করোনার প্রকোপ
কমছে খুলনায়

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ করোনা রোগীর চাপ বাড়ছে বলে সাময়িক সময়ের জন্য আড়াইশ’ শয্যার খুলনা জেনারেল হাসপাতালটি গুটিয়ে মাত্র ৮০টি শয্যা নিয়ে গত ২০ জুন যাত্রা হয়েছিল খুলনার আরও একটি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের। বলা হয়েছিল রোগীর চাপ কিছুটা কমলে বিশেষ করে জেনারেল হাসপাতালের রোগীর সংখ্যা ২০ জনে নেমে আসলেই আবারো ফিরে যাবে সাবেক জায়গায়। অর্থাৎ করোনা ইউনিট বন্ধ করে দিয়ে আবারো সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করা হবে। এখন সেটি সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। কেননা, বিগত পৌনে দু’মাসের ব্যবধানে করোনা রোগীর সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। বিশেষ করে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এ হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ২০ জন। আর খুলনার সরকারি-বেসরকারি পাঁচটি হাসপাতালের মোট রোগীর সংখ্যা ছিল ২৪৭জন। যেখানে মোট শয্যা রয়েছে ৫৬৫টি। অর্থাৎ সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে এখনও ৩১৮টি শয্যা খালি থাকছে। যেটি একটি আশার কথা উল্লেখ করে চিকিৎসার সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে হয়তো জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিট বন্ধ করে দিয়ে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার প্রতি মনোনিবেশ করা যাবে।
কিন্তু গত দু’দিনের জনসাধারণের অবাধ চলাফেরা এবং স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষার কথা তুলে ধরে চিকিৎসকরা বলছেন, এটি আবারো করোনা পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে এমন আশংকাও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আরও অন্তত: দু’সপ্তাহ অপেক্ষা করে দেখতে হবে কি হয়। যদি রোগীর সংখ্যা ২০ জনের নিচে থাকে তাহলে হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালের দেয়া দৈনন্দিন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত সেখানে মোট রোগী ছিলেন ২০জন। আগের দিন সকালে ওই সংখ্যা ছিল ২২জন আর ১০ আগষ্ট ছিল ২৫জন। অর্থাৎ গত পয়লা আগষ্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত চিত্রে দেখা যায়, রোগীর সংখ্যা ৪৫জন থেকে কমতে শুরু করে। মাসের প্রথম সপ্তাহে এ সংখ্যা ৩০ থেকে ৪৫জনের মধ্যে ছিল আর পরে তা আরও কমে ২০ থেকে ৩০ জনের মধ্যে থাকে। সর্বশেষ গতকালই এ মাসের ১২ দিনের মধ্যে সবচেয়ে কম রোগী ভর্তি ছিল।
অবশ্য, জেনারেল হাসপাতালের দু’টি ভবনে আড়াইশ’ শয্যা নিয়ে বিভিন্ন বিভাগ পরিচালিত হচ্ছিল। বর্তমানে একটি ভবনকে করোনার ৮০টি বেডে রোগী রেখে চিকিৎসা দেয়া হলেও অন্য ভবনটি থাকছে একেবারেই অকেজো। শুধুমাত্র ভ্যাকসিন দেয়া আর করোনার নমুনা সংগ্রহ ছাড়া উল্লেখযোগ্য আর কোন কাজ নেই সেখানে। তার পরেও নার্সদের রোষ্টার করে ডিউটি করতে হচ্ছে। যেটি অনেকের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বহন করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর চিকিৎসকদের দিয়ে করানো অন্য কাজ। যেটি তাদের পেশার পরিপন্থী।
‘রোগীর সংখ্যা ২০ জনে নেমে আসলেই জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিট গুটিয়ে ফেলা হবে’ শুরুতে এমন মন্তব্য করেছিলেন খুলনার সিভিল সার্জন ও জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ। তিনি বলেন, আরও কিছুদিন দেখার পর এমন প্রস্তাব দেয়া হবে করোনা বিষয়ক জেলা কমিটির কাছে।
তবে বিধি-নিষেধ প্রত্যাহারের পর গত দু’দিনে রাস্তায় সাধারণ মানুষের যে ভিড় দেখা গেছে তাতে আরও করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আশংকা করেছেন জেনারেল হাসপাতালের করোনা বিষয়ক কমিটির মুখপাত্র ডা: কাজী আবু রাশেদ। তিনি বলেন, রোগীর সংখ্যা বর্তমানে কিছুটা কম ঠিকই কিন্তু গতকালও যে হারে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে মাস্কবিহীন অবস্থায় রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছেন তাতে এখনই করোনা ইউনিট গুটিয়ে নেয়ার সুযোগ নেই। তবে তারা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনাও করেছিলেন যাতে জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিট গুটিয়ে সাধারণ রোগীদের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়। কিন্তু এখন চলমান পরিস্থিতির কারণে আরও অন্তত: দু’সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। দু’সপ্তাহ পরও যদি রোগীর সংখ্যা এমন কম থাকে সে ক্ষেত্রে বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে।
এদিকে, খুলনার পাঁচটি হাসপাতালেও করোনার রেগাীর সংখ্যা এখন অনেকটা কম। গতকাল সকালে দেয়া অন্য চারটি হাসপাতালেও অনেক শয্যা ফাঁকা ছিল।
গতকাল সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২০০ বেডের স্থলে রোগী ছিলেন ১১৯জন। তবে ২০টি আইসিইউ বেডই পরিপূর্ণ ছিল বলে জানিয়েছেন সেখানকার মুখপাত্র ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার।
শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের করোনা ইউনিটেও ৪৫টি বেডের স্থলে গতকাল সকালে রোগী ছিলেন ৩১জন। এছাড়া সেখানের ১০টি আইসিইউ বেডেও আটজন রোগী ছিলেন বলে জানান সেখানকার করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা: প্রকাশ চন্দ্র দেবনাথ।
সরকারি তিনটি হাসপাতালের ন্যায় বেসরকারি দু’টি হাসপাতালের করোনা ইউনিটেও গতকাল সকালে রোগীর সংখ্যা ছিল অনেক কম। গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে দেড়শ’ বেড থাকলেও গতকাল সকালে রোগী ছিলেন ৩১জন। আর সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৯০ বেডের বিপরীতে রোগী ছিলেন, ৪৬জন। সব মিলিয়ে খুলনায় এখন করোনা নি¤œমুখী বলেই চিত্রে দেখা যায়।
অপরদিকে, করোনার নি¤œমুখীতে এখনই খুশি হওয়ার কিছু নেই বলে জানালেন চিকিৎসকরা। তাদের মতে, হয়তো বিগত লম্বা সময়ের লকডাউন বা বিধি-নিষেধের ফলেই এমনটি সম্ভব হয়েছে। এজন্য লকডাউন তুলে দেয়া হলেও জনসাধারণকে আরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তবেই এর সুফল ধরে রাখা সম্ভব। এমনটি জানিয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন-বিএমএ’ খুলনার সাধারণ সম্পাদক ও খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ বলেন, করোনা থেকে রক্ষায় স্বাস্থবিধি মেনে চলার কোন বিকল্প নেই। এজন্য জনগনকে আরও সচেতন হতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো: রবিউল হাসান বলেন, মানুষ যতই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করতে পারবে ততোই মঙ্গল। আর এর ফলেই রোগীর সংখ্যা দিন দিন কমবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সেই সাথে সকলকে টিকার আওতায় আসার চেষ্টা করতে হবে বলেও তিনি জানান।