস, তামাক বীজ ও দরজার তালা ইত্যাদি।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এটি হবে নবনিযুক্ত প্রশাসনের প্রথমবাজেট,যেখানে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবংবৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার লক্ষ্যেবিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বাজেটের একটি বড় অংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য। নির্বাচনের জন্য ২ হাজার ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব থাকবে বলে আভাস মিলেছে। তবে নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য ৫ হাজার ৯২২ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে মোট ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। এর অর্ধেকেরও বেশি বিদেশি ঋণ থেকে আসবে এবং বাকি অংশ ব্যাংক ঋণ ওসঞ্চয়পত্র থেকে সংগ্রহ করা হবে। বাজেটে পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে ৫ লাখ ৪৫হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে বাজেট পরবর্তী বিভিন্ন সংস্থা থেকে সএমনটি জানা গেছে। এছাড়া, উন্নয়ন ব্যয়ের জন্য ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকার কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হতে পারে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা ধরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে নতুন বাজেটে।