আগামী দেড় বছরের মধ্যে চালু হচ্ছে চার মেগা প্রকল্প। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে-পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ও কর্ণফুলী টানেল। এর মধ্যে দুটি ঢাকায়, একটি চট্টগ্রামে। দেশের যোগাযোগ খাতের সবচেয়ে বৃহৎ এই প্রকল্পগুলো সরকারের পক্ষ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নিয়ে শেষ করার চেষ্টা চলছে। করোনা, আর্থিক সঙ্কট, নক্সায় ত্রুটিসহ নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে কোনটিই আসলে নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরাসহ অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এসব প্রকল্প চালু হলে বদলে যাবে দেশের অর্থনীতির চিত্র। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় পা রাখবে দেশের মানুষ। আন্তর্জাতিক সড়ক ও রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। বাড়বে কর্মসংস্থান। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিকাশ ঘটবে দেশের পর্যটন শিল্পেরও। সব মিলিয়ে সামনে অপেক্ষা করছে বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশ। এদিকে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করার তাগিদ দিয়ে বলেছেন, এসব প্রকল্প যত দ্রুত সম্ভব শেষ করা যাবে দেশ তত বেশি এগিয়ে যাবে। বুয়েটের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, সবচেয়ে বেশি আশাজাগানিয়া এই চারটি প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ভবিষ্যত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজগুলো আরও এগিয়ে যাবে। উন্নয়নের গতি আরও বাড়বে। এমনিতেই সব প্রকল্প বিলম্বে শেষ হচ্ছে। তাই দ্রুত সময়ে কাজ শেষ করার তাগিদ দেন তিনি। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুসহ চারটি বড় যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণ শেষে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্প্রতি সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, সরকারের যে দায়িত্বটি আমি পালন করছি সেখানে চারটি মেগা প্রজেক্ট আছে, সেগুলো দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও কর্ণফুলী টানেলের কাজ এগিয়ে চলছে, গতি পেয়েছে। সব আগামী ২০২২ সালে উদ্বোধন করতে পারব। ২০২২ সালের জুনের মধ্যেই আমরা এই প্রকল্পগুলো চালু করব। চার প্রকল্পের মধ্যে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মেট্রোরেল চালুর যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তা’ যথাসময়ে অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, গত বছরের মার্চে বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর ধীরে ধীরে অবরুদ্ধ পরিস্থিতিতে চলে যায় পুরো দেশ। এ অবস্থায় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজগুলোও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। প্রকল্পের কাজ শেষ করা নিয়ে অনিশ্চয়তাও তৈরি হয়। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর অক্টোবর থেকে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রকল্পগুলোতে আবার পুরোদমে কাজ শুরু হয়। দিন দিন আশাজাগিয়ে তুলছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্প। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর কথা থাকলেও করোনার আঘাতসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় তা হচ্ছে না। আগামী বছরের জুনে পুরো প্রকল্প চালুর কথা জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ইতোমধ্যে প্রকল্পের অগ্রগতি হিসেবে দেশের প্রথম মেট্রেরেলে ৪৮ টাকা ২৫ পয়সা ভাড়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ৪০ পয়সা ধরে এই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। ভাড়ার এই হার প্রস্তাব করেছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। গত রবিবার মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণী বৈঠকে এ প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এ বিষয়ে ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান বলেন, ভাড়া নির্ধারণ নিয়ে ডিটিসিএ ভবনে সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। মেট্রেরেলটি (এমআরটি লাইন-৬) ৪০ মিনিটেরও কম সময়ে উত্তরা-মতিঝিল ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দূরত্বের পুরো রুট ভ্রমণ করতে পারবে। এ রুটে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন।
মেট্রোরেল নির্মাণে সরকারী অর্থ ও বৈদেশিক ঋণের মাসিক এবং দৈনিক খরচ, পরিচালন ব্যয়, কর্মীদের বেতন, বিদ্যুত বিলসহ বিভিন্ন খাত পর্যালোচনা করা হয়েছে। মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালন ব্যয় যোগ করলে প্রতি মাসে খরচ পড়বে ৬৯ কোটি ৯১ লাখ ৭২ হাজার ২২৯ টাকা। দৈনিক হিসাবে এ খরচের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কোটি ৩৩ লাখ ৫ হাজার ৭৪১ টাকা। দিনে ৪ লাখ ৮৩ হাজার যাত্রী পরিবহন করবে মেট্রোরেল। দৈনিক ব্যয় ও যাত্রী পরিবহন হিসাব করেই প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ধরা হয়েছে ২ টাকা ৪০ পয়সা। এই হিসাবে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাত্রীপ্রতি ৪৮ টাকা ২৫ পয়সা আদায় করা হবে। আর মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত রুট বর্ধিত হলে সেখানকার ভাড়ার পরিমাণ পরে যোগ হবে। এ অংশের কাজ নতুন করে করছে এমআরটি লাইন-৬ কর্তৃপক্ষ। মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা সরকারের তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে মেট্রোরেল চালু হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আমরা মনে করি, বর্তমান সরকারের চার মেগা প্রকল্প আগামী বছর চালু হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এই চার প্রকল্প চালু হলে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন হবে বলে আশা করা যায়। আমরাও এ চার প্রকল্পের উদ্বোধনের অধীর অপেক্ষায়।