বিএনপির মহাসমাবেশে শাহজাহান ওমর

স্টাফ রিপোটার ঃ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বীর উত্তম বলেছেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেছিলো প্রশাসনিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। ২০০৮ সালে মঈন-ফখরুল ক্ষমতায় এনেছিল। আর ২০১৪ সালে ভোট লাগেনি। ২০১৮ সালে আমার মতো লোককে ৭ দিন ঘর থেকে বের হতে দেয়নি।
তিনি গতকাল শনিবার বিকালে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। নির্ধারিত স্থানে সমাবেশের অনুমতি না পেয়ে নগরীর কে ডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে সমাবেশ করে বিএনপি। এ সময় পুরো এলাকা ছিলো পুলিশ বেষ্টিত।
বিএনপি নেতারা জানান, কেন্দ্র ঘোষিত এই কর্মসূচি পালনে ৫ দিন আগেই অনুমতি চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। গতকাল সকাল থেকে দলীয় কার্যালয় ঘিরে রাখে পুলিশ। জলকামান, সাজোয়া যান নিয়ে বিএনপি কার্যালয়ে যাওয়ার সবগুলো সড়ক সকাল থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। নগরীতে সিএনজি, মাহিন্দ্র ও বাস চলাচল বন্ধ ছিলো। নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে ছিলো পুলিশের সতর্ক অবস্থান। এর মাঝেও বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন।
সমাবেশের প্রধান অতিথি শাজাহান ওমর আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সেই দল, যদি কোনো রাজাকার আওয়ামী লীগ করে তবে সে বিরাট মুক্তিযোদ্ধা। আর জিয়াউর রহমান, আমার মতো মুক্তিযোদ্ধারা এখন তাদের কাছে বিরাট রাজাকার। আমরা যদি কথা না বলি, চুপ থাকি, প্রতিবাদ না করি তাহলে আমাদের দেশ জাতি ঘোর বিপদের মধ্যে পড়বে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মানে ইয়াবা, ব্যাংক চুরি ও ক্যাসিনোর দল। এজন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে লাভ নেই। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়কের দাবি এই সরকার শুনবে না। তাই আমাদের দাবি আমাদের আদায় করতে হবে। আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদের দাবি আদায় করতে হবে।
বীর বিক্রম খেতাম পাওয়া এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, আওয়ামী লীগ শরণার্থীর দল। তারা ভারতে গিয়ে শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করেছিল। অন্যদিকে, জিয়াউর রহমান শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক নয়, রণাঙ্গণেও যুদ্ধ করেছেন। বীর উত্তম খেতাব জিয়াউর রহমানের অর্জন। এ খেতাব কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। তিনি খুলনা অঞ্চলে বিভিন্ন যুদ্ধের অংশগ্রহণের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমরাও যুদ্ধ করে খেতাব অর্জন করেছি।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি খুলনা সিটি করপোরেশনের দলীয় মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
সমাবেশে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী এখন জেলে। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটি কালো আইন। এই আইনের ভয়ে মানুষ বাক স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বলেন, দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। মার্কা ব্যবহার করে ব্যাংক, কোটি কোটি টাকা লুট করা হচ্ছে। এসব আর মেনে নেওয়া যায় না।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্রসহ সব অধিকার হরণ করেছে সরকার। পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশে আজ জনগণ ভোট দিতে পারে না।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, এখন কথা বলা যাবে না, লেখা যাবে না, এ কেমন স্বাধীনতা পেলাম। তারা সমাবেশের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে দিতে চায় না।
সমাবেশে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচার হচ্ছে, ব্যাংক লুট হয়ে যাচ্ছে অথচ এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যাচ্ছে না। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশন সর্বত্র জনগণের বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এখন নৌকা মার্কা হলেই বিজয় নিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও যুবদলের সাবেক সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। ১২/১৩ বছর ধরে নিজেদের লোকদের চাকরি দিচ্ছেন। ভিন্নমতের লাখ লাখ যুবক পথে পথে ঘুরছে, তাদের চাকরি হয় না।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ও মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, জিয়াউর রহমানের খেতাবে হাত দিলে দেশের ১৬ কোটি মানুষ বরদাস্ত করবে না।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, পুলিশ বাহিনীসহ দেশের প্রশাসনকে আজ জনগণের বিপক্ষে দাঁড় করানো হচ্ছে। আজকের সমাবেশ দেখে মনে হচ্ছে আমরা জেলখানার ভেতরে।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও এড. নিতাই রায় চোধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মসিউর রহমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও এড. মজিবর রহমান সরোয়ার, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইসরাক হোসেন, ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, চট্টগ্রামের মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন, রাজশাহীর মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।
নগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি ও জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আমিরুজ্জামান খান শিমুল, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, অনিদ্য ইসলাম অমিত, অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, আজিজুল বারী হেলাল, সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, আনোয়ার হোসেন, গালিব ইমতিয়াজ নাহিদ, তাজকিন আহমেদ চিশতী, আব্দুল আলিম, ওয়াহিদুজ্জামান বুলা, মো. আমজাদ হোসেন, বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, আলী আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. মশিউর রহমান, এড. সৈয়দ সাবিরুল হক সাবু, মুন্সি সাহারুজ্জামান মোর্তুজা, এড. এস এম শফিকুল আলম মনা, মনিরুল হাসান বাপ্পী, শেখ আবু হোসেন বাবু, শেখ আব্দুর রশিদ, মনিরুজ্জামান মন্টু, অধ্যক্ষ মো. তারিকুল ইসলাম, সেকেন্দার জাফরউল্লাহ খান সাচ্চু, শেখ মুশার্রফ হোসেন, মীর কায়সেদ আলী, ডা. গাজী আব্দুল হক, খায়রুল ইসলাম খান জনি, এস এম আসাদুজ্জামান মুরাদ, মোল্লা মোশারফ হোসেন মফিজ, সিরাজুল হক নান্নু, অধ্যাপক আরিফুজ্জামান অপু, এড. ফজলে হালিম লিটন। পবিত্র কোরআন তেলওয়াত করেন খুলনা মহানগর ওলামা দল সদস্য মাওলানা আব্দুল মান্নান।
মহাসমাবেশের পথে নেতাকর্মীদের বাধার অভিযোগ বিএনপির : নেতাকর্মীদের মহাসমাবেশ স্থলে পৌঁছাতে পথে পথে বাধা দেবার অভিযোগ করেছে বিএনপি। পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও নেতাকর্মী-সমর্থকরা অংশ নিতে পারেনি তাদের মহাসমাবেশে। সমাবেশে বক্তৃতায় সব বক্তায় এ অভিযোগ করেন। সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর পূর্বে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে-যাতে সমাবেশে অংশগ্রহণ না করে। রূপসা, দিঘলিয়া, তেরখাদা, ডুমুরিয়া, ফুলতলা, বটিয়াঘাটা, কয়রা ও দাকোপ উপজেলার বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সমাবেশে রওনা দিয়েও ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীরা লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা মনা।
সমাবেশস্থলে পুলিশ ছিল বেশি : সমাবেশের অনুমতি না মেলায় দলের কেডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সমাবেশ করে বিএনপি। সমাবেশে প্রবেশের দুদিকেই ছিল বিপুলসংখ্যক পুলিশের বেষ্টনী। পুলিশের কড়া এই বেষ্টনী ভেদ করে কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। এমনকি সাংবাদিকদের ঢুকতেও বাধা দেয়া হয়। সমাবেশ চলাকালে পুলিশ জোরে জোরে হুইসেল বাজিয়ে সমাবেশে আসা উৎসুক মানুষদের চলে যেতে বাধ্য করে।
বাস, ট্রলার চলাচল ছিল বন্ধ : গতকাল শনিবার বিএনপির সমাবেশের কারণে খুলনায় বাস ও ট্রলার চলাচল করেনি। এমনি শহরের অভ্যন্তরে চলাচলকারী ইজিবাইক, মাহিন্দ্র, রিকশা চলাচল করে খুবই কম। এতে সাধারণ মানুষ পড়ে চরম বিপাকে। আকবার আলী নামে একজন ট্রলার চালক অভিযোগ করেন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ট্রলারে করে কয়েকজন যাত্রী নিয়ে জেলখানা ঘাটে ভিড়লে পুলিশ তাকে মারপিট করে। এমনকি পুলিশ তার ট্রলারের হ্যান্ডেলটিও কেড়ে নেয়।