বেসরকারীভাবে আমদানি শুরু করায় চালের বাজার কমতে শুরু করেছে। বিলম্বে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়ায় কৃষক পর্যাপ্ত মূল্য পাচ্ছেন। বর্তমানে ১০৫০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রিও হচ্ছে। কৃষক ইতোমধ্যে সিংহভাগ ধান বিক্রি করে ফেলেছে। পাশাপাশি কৃষকের কাছ থেকে পর্যাপ্ত মূল্য দিয়ে ধান কেনার প্রক্রিয়াও অব্যাহত রাখছে সরকার। এ ব্যাপারে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পায় সে কারণে বিলম্বে চাল আমদানি শুরু করেছি। এর আগে চাল আমদানির অনুমোদন দিলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হতো। তিনি বলেন, এরপরও যে সকল কৃষক ধান বিক্রি করতে চায় সরকার সে সকল কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনবে। আমাদের গুদাম তাতে কৃষকের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোন কারণ নেই। নতুন বছরের শুরুতে সরকার বেসরকারীভাবে চাল আমদানি শুরু করে। ৩ জানুয়ারি প্রথম এই অনুমোদন দেয় সরকার। ৭ জানুয়ারি ভারত থেকে আমদানির প্রথম চালান দেশে আসে। বেসরকারীভাবে চাল আমদানি শুরু হওয়ায় চালের পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। কৃষি বিপণন অধিদফতরের তথ্যমতে ১১ জানুয়ারি মোটা চালের পাইকারি দাম ছিল কেজি প্রতি ৪১ থেকে ৪২ টাকা। আর খুচরা বাজারে এই দাম ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা কেজি। বেশকিছু শর্তে বেসরকারী খাতে চার লাখ ৮৭ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সোমবার এক আদেশে ৭২টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এক লাখ ৪১ হাজার টন চাল আমদানির এই অনুমোদন দেয়া হয়। আগের দিন ৬৪টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এক লাখ ৭১ হাজার ৫০০ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে গত ৬ জানুয়ারি ৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। সব মিলিয়ে ৪ লাখ ৮৭ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হলো বেসরকারী খাতে। দেশে পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকায় বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে গতমাসে বেসরকারী খাতে আমদানির সুযোগ উন্মুক্ত করে সরকার। গত ২৭ ডিসেম্বর চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার ঘোষণা দেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। আগ্রহী আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১০ জানুয়ারির মধ্যেই মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র জমা দিয়ে অনুমোদন নেয়ার নির্দেশ দেন খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম। এর বাইরে সরকারী পর্যায়ে রেশনিং, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী ও অন্যান্য প্রয়োজনে আমদানি করা হচ্ছে চার লাখ টন চাল। বেসরকারী আমদানিকারকদের ক্ষেত্রে শর্ত দেয়া হয়েছে, বরাদ্দপত্র ইস্যু করার সাতদিনের মধ্যে এলসি খুলতে হবে। এ সংক্রান্ত তথ্য (পোর্ট অব এন্টিসহ) খাদ্য মন্ত্রণালয়কে তাৎক্ষণিকভাবে ই-মেইলে জানাতে হবে। সর্বোচ্চ ৫ হাজার টন আমদানির বরাদ্দ পাওয়া ব্যবসায়ীদের এলসি খোলার ১০ দিনের মধ্যে ৫০ শতাংশ এবং ২০ দিনের মধ্যে সব চাল বাজারজাত করতে হবে। ১০ হাজার টন বরাদ্দপ্রাপ্তরা এলসি খোলার ১৫ দিনের মধ্যে ৫০ শতাংশ এবং ৩০ দিনের মধ্যে সব চাল বাজারজাত করবে। বরাদ্দের অতিরিক্ত আইপি বা ইমপোর্ট পারমিট জারি করা যাবে না। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সরকারী গুদামগুলোতে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৭ দশমিক ২০ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। এরমধ্যে চাল ৫ দশমিক ৩১ লাখ টন এবং গম ১ দশমিক ৮৯ লাখ টন। চালের মজুদের এই পরিমাণ গতবছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। চলতি অর্থবছরে আমন সংগ্রহে ২ লাখ ৭ হাজার ৭৩০ মেট্রিক টন ধান, ৬ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ও ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমন সংগ্রহের মেয়াদ আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারিত আছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে বাজেটে অভ্যন্তরীণভাবে দেড় লাখ মেট্রিক টন গমের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন। এরপর ২০০১ সালে যখন ক্ষমতা ছাড়ে তখন দেশে প্রায় ১৩ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উদ্ধৃত রেখে যায়। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে পুনরায় যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে তখন আবার দেশে খাদ্য ঘাটতি নিয়ে সরকার যাত্রা শুরু করে। বিগত অর্থবছরের মাঝামাঝি থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের দুইশতাধিক দেশে বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ায় সরকার ২৬ মার্চ ২০২০ থেকে সাধারণ ছুটি (লকডাউন) ঘোষণা করে। এতে স্বল্প আয়ের মানুষ যেমন দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, রিক্সা-ভ্যানচালক, হকার, শ্রমিক ইত্যাদি কর্মহীন হয়ে পড়ে। এ ধরনের মানুষদের খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য পর্যায়ক্রমে ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন জেলা সদর এবং অন্যান্য ক, খ ও গ শ্রেণীর পৌরসভাসমূহে ৫ এপ্রিল ২০২০ থেকে বিশেষ ওএমএস চালু করা হয়। প্রত্যেক এলাকার নির্দিষ্ট ওএমএস কমিটির দ্বারা তালিকাভুক্ত ডিলারের মাধ্যমে পরিবার প্রতি মাসিক ২০ কেজি করে প্রতিকেজি ১০টাকা দরে চাল বিতরণ করা হয়। আমরা মনে করি, চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার যথার্থ কাজ করেছেন। আমদানিকৃত চাল আসতে শুরু করায় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এটা আশাব্যঞ্জক। তবে বাজার মনিটরিং ও ব্যবস্থাপনা জোর দিতে হবে।