আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগের নামে প্রতারণা
স্টাফ রিপোর্টার ঃ আউটসোর্সিং কর্মচারী হিসেবে চাকরী দেয়ার নামে টাকা আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার পর কন্ট্রাক্ট ক্লিনিং সার্ভিসেস লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: ফারুক হোসেন হেমায়েতের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়েছে। তবে পুলিশ এখনও তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি বলে কেএমপির খালিশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ জানিয়েছেন।
খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিমের আমলী আদালতে(খালিশপুর) দায়েরকৃত একটি মামলায় গত ২৭ মে ওই গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়। যার নম্বর খালিশপুর সিআর-৫৯/২১ এবং মামলা নম্বর ৩৫২/২১। খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার মহেশ^রীপুর এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা ও নগরীর খালিশপুর থানাধীন বড় বয়রা পালপাড়া রোডের বাসিন্দা বিভুতী ভুষণ বাইনের পুত্র সরোজিৎ বাইন এ মামলাটি দায়ের করেন। এর আগে খুলনা জজকোর্টের আইনজীবী এড. মো: জিল্লুর রহমন খান গত বছর(২০২০) ২৬ নভেম্বর ফারুক হোসেন হেমায়েতের বিরুদ্ধে একটি লিগ্যাল নোটিশ দেন। লিগ্যাল নোটিশ ও মামলার আরজিতে কন্ট্রাক্ট ক্লিনিং সার্ভিসেস লি: এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: ফারুক হোসেন হেমায়েতের বিরুদ্ধে বাদীর কাছ থেকে চাকরী দেয়ার নামে সাড়ে তিন লাখ টাকা গ্রহণ এবং নিয়োগপত্র দেয়ার পরও সংশ্লিষ্ট স্থানে যোগদান করতে গিয়ে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ আনা হয়।
মামলার আরজিতে বলা হয়, কন্ট্রাক্ট ক্লিনিং সার্ভিসেস লিমিটেড’র আওতায় পিয়ন পদে চাকরীর জন্য বিবাদীর নগরীর খালিশপুর থানাধীন বয়রা জংশনের ৪৮ নম্বর বাড়ির মোল্লা রহিম মঞ্জিলের অফিসে বাদী গেলে চাকরীর সিকিউরিটি হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হয়। বাদী সাড়ে তিন লাখ টাকা দিতে রাজী হলে বিবাদী তাকে চাকরী দিতে সম্মত হন। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ জুন বিবাদীর উক্ত ঠিকানায় বসে বাদী সাড়ে তিন লাখ টাকা প্রদান করেন। এসময় বিবাদীর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্যাডে এ ব্যাপারে একটি অঙ্গীকারনামাও প্রদান করেন। একইসাথে ওই বছরের ২ জুলাই কন্ট্রাক্ট ক্লিনিং সার্ভিসেস লি: এর প্যাডে বাদীকে পিয়ন পদে চাকরীর জন্য একটি নিয়োগপত্র দেয়া হয়। বাদী নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট অফিসে চাকরীতে যোগদান করতে গেলে সেখান থেকে বলা হয়, ওই পদে আগে থেকেই লোক আছে। এমনকি তার যোগদানপত্র গ্রহণ না করে তাকে ফেরত পাঠানো হয়।
উপায় না পেয়ে সরোজিৎ বাইন পরে ফারুক হোসেন হেমায়েতের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তাকে এই বলে আশ^স্ত করেন যে, ‘অসুবিধা নেই, কয়েক মাসের মধ্যেই তাকে নিয়োগ দেওয়া হবে’। এভাবে কয়েক মাস ঘুরানোর পরও তাকে কোন প্রকার চাকরী না দিয়ে ছলচাতুরি করা হয়। এক পর্যায়ে গত বছর ২৬ নভেম্বর আইনজীবীর মাধ্যমে ফারুক হোসেন হেমায়েতকে লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু ওই লিগ্যাল নোটিশের জবাব না দেয়ায় সর্বশেষ গত ৪ মার্চ তার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে টাকা গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করা হয় এবং বলা হয় ‘পারলে টাকা আদায় করে নিস’।
এরপর উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত আদালতে ৪০৬/৪২০ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দায়েরের পর আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করা হয়।
এ ব্যাপারে গতকাল কেএমপির খালিশপুর থানার অফিসার ইনচার্র্জ(ওসি) মো: কামাল হোসেন বলেন, আদালত থেকে গ্রেফতারী পরোয়ানা থানায় পৌঁছেছে। আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, কন্ট্রাক্ট ক্লিনিং সার্ভিসেস লিমিটেড নামের ওই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থায় আউটসোর্সিং হিসেবে কর্মচারী নিয়োগের নামে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ খুলনা জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং সিভিল সার্জনের আওতাধীন কয়েকটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে আগের ঠিকাদারের নিয়োগকৃত কর্মচারীরা বহাল থাকার পরও তদস্থলে আবারো লোক পদায়ন করা হয়। এ ক্ষেত্রে খুলনার সাবেক সিভিল সার্জনকে ম্যানেজ করে প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়াই এমনকি সিভিল সার্জনের স্ট্যান্ড রিলিজ থাকাবস্থায় টেন্ডার করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। যে বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে খুলনার বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের একজন সহকারী পরিচালকের নেতৃত্বে একটি টিম তদন্ত করছে বলেও জানা গেছে।
অপরদিকে, আগের ঠিকাদারের নিয়োগকৃত ২১১ জন কর্মচারীও বিগত এক বছর ধরে বেতন বঞ্চিত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অর্থাৎ একদিকে বর্তমান ঠিকাদারের নিয়োগকৃত ২১৪ জনেরও বেতন হয়নি আবার পূর্বে নিয়োগকৃত ২১১জনও একইভাবে বেতনবিহীন রয়েছেন।