দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের ‘আগাছা-পরগাছা’ আখ্যায়িত করে তাদের বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে দেশবাসীর প্রতিই আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে তিনি একথা বলেন।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভেনিউস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জাতির পিতা একটা কথা বলতেন, বাংলাদেশের মাটি এত উর্বর এখানে যেমন ফসলও হয় তেমনি সেখানে অনেক পরগাছা-আগাছাও জন্মে। এই আগাছা থাকবে এটা ঠিক। কিন্তু এই আগাছাকে কি করতে হবে সেটা বাঙালিদের নিজেদেরই ভাবতে হবে। কারণ, আমরা আমাদের স্বাধীনতার সুফল বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চাই। মানুষের জন্য উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে চাই… শিক্ষা-দীক্ষায়, সংস্কৃতি চর্চায় সবদিক থেকে এই বাঙালি নিজের মর্যাদা নিয়ে স্বমহিমায় সগৌরবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে-এটাই আমাদের কামনা। ভাষা শহিদ, স্বাধীনতার শহিদ এবং জাতির পিতার প্রতি এটাই আমাদের অঙ্গীকার।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদেরই কিছু রয়েছে, যাদের অর্জনটা মনপুতই হয় না। কারণ, পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ থাকতেই তারা পছন্দ করে। এই শ্রেণীটা কখনো আত্মমর্যাদা নিয়ে চলতে জানে না। তারা মর্যাদা বিকিয়ে দিয়েই আত্মতুষ্টি পায়। আর সেই শ্রেণীটা এখনও আমাদের সমাজে রয়ে গেছে।

তিনি বলেন, সেজন্য যতই আমরা উন্নতি করি, সারা বিশ্ব সেই উন্নয়ন দেখলেও দেশের কিছু মানুষ যেন অন্ধই তাকে তারা কোন উন্নয়ন দেখে না। আর এই অর্জনের কথা বলতে গেলেও তাদের দ্বিধা। এধরনের মানসিকতা কেন, নিজের কাছেই তা অবাক লাগে এবং প্রশ্ন আসে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই বিশ্ব দরবারে মর্যাদা পেয়েছে। আজকে স্বাধীন হয়েছি বলেই যারা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে সেই রক্তের মর্যাদা তারা পেয়েছেন। কেননা, আজকে ২১শে ফেব্রুয়ারি শুধু আমাদের নয় সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। কাজেই তাদের এই মহান আত্মত্যাগের জন্যই আমাদের এই মহৎ অর্জন সম্ভব হয়েছে। যেটা জাতির পিতা সবসময় বলতেন-‘মহান অর্জনের জন্য মহান আত্মত্যাগ দরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষা আন্দোলনকে জাতীয় আন্দোলনে পরিনত করতে শেখ মুজিব দেশব্যাপী সফর করেন এবং সভা-সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। পরিণতিতে বারংবার গ্রেফতার হলেও তিনি থেমে থাকেননি। জাতির পিতা ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর থেকে গ্রেফতার হন এবং ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি মুক্তি পান। ১৯ এপ্রিল আবার গ্রেফতার হয়ে জুলাই মাসে মুক্তি পান। এরপর তিনি ১৯৪৯ সালের ১৪ অক্টোবর গ্রেফতার হলে ১৯৫২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান। শেখ মুজিব ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী থেকেও ভাষাসৈনিক ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছিলেন এবং নানা পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাধীনতার আগে যেমন বার বার এসেছে ঠিক একই রকম ভাবে ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর আমাদের ভাষা-সহিত্যের ওপর আঘাত এসেছে। সেইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম যেমন ভাষা আন্দোলন থেকে তেমনি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রমের ইতিহাস থেকেও মুছে ফেলার চেষ্টা হল। জাতির পিতার যে ৭ মার্চের ভাষণ আজকে আড়াই হাজার বছরের মানুষকে উদ্বুদ্ধকারি শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে সেই ভাষণও এদেশে নিষিদ্ধ ছিল। তাহলে এরা কারা এরা এদেশে পাকিস্তানীদের প্রেতাত্মা ও খুনিরা।

জাতির পিতার খুনীদের পুরস্কৃত করার পরও সত্য আজ উদ্ভাসিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার সেই অমোঘ আহবান-‘বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবানা’র উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলেন, বাঙালিকে কেই দাবিয়ে রাখতে পারেনি, পারবেও না।

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একটা বিষয় সকলকে লক্ষ্য রাখতে হবে যখনই বাঙালি কিছু পায় বা মর্যাদা অর্জন করে বা এগিয়ে যেতে থাকে উন্নয়নের পথে তখনই কিন্তু চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তার সরকারের প্রস্তাব এবং প্রচেষ্টায় ইউনেস্কো আজকে ২১ ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি প্রদান করায় বিশ্বের অনেক দেশেই দিবসটি আজকে পালিত হচ্ছে।আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন সংগঠনের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, আব্দুর রহমান এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ. এইচ. এম. খায়রুজ্জামান লিটন, দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা, মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মান্নাফী।- বাসস