বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের খুলনা মহানগরীর প্রধান উপদেষ্টা ও মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেছেন, শ্রমিকরা যেখানে নির্যাতিত হচ্ছে, নিপীড়িত হচ্ছে, সেই নির্যাতিত শ্রমিকদের দাবি দাওয়া যাতে মেনে নেয়া হয়। আল্লাহর রাসুল (সা.) যেভাবে শ্রমনীতি সাজিয়েছেন ঠিক সেভাবে যদি আমরা শ্রমনীতি সাজাতে পারি তাহলে শ্রমিকদের আর কোনো সমস্যা থাকবে না। বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সেই কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে শ্রমিকের অধিকার ফিরিয়ে দিবো ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, আমি বিশ^াস করি শ্রমিকরা রক্ত পানি করে গায়ের ঘাম ফেলে যে টাকা আয় করে তা হালাল। তাদের গায়ের ঘাম আমার কাছে আতরের মতো। আমি যখন শ্রমিকের সংস্পর্শে যাই তখন অনেকে হাত মিলাতে চায় না আমি তাদের বুকে নিয়ে নিই। আসো ভাই আমি তোমাকে একটু বুকে নিয়ে নিই। কারণ আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন শ্রমিকরা ৫০০ বছর আগে জান্নাতে চলে যাবে। তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের দুর্দশার প্রধান কারণ এই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা। যতদিন এই শোষণমূলক ব্যবস্থা বহাল আছে, ততদিন শ্রমিকশ্রেণীকে বাঁচার জন্য লড়তে হবে। তিনি কাজের নিশ্চয়তা, ন্যায্য মজুরি, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইনের লড়াইকে মালিকী ব্যবস্থা উচ্ছেদের লড়াইয়ে পরিণত করতে হবে।
গতকাল শনিবার বিকেলে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের খুলনা মহানগরীর খালিশপুর অঞ্চলের উদ্যোগে খালিশপুর বিআইডিসি সড়কে অবস্থিত মহানগরী কার্যালয়ে রেজিস্ট্রার্ড ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
মহানগরী সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুজ্জামানের পরিচালনায় প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মাস্টার শফিকুল আলম, বিশেষ অতিথি ছিলেন অঞ্চল সহকারী পরিচালক খান গোলাম রসুল, টিম সাদস্য আজিজুর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে খুলনা মহানগরী সহ-সভাপতি এস এম মাহফুজুর রহমান, কাজী মাহফুজুর রহমান, সহ-সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, বুলবুল কবির, খান আব্দুল ওয়াহেদ, দপ্তর সম্পাদক আল হাফিজ সোহাগ, রেজিস্ট্রার্ড ট্রেড ইউনিয়ন নেতা শহিদুল ইসলাম, নাসির উদ্দিন, আনিসুর রহমান, নাসরুল্লাহ, মুহিব্বুর রসুল, সামিনুর রহমান, বদরুল রশিদ মিন্টু, আব্দুল বারী, বাকী বিল্লাহ, মুজাহিদুল ইসলাম বিপ্লব, আসাদুল্লাহিল গালিব, মাসুদুর রহমান, মনিরুল ইসলাম , এমদাদ, হেলাল, কামরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান আরও বলেন, শ্রমিক এবং কর্মজীবী মানুষ নানাভাবে নির্যাতিত এবং তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। মিল, ফ্যাক্টরি ও ইন্ডাষ্ট্রিতে শ্রমিকদের উপযুক্ত মূল্যায়ন করা হয় না। তাদের শ্রমের মর্যাদা দেয়া হয় না। এখনো বহু কলকারখানার কর্মপরিবেশ ঠিক করা যায়নি। সত্যিকারার্থে আমরা যদি টেকসই বাংলাদেশ গড়তে চাই, একটি শান্তির বাংলাদেশ গড়তে চাই-তাহলে সমাজের প্রত্যেকে পরস্পর সম্মান এবং ভালোবাসা দিয়ে এ সমাজকে গড়ে তুলতে হবে। যেদিন মালিকরা শ্রমিকদের মন থেকে ভালোবাসবে এবং সম্মান দিবে সেদিন শ্রমিকরা মালিকের ষোলআনা পূরণ করবে। আর শ্রমিক যতদিন পর্যন্ত অনুভব করবে আমার মালিক তো আমাকে মানুষই মনে করে না। ততদিন পর্যন্ত মালিকের আয় উন্নতি বাধাগ্রস্ত হবে। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মূল কাজ হচ্ছে মালিক এবং শ্রমিকের সমন্বয়ে, একটি পারস্পরিক ভালোবাসা এবং সম্মানের সমাজ গড়ে তোলা। আমরা সেই সমাজটাকেই দেখতে চাই।
মাস্টার শফিকুল আলম বলেন, শ্রমিকদের সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার দেয়া হয় না। যদি এটা হতো তাহলে বাংলাদেশে একটা আদর্শ রাষ্ট্র বাস্তবায়ন হতো। বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন এদেশে ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন করতে চায়। মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে আল্লাহর আইন মেনে চলা। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন তোমরা নামাজ শেষ করে জমিনে ছড়িয়ে পড়ো। অর্থাৎ কাজে নেমে পড়ো। আগামী দিনে নামাজ কায়েমের মাধ্যমে মানুষের চরিত্র ভালো করব এবং আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিজেদের ভালো রাখব এবং এ দেশের মানুষকে ভালো রাখার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে আজিজুল ইসলাম ফারাজী বলেন, শ্রমিক আন্দোলনে নতুন ধারা সৃষ্টিকারী শ্রমিক সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে বলেছিল-সত্য মিথ্যার দ্ব›দ্বই প্রথিবীর ইতিহাস। মালিক-শ্রমিকের দ্ব›দ্ব নয় সৎ মালিক ও সৎ শ্রমিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কলকারখানার উৎপাদনের চাকা সচল রেখে একদিকে শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা অপরদিকে অর্থনীতির চাকাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নতুন ধারা সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন