গত ২০ বছরে ডিসেম্বর মাসে এমন বৃষ্টি হয়নি
৬৬,১৫০ হেক্টর জমিতে ছিলো পাকা ধান

এ এইচ হিমালয় ও এম এ এরশাদ, ডুমুরিয়া : খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের কৃষক মফিজুল ইসলাম এ বছর দুই বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছিলেন। গত ৩ ডিসেম্বর জমির ধান কাটেন তিনি। শুকানোর জন্য মাঠেই ছিলো ধান। গত দুই দিনের বৃষ্টিতে পুরো ধানই নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলার শোভনা গ্রামের কৃষক কৃষ্ণ মন্ডল আমন চাষ করেছিলেন ৩ বিঘা জমিতে। চলতি সপ্তাহেই ধান কাটার পরিকল্পনা ছিলো তার। বৃষ্টি আর ঝড়ো বাতাসে ক্ষেতের ৯০ ভাগ ধানই নুয়ে পড়েছে। শেষ সময়ে এসে চোখে অন্ধকার দেখছেন এই কৃষক।
শুধু মফিজুল ইসলাম বা কৃষ্ণ মন্ডলই নয়, অসময়ের ভারী বৃষ্টিতে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন খুলনার বেশিরভাগ কৃষক। বিশেষ করে পাকা ধান ও ফলন্ত সবজির ক্ষেতে ঝড়-বৃষ্টির হানায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন অনেকে। এছাড়া ঝড়ের কারণে বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে কয়রা উপজেলার দুটি গ্রাম। এর মধ্যে হরিহরপুর নামের একটি গ্রামেই ভেসে গেছে ৫৫টি মাছের ঘের।
খুলনার আবহাওয়া অফিস থেকে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে গত ৫ ডিসেম্বর ভোর ৬টা থেকে ৭ ডিসেম্বর ৬টা পর্যন্ত মোট ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছেন। এর মধ্যে প্রথম দিন ৫ ডিসেম্বর ২৫ মিলিমিটার এবং ৬ ডিসেম্বর ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ইনচার্জ আমিরুল আজাদ পূর্বাঞ্চলকে বলেন, গত ২০ বছরে ডিসেম্বর মাসের শুরুতে এমন বৃষ্টি হয়নি। এর আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস জুড়ে মোট ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। মাঝের ১০/১২ বছর ডিসেম্বর মাসে মোটেও বৃষ্টি হয়নি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, এ বছর খুলনার ৯৩ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছিলো। এর মধ্যে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৭ হাজার ২০ হেক্টর বা ২৯ শতাংশ জমির ফসল কাটা হয়েছে। অর্থাৎ ৭১ ভাগ জমির ধান এখনও মাঠেই রয়ে গেছে। এই পাকা ধানের ওপর দিয়েই বয়ে গেছে ঝড়।
অধিপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বৃষ্টিতে ৩ হাজার ২০২ হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ১২ হেক্টর জমির সবজি, ৮ হেক্টর জমির সরিষা এবং ৮ হেক্টর জমির বীজতলা নষ্ট হয়েছে। তবে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, এখনও পানির নিচে রয়েছে অনেক পাকা ধান ক্ষেত। মাঠের পর মাঠ জুড়ে পাকা ধান নুয়ে পড়েছে। এই উপজেলায় এ বছর ১৫ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে।
উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের বরাতিয়া গ্রামের নবদীপ মন্ডল বলেন, যারা আগে ধান কেটে বাড়ি নিতে পেরেছেন এমন ২/৪ জন বেঁচে গেছেন। বাকি কৃষকরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। তিনি আগে ধান কেটে ওই জমিতে বোরো চাষের জন্য ৫ কেজি ধান দিয়ে বীজতলা তৈরি করেছিলেন। তার বীজতলাও পানিতে তলিয়ে গেছে।
স্থানীয় একটি সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ৪ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন আটলিয়া ইউনিয়নের বরাতিয়া গ্রামের ইন্দ্রজিত মল্লিক ও রামকৃষ্ণ মন্ডল। গত দুইদিনের বৃষ্টিতে পুরো ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ঝড়ো বাতাসে ক্ষেতের আইলে লাগানো সীম গাছের সব ফুলও ঝড়ে গেছে। পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন এই দুই কৃষক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, অসময়ের বৃষ্টিতে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের কারণে মাঠের ধান শুয়ে পড়েছে। আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলে ক্ষতি অনেকটা কাটিয়ে ওঠা যাবে।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল জানান, ঝড়ে বাঁধ ভেঙ্গে কয়রা উপজেলার ৫৫টি ঘের তলিয়ে গেছে। এতে ২৫ হেক্টর জমির মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য উপজেলায় আর কোনো ক্ষতি হয়নি।