স্টাফ রিপোর্টার: মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে নগরীর গল্লামারী বধ্যভূমিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজ অর্থের অভাবে শেষ হয়নি। ১৩ বছর আগে মূল অংশের নির্মান কাজ শেষ হলেও মাষ্টার প্লান অনুযায়ী যাতায়াত রাস্তাসহ এলাকাকে আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন করার জন্য আনুসংগিক কাজ এখনও পড়ে রয়েছে। এদিকে স্মৃতিসৌধ এলাকা সম্পুর্ণ নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। স্মৃতিসৌধের আশপাশের এলাকা এখন অপরাধ ও গোচারন ভূমিতে পরিনত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,মাষ্টার প্লান অনুযায়ী দ্বিতীয় পর্যায়ে স্মৃতিসৌধ এ্যাপ্রোচ রোড ও পার্কিং ইয়ার্ড নির্মাণ,সীমানা প্রাচীরসহ গেট নির্মাণ,গার্ড/ওয়েটিং রুম ও রেষ্টুরেন্ট নির্মাণ,বৃক্ষ রোপন ও ফুলের বাগান তৈরী,পানির ফোয়ারা নির্মাণ ও স্মৃতিসৌধ এলাকা বৈদ্যুতিকরণ করার কথা।
২০১২ সালের ১০ মার্চ খুলনা জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের সচিবের বরাবরে অর্থ চেয়ে একটি পত্র প্রেরণ করা হয়। পত্রে বলা হয়,গল্লামারী স্মৃতিসৌধের স্থপতি আমিনুল ইসলাম ইমন স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কাজ সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন এবং উল্লিখিত কাজ সমূহ বাস্তবায়ন করতে বর্তমান বিদ্যমান বাজার দর অনুযায়ী আট কোটি টাকা প্রয়োজন। পত্রে প্রয়োজনীয় বরাদ্ধ দেয়ার দাবি জানানো হয়।
পত্র প্রাপ্তির পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় হতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্ধের জন্য একই বছরের ৬ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়কে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্ত মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় থেকে অদ্যবদি কোন বরাদ্ধ আসেনি। বরাদ্ধ না আসায় মাষ্টার প্লান অনুযায়ী দ্বিতীয় পর্যায়ে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। আজ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কেউ কোন খবরও রাখেনি। প্রাথমিকভাবে মূল অংশের যে নির্মান কাজ করা হয়েছিল তাও অযত্ন ও অবহেলায় ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
খুলনা জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্র্র্র্র্বাহী কর্মকর্তা তাছলিমা আক্তার বলেন,গল্লামারী স্মৃতিসৌধের অবশিষ্টাংশের কাজ সম্পন্ন করতে অর্থ বরাদ্ধের কোন খবর জানা নেই। অর্থ বরাদ্ধ হয়েছে এমন কোন খবর না থাকায় স্মৃতিসৌধটি পুর্ণাঙ্গ ভাবে নির্মাণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
এদিকে স্মৃতিসৌধের মূল অংশের নির্মান কাজ শেষে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিতদের প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এরপর থেকেই এলাকাটি অপরাধ চক্রের দখলে চলে গেছে। ফলে স্মৃতিসৌধের মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে। ইতোপূর্বে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে স্মৃতিসৌধের দেখাশুনা ও রক্ষনাবেক্ষনের জন্য দায়িত্ব পালন করার আগ্রহ প্রকাশ করা হলেও আজ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে সে দায়িত্ব দেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে খুলনা জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্র্র্র্র্বাহী কর্মকর্তা তাছলিমা আক্তার বলেন,এ পর্যন্ত কোন অর্থ বরাদ্ধ পাওয়া যায়নি। অর্থ বরাদ্ধ হয়েছে এমন কোন খবরও না থাকায় স্মৃতিসৌধটি পুর্ণাঙ্গ ভাবে নির্মাণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
খুলনা জেলা পরিষদের উপ সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ আজিজুর রহমান বলেন,প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস আসলেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও শ্রদ্ধা নিবেদনের পরিবেশ তৈরী করতে জেলা পরিষদের নিজস্ব তহবীল থেকে অল্প কিছু টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। যার পরিমান এক লক্ষ টাকার উপরে নয়।
উল্লেখ্য,২০০৮সালের ২২ মে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের সম্মেলন কক্ষে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রনালয়ের তৎকালিন উপদেষ্টা মোঃ আনোয়ারুল ইকবাল সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় গল্লামারী বধ্যভুমিতে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে একটি স্মৃতি সৌধ নির্মানের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। সভায় গল্লামারী জেলা প্রশাসনের তিন একর জমির উপর স্মৃতি সৌধ নির্মানের দায়িত্ব দেয়া হয় খুলনা জেলা পরিষদকে। সভায় জরুরী ভিত্তিতে একটি সুন্দর,দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষনীয় স্থাপত্য ডিজাইন সংগ্রহ করার তাগিদ দেয়া হয়। এলজিইডির নিজস্ব স্থাপত্যবিদ আমিরুল ইসলামের তৈরীকৃত নক্সাটি চুড়ান্ত ভাবে অনুমোদন লাভ করে। ২০০৮সালের ৪ সেপ্টম্বর ২ কোটি টাকা প্রক্কলন ব্যয় সহ নক্সা অনুমোদন দেয়া হয়। যে টাকা দিয়ে স্মৃতিসৌধের মূল অংশের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।