/ আইন,নীতি-বিধির কমতি নেই, তবুও মরছে নদী বাড়ছে ঝুঁকি

আইন,নীতি-বিধির কমতি নেই, তবুও মরছে নদী বাড়ছে ঝুঁকি

নদী রক্ষায় প্রকৃতিনির্ভর টেকসই সমাধান খুঁজে বের করতে হবে

অভিন্ন নদীর প্রশ্নে পানি কূটনীতি, ভূ-রাজনীতিকে গুরুত্ব দিতে হবে

পানিসম্পদ সংরক্ষণে সুশাসন এবং সমন্বয়ের অভাব প্রকট

আজ বিশ্ব নদী দিবস

ফারুক আহমেদঃ নদী সুরক্ষায় দেশের আইন, নীতি ও পরিকল্পনার অভাব নেই। নানা সময়ে এই আইন বিধি নীতি কৌশল কাঠামোর উদ্ভব হলেও নদী কী রক্ষা পাচ্ছে? নদী মোটেই রক্ষা পাচ্ছে না। বরং এতো আইন, নীতি, বিধি, কাঠামোর বিপরীতে নদী ক্রমান্বয়ে মরছে। অথচ প্রকৃতির অবারিত এই দানকে আমরা আশির্বাদ হিসেবে না দেখে বরং নানা অপতৎপরতা এবং অসংযমি কার্যকলাপের মাধ্যমে ধ্বংস করেই চলেছি। কিন্তু একবারও ভাবছি না এর শেষ কোথায়? তবে চিরন্তন সত্যি হলো নদী যখন শেষ হবে তখন এই বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য, কৃষি, অর্থনীতি, পরিবেশ কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না। তাই সময় এসেছে প্রয়োজনে বিদ্যমান আইনী কাঠামোর কঠোর প্রয়োগ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে অক্ষুণ্ন রাখার তাবৎ কর্মকান্ড অব্যাহত রাখা-অভিমত বিশেষজ্ঞ মহলের।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশে নদী রক্ষায় বর্তমানে হাফ ডজনেরও বেশী আইন রয়েছে যেগুলি সরাসরি নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ অক্ষুণ্ন রাখতে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়াও বেশ কিছু নীতি ও কাঠামোও রয়েছে যেগুলি সুষ্ঠু এবং কার্যকর পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে প্রণীত। এখন প্রশ্ন হলো এত শক্ত ও সমন্বিত আইনী কাঠামো থাকা সত্ত্বেও ‘নদীর দেশে’ নদীর দেশের এ বেহাল দশা কেন?

জানা যায়, দেশে কমবেশী ৭শ’ মত নদী রয়েছে। এর মধ্যে ৫৪টি রয়েছে আন্তর্জাতিক নদী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু নদী বাদে প্রায় সবগুলিই মরার পথে, প্রাণহীন, নিস্তেজ হয়ে ধুকে ধুকে মরছে। কেন নদীগুলি ধুকছে? কেন মরা নদীর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে? কেন নদীর প্লাবন ভূমির অস্বিত্ব থাকছে না? কেন জলাবদ্ধতা তৈরী হচ্ছে। কেন অপরিকল্পিত উন্নয়নের বলি হচ্ছে নদী? কেন দখল এবং দূষণে নদীর অস্তিত্ব বিলীন হচ্ছে। নদী কেন খালে পরিণত হচ্ছে? নদী কেন ময়লা ফেলার ভাগারে পরিণত হচ্ছে? নদীর পাড়ে নদীর বহুমাত্রিক সুফল কেন মানুষ ভোগ করতে পারছে না? রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে নদী কেন আক্রান্ত হচ্ছে? সভ্যতা ও কৃষির ‘আতুর ঘর’ হিসেবে স্বীকৃত নদী কেন আজ মানুষের প্রতিপক্ষ হবে? নদীকেন্দ্রীক এমনি হাজারো প্রশ্ন আজ সর্বজনবিদিত হলেও বাস্তবতা খুবই নির্মম এবং করুণ। নদীর এই নির্মম পরিণতির বিপরীতে নদী সুরক্ষায় দেশে বেশ কিছু আইন এবং বিধি রয়েছে। যেমন, ‘বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩’ রয়েছে। এই আইনের উদ্দেশ্য পানি সম্পদের সমন্বিত উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা, সুরক্ষা ও সংরক্ষণের বিধান করা। আইনটি বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, ওয়ার্পো, (ডঅজচঙ) এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (ইডউই)।

এছাড়াও রয়েছে ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন, ২০১৩’। এই আইনের উদ্দেশ্য নদীর অবৈধ দখল, পানি ও পরিবেশ দূষণ, শিল্প কারখানার নদী দূষণ রোধ, অবৈধ কাঠামো নির্মাণ ও নানাবিধ অনিয়ম রোধকল্পে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ পুনরুদ্ধার, নদীর যথাযথ রক্ষণবেক্ষণ নৌ-পরিবহনযোগ্য হিসেবে গড়ে তুলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে নদীর বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রয়োজনে একটি কমিশন গঠিত হয়। এই আইন বাস্তবায়নকারী সংস্থা হলো জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। আরও রয়েছে, ‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫’ (এবং বিধিমালা ১৯৯৭; সংশোধনী ২০০০/২০১০) নদী দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও নদীভিত্তিক ঊঈঅ ঘোষণার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া রয়েছে, ‘প্রাকৃতিক জলাধার (সংরক্ষণ) আইন, ২০০০’। এই আইনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক জলাধার (নদী, বিল, পুকুর ইত্যাদি) সুরক্ষা/সংরক্ষণ, বেআইনি ভরাট ও দখলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান। এ আইন বাস্তবায়নকারী সংস্থা হলো বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসন। আরও একটি আইন হলো: ‘বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড আইন’। এই আইন বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং নদীর তীর সংরক্ষণ কাজে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আইনি ভিত্তি ও কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা প্রদান করেছে। এছাড়াও রয়েছে, ‘পরিবেশ আদালত আইন (২০০০, সংশোধিত)’। এই আইনের আওতায় বিশেষ আদালত গঠন করে পরিবেশগত অপরাধ (যেমন নদী দূষণ ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো) বিচার করা। এছাড়াও আরও বেশ কিছু খাতভিত্তিক আইন রয়েছে যেগুলো প্রধানত পানি/পরিবেশ আইনের পরিপূরক। যেমন মাছ সংরক্ষণ ও সুরক্ষা আইন), বন আইন (সুন্দরবন সংরক্ষণ), স্থানীয় সরকার আইন (নদী তীর দখলমুক্তকরণ কার্যক্রমে প্রভাব ফলে)।

অন্যদিকে বেশ কিছু জাতীয় নীতি ও কৌশলগত কাঠামোও রয়েছে যেগুলি নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন, ‘জাতীয় পানি নীতি, ১৯৯৯’ । এই নীতি অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় পানি সম্পদের সমন্বিত ও ন্যায্য ব্যবস্থাপনা, পানি বণ্টন, পরিবেশগত প্রবাহ, আর্দ্রভূমি সংরক্ষণ ও আন্তঃ সংস্থার সমন্বয়কে নির্দেশনা প্রদান করে। ‘জাতীয় পরিবেশ নীতি, ১৯৯২’ (হালনাগাদ ২০১৮ সালে) যা নদী/আর্দ্রভূমি সংরক্ষণ ও আন্তঃ খাত পরিবেশ পরিকল্পনাকে নির্দেশনা দেয়। ‘বাংলাদেশ ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০- দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পরিকল্পনা, যা নদীর গঠন, নদী তীর ভাঙন, পলি ব্যবস্থাপনা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও টেকসই ডেল্টা উন্নয়নের রূপরেখা নির্ধারণ করে। এছাড়াও আর্দ্রভূমি/হাওর নীতি ও রামসার অঙ্গীকার হিসেবে বাংলাদেশ রামসার কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। আরও রয়েছে, বাংলাদেশের ৫৪টি অভিন্ন নদীর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ-ভারতের পরিচালনায় রয়েছে যৌথ নদী কমিশন। আইনী এত সুরক্ষামুলক ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও নদীর সুরক্ষা সুদূর পরাহত অবস্থাই রয়েছে।

এত কিছুর পরেও ২০১৯ সালে বাংলাদেশের নদীর এমনি করুণ দশা বিবেচনায় হাইকোর্ট তুরাগ নদী দখল এবং দূষণের এক মামলায় এক যুগান্তকারী রায়ে দেশের সকল নদীকে ‘জীবন্ত সত্ত্বা’ (লিগ্যাল পারসন বা ষরারহম বহঃরঃু) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ‘জীবন্ত সত্ত্বা’ হিসেবে মানুষ যেমন সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করে, আদালতের এই রায়ের ফলে নদীর ক্ষেত্রেও তেমন কিছু মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছিল, নদীগুলিকে যদি রক্ষা করা না যায় তাহলে মানব জাতি সংকটে পড়তে বাধ্য।

এমনি বাস্তবতায় খুলনা উপকূলীয় নদীগুলির রক্ষায় কি কি উদ্যোগ জরুরী বলে মনে করেন- এমনি এক প্রশ্নের উত্তরে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার ম্যানেজম্যান্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আনজুম তাসনুভা বলেন, প্রকৃতি বিরোধী কর্মকান্ড করে কখনো নদীকে বশে আনা যাবে না। প্রকৃতির প্রতিশোধ খুবই ভয়ঙ্কর। বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থা বিবেচনায় এক ধরণের সমঝোতা বা এডজাস্টম্যান্টের মধ্য দিয়ে আমাদের নদী ব্যবস্থাপনা করতে হবে। তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর সাথে বাংলাদেশের অপরাপর অঞ্চলের নদীগুলির বৈশিষ্টগত পার্থক্য বেশ প্রকট। এই কারণে অভিন্ন থিউরি দিয়ে এখানে কাজে আসবে না। এখানের নদীগুলিতে জোরালো জোয়ার-ভাটা প্রবাহিত হয়। এতে নদীর তলদেশে প্রচুর পলি জমা হয়। সে কারণে এখানকার ব্যবস্থাপনায় বিশেষ ‘মাত্রা’ রয়েছে। এই মাত্রার গুরুত্ব না বোঝার কারণে এ অঞ্চলে পানিজনিত দুর্যোগের প্রকোপ বাড়ছে। তিনি উল্লেখ করেন, ৬০-এর দশকে উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণে নেদারল্যান্ডের ‘ধার’ করা বিজ্ঞান পরবর্তীকালে আমাদের এখানে প্রকৃতি বিরুদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে অভিহিত হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘কাটপিস’ বিজ্ঞান এখানকার জন্য উপযোগী নয়। আমাদের দরকার প্রকৃতিকে রুষ্ট না করে প্রকৃতির সাথে বিজ্ঞানের সামঞ্জস্যপূর্ণ বা নেচার বেইজড বা প্রকৃতি নির্ভর টেকসই সমাধান খুঁজে বের করা। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতায় ‘পোল্ডার কনসেপ্ট’ আমাদের টেকসই নিরাপত্তার জন্য এখন আর যথেষ্ট নয়। এ জন্য আমাদের পর্যায়ক্রমে ‘টিআরএম’ বা টাইডাল রিভার ম্যানেজম্যান্টের দিকে ঝুঁকতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি নদী এবং বিদ্যমান উপকূলীয় বাঁধের মধ্যে আধা কিলোমিটার চওড়া ‘বাফার জোন’ নির্মাণের ধারণা পোষন করে বলেন, এই বাফার জোনে যদি ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানো যায় তাহলে এটি নদী শাসন প্রক্রিয়াকে অনেক সহজ করবে এবং বাঁধগুলিও টেকসই হবে। তিনি দীর্ঘমেয়াদে নদী ব্যবস্থাপনায় মনিটরিং এবং ইভ্যালুয়েশনের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, এতে নদীর বৈশিষ্টগত পরিবর্তন নির্ণয়সহ পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়ক হবে।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রামীণ ও নগর পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের অপর শিক্ষক অধ্যাপক ড. তুষার কান্তি রায় বলেন, সভ্যতার সুতিকাগার হলো নদী। আমাদের অনেক নদী থাকায় আমরা নদীর গুরুত্ব বুঝছি না। ইয়েমেন, আরব আমিরাত, বাহরাইন, কুয়েত, মালদ্বীপ, ওমান, কাতার, সৌদি আরবসহ বিশ্বের অনেক দেশে কোন নদীই নেই। সেক্ষেত্রে আমাদের অর্ধ সহস্রাধিক নদী রয়েছে। সুতরাং এত নদী থাকার পরও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং সুশাসনের অভাবে আমাদের দেশ নদী মাতৃকতার স্বাদ থেকে ক্রমেই বঞ্চিত হচ্ছে। তার দৃষ্টিতে নদী রক্ষায় সুশাসন এবং সমন্বয়ের অভাব প্রকট। পানিসম্পদ রক্ষায় এত আইন ও নীতি কোন কাজেই আসছে না। ছিটেফোটা যেটুকু বাস্তবায়ন হয় তা’ সমস্যার বিপরীতে অনেকটাই লোক দেখানো। খুলনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে অধ্যাপক তুষার আরও বলেন, রূপসা-ভৈরব-ময়ুর বেষ্টিত অতি চমৎকার নদীকেন্দ্রীক ভৌগলিক অবস্থা সত্ত্বেও এই নদীগুলির সংকটের শেষ নেই। ময়ুর তো এখন কার্যত মরা খাল এবং ময়লার ভাগার। রূপসা এখনো স্রোতশ্রীনি এবং প্রবল জোয়ার ভাটা প্রবাহিত নদী হলেও রূপসার এক কিলেমিটারের ব্যবধানে দুইটি বৃহৎ ব্রীজ ভবিষ্যতের জন্য খারাপ সংকেত দিচ্ছে। প্রচুর পলি বহনের ফলে ব্রীজ সন্নিহিত এলাকা ক্রমেই ভরাট হচ্ছে। এছাড়াও ভৈরবেও ব্রীজ হচ্ছে। সুতরাং একটি অভিন্ন স্রোত ধারায় নির্মিত এবং নির্মিতব্য মোট ৩টি ব্রীজ নদীর ভবিষ্যত স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু উপযোগী সে বিষয়টি মাথায় রেখে এখন থেকেই এই স্রোতধারাকে কার্যকর রাখার জন্য নিয়মিত ড্রেজিংসহ অন্যান্য বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যক্রম শুরু প্রয়োজন।

সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আনোয়াররুল কাদিরের মতে, নদী হলো সব জীবনের উৎস এবং অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উদ্ভিদ, প্রাণী, মানুষ, প্রকৃতি, বায়ুমন্ডল, অক্সিজেন এসব কিছুই থাকত না, যদি নদী না থাকতো। নদী হচ্ছে জীবনের প্রধান আধার। তিনি বলেন, নদীর দখল, দূষণ বন্ধসহ এর ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত উদ্যোগ জরুরী। আইনী কাঠামোর বাধ্যবাধকতা যেমন জরুরী তেমনি গবেষণাও গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, কুয়েট, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে গবেষণায় আরও বেশী সম্পৃক্ত করে বিশ্বের বৃহত্তম এই ব-দ্বীপের পানিসম্পদকে হাজার বছরের সভ্যতার ধারাবাহিকতায় চলমান রাখার স্বার্থে সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক তুহিন রায় অভিন্ন নদী ব্যবস্থাপনা প্রসংগে বলেন, অভিন্ন নদী এককভাবে কোন দেশের সম্পদ নয়। এ নদী যে সব দেশের উপর দিয়ে বয়ে যাবে নদী সেসব দেশের সম্পদ। সুতরাং এতে এক তরফা কোন হস্তক্ষেপ করা যায় না। আমাদের দেশের অভিন্ন যে নদীগুলি রয়েছে সেগুলির প্রবাহ উজানে বাধাগ্রস্ত বা প্রত্যাহার করা হচ্ছে যা চরমভাবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। ভাটির দেশ হিসেবে এক্ষেত্রে পানি কূটনীতি, ভূ-রাজনীতি, ভূ-স্ট্যাটেজিকে অগ্রাধিকার দিয়ে এগুতে হবে। উজানের দেশগুলির উচিত ভাটির দেশের জনগণের নদীকেন্দ্রিক সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং কৃষিভিত্তিক সমস্যাগুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে সমাধানে এগিয়ে আসা।

উল্লেখ্য, খুলনাঞ্চলের মরা নদী বা আধামরা নদীর তালিকাও বেশ দীর্ঘ। উল্লেখযোগ্য হলো: ভদ্রা, কপোতাক্ষ, আঠারোবাকি, বুড়ি ভদ্রা, কাজিবাছা, শোলমারি, ডাকাতিয়া, ময়ুর-এ নদীগুলি মরা খালে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও এক সময়ের গাঁ শিউরে ওঠা শিবসা এখন নাব্য সংকট ও ভরাট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সুন্দরবনের পশুর ও আড়পাঙ্গাসিয়া নদীও নাব্য সংকটের রয়েছে। সাতক্ষীরার মৃতপ্রায় নদী হলো: ইছামতি, কালিন্দি, কপোতাক্ষ, কাকশিয়ালী, সোনাই। এছাড়াও মালঞ্চ, মরিচ্চাপ, আদি যমুনা খোলপেটুয়া প্রাণহীন ও মৃতপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। বাগেরহাটের মৃতপ্রায় অবস্থায় রয়েছে, ভোলা, বেমরতা, ঘষিয়াখালী, দাউদখালী, মংলা, দোয়ানিয়া ইত্যাদি নদী। নদীর দেশে নদীর এই দুরাবস্থা সত্যিই খুবই বেদনার। পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, নদী রক্ষা কমিশনকে আরও শক্তিশালী করে নদীগুলি বাঁচাতে হবে।