প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পৃথিবীতে এখন আর একা একটি দেশ চলতে পারেনা, অন্য দেশকে সাথে নিয়েই চলতে হয় এবং জীবন জীবিকার জন্য অন্যভাষা শেখারও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু তাই বলে নিজের ভাষাকে ভুলে যাওয়া আমাদের জন্য মোটেই ঠিক নয় ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশে ফেব্রুয়ারি এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আজ সকালে ‘একুশে পদক-২০২০’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০ ব্যক্তি এবং এক প্রতিষ্ঠানকে এ বছর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসরকারী এ সম্মাননা ‘একুশে পদক’ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।

মাতৃভাষার মর্যাদাকে সমুন্নত রাখা এবং দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন কাজে কর্মে অনেককে ঘটনাক্রমে বিদেশে থাকতে হয়। কিন্তু এই (বাংলা) ভাষার মর্যাদাকে সবসময় আমাদের দিয়ে যেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করা। একুশ শিখিয়েছে আত্মমর্যাদাবোধ। একুশের এই রক্তের অক্ষরেই লিখে রাখা হয়েছিল আগামী দিনে আমাদের স্বাধীনতা। অমর একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। আমরা চাই এই গৌরবের ইতিহাস আমাদের দেশের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন জানতে পারে। মাতৃভাষা আন্দোলন শুধু মাতৃভাষার জন্য আন্দোলন ছিলনা, পক্ষান্তরে এটা ছিল স্বাধীকার আদায়ের, স্বাধীনতার আন্দোলন।

প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতার অংশবিশেষ উল্লেখ করে বলেন, জাতির পিতা বলেছেন- ১৯৫২ সালের আন্দোলন কেবলমাত্র ভাষা আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলনা, এ আন্দোলন ছিল সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।

এবার একুশে পদক পেলেন যারা

৫ ফেব্রুয়ারি সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের একুশে পদক বিজয়ী হিসেবে ২০ ব্যক্তি এবং এক প্রতিষ্ঠানসহ ২১ জনের তালিকা প্রকাশ করে।
পদকপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- ভাষা আন্দোলনে মরহুম আমিনুল ইসলাম বাদশা (মরণোত্তর), শিল্পকলায় (সংগীত) বেগম ডালিয়া নওশিন, শঙ্কর রায় ও মিতা হক, শিল্পকলায় (নৃত্য) মো. গোলাম মোস্তফা খান, শিল্পকলায় (অভিনয়) এম এম মহসীন, শিল্পকলায় (চারুকলা) অধ্যাপক শিল্পী ড. ফরিদা জামান, মুক্তিযুদ্ধে মরহুম হাজি আক্তার সরদার (মরণোত্তর), মরহুম আব্দুল জব্বার (মরণোত্তর), মরহুম ডা. আ আ ম মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার) (মরণোত্তর), সাংবাদিকতায় জাফর ওয়াজেদ (আলী ওয়াজেদ জাফর), গবেষণায় ড. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ-ক্বারী আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ ছাইফুর রহমান নিজামী শাহ, শিক্ষায় অধ্যাপক ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া, অর্থনীতিতে অধ্যাপক ড. শামসুল আলম, সমাজসেবায় সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, ভাষা ও সাহিত্যে ড. নুরুন নবী, মরহুম সিকদার আমিনুল হক (মরণোত্তর) ও কবি,সহিত্যিক, মুক্তিযোদ্ধা বেগম নাজমুন নেসা পিয়ারি এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রসূতি মায়ের জীবন রক্ষায় সায়েবা’স কীটের উদ্ভাবক অধ্যাপক ডা. সায়েবা আখতার। একই সঙ্গে ‘গবেষণা’য় একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। পদক বিজয়ীরা প্রত্যেকে নিজে এবং মরণোত্তর পদক বিজয়ীদের পক্ষে তাঁদের পুত্র ও কন্যাগণ প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে পদক গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট’র পক্ষে পদক গ্রহণ করেন এর মহাপরিচালক ড.ইয়াহিয়া মাহমুদ। সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।