খুলনায় ৬দিনে ৬ স্থানে আগুন : ২৮ ঘর, ২২টি
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই, কোটি টাকার ক্ষতি

এ এইচ হিমালয় ঃ খুলনা মহানগরীতে গত ৬ দিনে পৃথক ৬টি এলাকায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে রাইস মিল, গুদামসহ ২২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। অন্তত ২২টি বসতঘর পুড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন অসংখ্য মানুষ।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা বলছেন, বেশিরভাগ আগুনই অসতর্কতার কারণে ঘটছে। পুরাতন বৈদ্যুতিক লাইন মেরামত না করা, বস্তি এলাকায় সিগারেট, রান্নার চুলাসহ আগুনের অসতর্ক ব্যবহার, পুরাতন এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে অসতর্ক থাকা এবং পর্যাপ্ত অগ্নি নিরাপত্তা না থাকাই অগ্নিকান্ডের কারণ।
আগুন নেভানো ও উদ্ধার কাজ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সরকারি এই সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, শুষ্ক মৌসুমের অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি বাড়ে। এই ঝুঁকি এড়াতে সচেতনতার বিকল্প নেই।
ফায়াস সার্ভিস কন্ট্রোল রুম ে থকে জানা গেছে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রূপসা পাইকারী কাঁচাবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ওই দিনের আগুনে বাজারের ২০টি দোকান এবং পার্শ্ববর্তী সুলতান শিকদারের ১১টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পুড়ে যাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিলো ফলের আড়ৎ ৮টি, ককসিটের ৫টি, ঝুড়ি ২টি, তুষ কাঠের ২টি ও অন্যান্য ৩টি।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারের দোকানগুলোর বেশিরভাগই মালামাল ছিলো। কয়েকটি দোকান গুদাম হিসেবেও ব্যবহার হয়েছে। আগুনে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে গেছে।
২৬ ফেব্রুয়ারি রাতেই খুলনার মনিপাল এএফসি হসপিটালে (সাবেক ফরটিস হসপিটাল) এয়ার কন্ডিশন-এসি’র গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ২ জন গুরুতর আহত হন। আহত এসি মিস্ত্রি রনি ও রাজুকে আশংকাজনক অবস্থায় পাশর্^বর্তী বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
২৮ ফেব্রুয়ারি পৌনে ৩ টার দিকে নগরীর ডাকবাংলো মোড়ের রহিমা কমপ্লেক্সে আগুনে বেশ কয়েকটি দোকান ও অফিস পুড়ে যায়।
গত ১ মার্চ রাতে নগরীর লবণচরা এলাকার স্লুইস গেট সংলগ্ন ইব্রাহিমিয়া মাদ্রাসা রোডের একটি রাইসমিলে আগুন লাগে। পরে তা’ ছড়িয়ে পড়লে পাশর্^বর্তী আরও ৯টি বসত ঘর পুড়ে যায়।
গতকাল ২ মার্চ দুপুরে নগরীর মুজগুন্নী আরাফাত মসজিদ রোডের কবিরের বাড়িতে অগ্নিকা-ে ৯টি ঘর পুড়ে গেছে। প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। গতকাল রাতেই খালিশপুর জংশন মোড়ে সোনালী ব্যাংকের ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ভবনের দ্বিতীয় তলার আগুন লাগে। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত হয়।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে রূপসা ব্রীজের কাছে সালাউদ্দিন ইউসুফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ৩টি তুষকাঠের মিল, ১টি ভাঙ্গারির দোকান ও ১টি কুড়োর মিল পুড়ে ভস্মীভূত হয়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনার সহকারী পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান পূর্বাঞ্চলকে বলেন, নগরীতে সাম্প্রতিক আগুনের বেশিরভাগই অসতর্কতার কারণে ঘটছে। শুষ্ক মৌসুম হওয়ার কারণে এই সময় অগ্নি দুর্ঘটনা একটু বেশি ঘটে। এখনও ঘটছে। অগ্নি দুর্ঘটনা এড়াতে আমরা সচেতনতামূলক প্রচারণা জোরদার করেছি। হাট-বাজার, বস্তি, বহুতল ভবনে মহড়া চালাচ্ছি।
তিনি বলেন, সাধারণত বস্তি এলাকায় খোলা বাতির মাধ্যমে, চুলা থেকে আগুন, সিগারের কারণে আগুন লাগে। আমরা এসব এলাকায় এসব বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দেই।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক বাবুল চক্রবর্তী পূর্বাঞ্চলকে বলেন, একটু সচেতন হলে অগ্নি দুর্ঘটনা অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। মানুষ অগ্নি নিরাপত্তাকে তেমন গুরুত্ব দিতে চায় না। যেমন বাসা-বাড়ি ও ভবনের বেশিরভাগ আগুন শর্টসার্কিট অথবা বিদ্যুতের কারণে ঘটে। অথচ ভবন নির্মাণের সময় যে বৈদ্যুতিক কাজ করা হয়, এরপর দুর্ঘটনা ঘটার আগ পর্যন্ত কেউ বৈদ্যুতিক লাইন, সরঞ্জামগুলো সংস্কার বা মেরামত করে না। দুর্ঘটনা ঘটার পর সেগুলো মেরামত করে। এজন্য অগ্নি নিরাপত্তাকে সব সময় গুরুত্ব দিতে হবে। সচেতন থাকতে হবে।