/ আজ বিজয়া দশমী, প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব

আজ বিজয়া দশমী, প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব

দিলীপ বর্মণ: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আজ (বৃহস্পতিবার) বিজয়া দশমীতে দেবী দুর্গা মর্ত্য ছেড়ে কৈলাশে (স্বামীগৃহে) ফিরে যাবেন। দেবীদুর্গার সঙ্গে ধনের দেবী লক্ষ্মী, জ্ঞানের দেবী সরস্বতী, গনেশ, অসুর, মহিষ, কার্তিক, সিংহের মৃন্ময়সহ তৈরী হয়েছে প্রতিমা।

মহানবমী পূজার দিনে গতকাল বুধবার খুলনা মহানগরী, জেলা ও উপজেলার মন্ডপগুলোতে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। ভক্তরা মন্ডপে অঞ্জলি ও ভোগ দিয়েছেন। নবমী পূজা ও সন্ধ্যা আরতি শেষে বিদায়ের সুর বাজতে শুরু করেছে। আজ বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীতে বিদায় নিবেন মা দুর্গা।
প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাঁচদিনের দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটবে। নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সন্ধ্যার আগেই প্রতিমা বিসর্জনের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।

হিন্দু সনাতন শাস্ত্রমতে, এই নবমী তিথিতে রাবণ বধের পর রাজা শ্রী রামচন্দ্র এই পূজা করেছিলেন। নীলকণ্ঠ ফুল ও যজ্ঞের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় নবমী বিহিত পূজা। নবমী পূজার মাধ্যমে মানবকুলে সম্পদ লাভ হয়। তাই শাপলা, শালুক ও বলিদানের মাধ্যমে দশভুজা দেবীর পূজা হয়েছে। নীল অপরাজিতা ফুল মহানবমী পূজার বিশেষ অনুষঙ্গ। নবমী পূজায় যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহুতি দেওয়া হয়। ১০৮টি বেল পাতা, আম কাঠ ও ঘি দিয়ে এই যজ্ঞ করা হয়।

হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা গত ২৮ সেপ্টেম্বর রোববার ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। টানা পাঁচদিনের আনন্দ উৎসবের পর ২ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীর দিন দেবী বিসর্জনের মাধ্যমে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। বুধবার মহানবমীর সন্ধ্যায় আরতি শেষে দেবীর বন্দনায় প্রতিটি পূজামন্ডপে বিষাদের সুর বাজতে শুরু করেছে।

দুর্গতিনাশিনী মহিষাসুর মর্দিনীর আরাধনা শেষ হলে কৈলাশে স্বামীগৃহে ফিরবেন মা দুর্গা। বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের আগে মহানগরীর বিভিন্ন মন্দির থেকে শোভাযাত্রা বের হবে, যা নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে জেলখানাঘাট গিয়ে শেষ হবে।
বছরান্তে দেবী দুর্গার আগমনে পাঁচদিন দেশের প্রতিটি মন্দিরে বিরাজ করছিল আনন্দ আর উদ্দীপনাময় এক পরিবেশ। মন্দিরে-মন্দিরে বেজে ওঠে ঢাক, ঢোল, কাঁসর, ঘণ্টা আর শঙ্খ ধ্বনিতে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে আবহমান বাংলা। উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে নৈসর্গিক নির্জনতা। মন্দিরে-মন্দিরে মন্ত্র উচ্চারণ আর প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বিশ্বের অশুভ শক্তিকে তাড়িয়ে শুভ কামনা করা হয়।

মহানবমীতে মহানগরীর বিভিন্ন মন্দিরে ভক্তের ঢল নামে। হাজার-হাজার ভক্ত মন্দিরে-মন্দিরে দেবী দর্শনে আসেন। বিশেষ করে খুলনা নগরীর বিভিন্ন গলিতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
নগরীর বেশ কয়েকটি মন্ডপ ঘুরে দেখা যায়, ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপন করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

মন্ডপগুলোতে সকাল থেকে মানুষের আনাগোনা দেখা যায়, যা বিকেলের দিকে ভিড়ে পরিণত হয়। বিশেষ করে বাবা-মায়ের সঙ্গে শিশুদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। তারা নতুন পোশাকে পরিবারের সঙ্গে এসেছে। বাসায় ফেরার সময় মন্ডপগুলোর বাইরে অস্থায়ীভাবে বসা দোকানপাট থেকে বাহারি সব খাবারসহ নানা ধরনের জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

প্রতিমা তৈরীতে সৌন্দর্য, চাকচিক্য ও ভিন্নতায় নগরীর হেলাতলা ও শিববাড়ি পূজা মন্দির ভক্তদের মন কেড়েছে। এ দুই জায়গায় সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে। তবে ধর্মসভা ও শীতলাবাড়ি মন্দিরেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। রূপসা মহাশ্মশান ও টুটুপাড়া গাছতলা মন্দিরসহ নগরীর সকল অস্থায়ীমন্ডপেই দর্শনাথীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। ভালবাসা আর সাম্যের বন্ধন নিয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে উৎসবে অংশ নেয়।

অপরদিকে মহানগরীর দৌলতপুরের পাবলা বণিকপাড়া কালীমন্দিরের মন্ডপ, গাছতলা মন্ডপ এবং মহেশ্বরপাশা কালীবাড়ি মন্দিরেও ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ব্যাপক ভিড় গতকাল লক্ষ্য করা যায়। শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা এক ভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়। মন্ডপ প্রাঙ্গণে তৈরি করা হয় বর্ণিল তোরণ। বিভিন্ন পূজামন্ডপে এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়।