খুলনার ৫৬ কি.মি বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ

রঞ্জু আহমদ: আসন্ন ঘুর্ণিঝড়ের নূন্যতম প্রভাবেও ভাঙবে খুলনার অন্তত চার উপজেলার ২০টি পয়েন্ট। জেলায় মোট ৫৬ কিলোমিটার বাঁধ অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে। অর্থ না থাকায় এসব বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। গেল বছর ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধগুলোই এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়নি।
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে-খুলনার দাকোপ, বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা এবং কয়রা উপজেলার ২০ টি পয়েন্ট অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এসব উপজেলার অন্তত ১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ উচ্চ জোয়ারের চাপ সামলাতে পারবে না। আসন্ন ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছাসের নূন্যতম প্রভাবও যদি এসব এলাকার নদ-নদীতে পড়ে তবে ভেঙে যাবে এসব দুর্বল বেড়িবাঁধ এবং প্লাবিত হবে বিস্তীর্ণ এলাকা।
সূত্রটি জানিয়েছে-দাকোপ উপজেলার জাবেরের খেয়াঘাট, ঝালবুনিয়া, গাইনবাড়ি, বটবুনিয়া, কালবগির বৃহস্পতি বাজার, বটিয়াঘাটার কচুবুনিয়া ও বারোআড়িয়া, পাইকগাছা উপজেলার পাটকেলপোতা ও নারকেল তলা, ডুমুরিয়ার রতনখালী, কয়রা উপজেলার গোবরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তহশীল অফিস সংলগ্ন বেড়িবাঁধ, দশহালিয়া, শাকবাড়িয়া, জোড়শিং, চরামূখা, তেতুলতলার চর, কাটকাটা, গাতিরঘেরি, কাটকাটাসহ বেশ কিছু এলাকা অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ। নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের মাত্রা থাকে ২দশমিক ৪ থেকে ২ দশমিক ৮ মিটার। আর বেড়িবাঁধের উচ্চতা থাকে তিন দশমিক ৮ মিটার। উল্লেখিত পয়েন্টগুলোতে বেড়িবাঁধের উচ্চতা দাঁড়িয়েছে তিন মিটারের মত। ফলে স্বাভাবিকের থেকে একটু জোয়ারের পানি বাড়লেই এসব এলাকা উপচে পানি ঢুকবে। একবার উপচানো শুরু হলে সেইসব এলাকাগুলো ভেঙে যাবে দ্রুত।
পাউবোর সূত্রটি জানিয়েছে-খুলনা জেলায় মোট বেড়িবাঁধ রয়েছে ১ হাজার ১৫ কিলোমিটার। এরমধ্যে কয়রা উপজেলার ১৩-১৪/২ পোল্ডার এবং ১৪/১ পোল্ডারের ১৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সাতক্ষিরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রনে। খুলনা পাউবোর ৬ কিলোমিটার এবং সাতক্ষিরা পাউবোর প্রায় ৫ কিলোমটার বেড়িবাঁধ অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে। নাজুক অবস্থায় রয়েছে ৪৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ।
অন্যদিকে খুলনার দাকোপ উপজেলায় ৩২ ও ৩৩ নম্বর পোল্ডারে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধের কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদীশাসন না করে বাঁধ নির্মাণের কারণে সংস্কারকাজ টেকসই হচ্ছে না। এতে প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাজ পানিতে যাওয়ার আশঙ্কা করছে মানুষ।
দাকোপের কামারখোলা ইউপি চেয়ারম্যান পঞ্চানন মন্ডল বলেন, এত টাকার কাজ অথচ দুরদৃষ্টি সম্পন্ন নয়। এতবড় বড় নদী যদি শাসন না করে বাঁধ দেওয়া হয় তবে তা কিভাবে টেকে। এই বিষয়টি সাধারণ মানুষের মাথায় ঢোকে অথচ ইঞ্জিনিয়ারদের মাথায় থাকে না।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় অশনি’র আঘাতের শঙ্কায় আতংকিত হয়ে পড়েছে উপকূলীয় কয়রা, পাইকগাছা, বটিয়াঘাটা ও দাকোপ এলাকার মানুষ। এপ্রিল-মে মাস এ অঞ্চলে ঝড় জলোচ্ছাস বেশি হয়। বারবার ভেঙে যায় বেড়িবাঁধ। স্থানীয়দের অভিযোগ, বার বার বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হলেও টেকসই বাঁধ নির্মাণে উদ্যোগ নেই। কখনো কখনো দায়সারা কাজ হয়েছে।
খুলনা পাউবো-১ ও ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম বলেন- অন্তত ৯/১০ টি পয়েন্ট রয়েছে অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ। স্বাভাবিক জোয়ারের থেকে পানি বাড়লেই সেসব পয়েন্ট দিয়ে পানি ঢুকবে লোকালয়ে। আমরা সেসব স্থানে জন্য জিও ব্যাগ দিয়ে পানি ঠেকানোর চেষ্টা করছি। অন্যদিকে ঝড়ের প্রভাব এ অঞ্চলে পড়লে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। গেল বছরের ঝড়ের পরে সেভাবে পরাদ্দ না থাকায় এসব বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হয়নি।