সবার আগে ভোক্তা স্বার্থ নিশ্চিত করতে ই-কমার্স ব্যবসা আইনী কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার লক্ষ্যে ডিজিটাল কমার্স ব্যবসা পরিচালনা সংμান্ত নির্দেশনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। চলতি মাসের শেষ নাগাদ এই নির্দেশনা জারি করা হবে। এই নির্দেশনার মধ্যে থেকেই চালাতে হবে ই-কমার্স। সম্প্রতি ই-ভ্যালির কার্যμম নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে
চিন্তাভাবনা শুরু করে সরকার। ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় নতুন নীতিমালাসহ নির্দেশনা তৈরি করার কাজে হাত দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আপাতত নির্দেশনা জারি হলেও খুব তাড়াতাড়ি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। ডিজিটাল ব্যবসাকে পলিসি সাপোর্ট দিতে গঠন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত এই সেল ডিজিটাল কমার্স ব্যবসা পরিচালনা সংμান্ত
নির্দেশনাটি চূড়ান্ত করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নেয়ার পর সাত থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সুনির্দিষ্ট পণ্য ডেলিভারি দিতে হবে। নতুন এই নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, যেসব কোম্পানির পণ্য বিμি করা হবে সেই প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব থাকবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর। বিμীত পণ্যের গুণগত মান নিয়ে কোন অভিযোগ উঠলে তা’ ই-কমার্স
প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহি করতে হবে। পণ্য ডেলিভারি দিতে ব্যর্থ হলে গ্রাহকের টাকা মানি ওয়ালেটে রাখার সুযোগ থাকছে না। এমনকি সুনির্দিষ্ট পণ্য ব্যতীত অন্য
পণ্য গছিয়ে বিμি করার সুযোগ রাখা হয়নি। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম কোম্পানির আদলে গ্রাহকের কাছ থেকে লোভনীয় শর্তে অর্থ গ্রহণ
করার সুযোগ নেই। পণ্যবিμি আকর্ষণে লটারি করার সুযোগ রাখা হয়নি। ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান বলেন, ডিজিটাল
কমার্স ব্যবসায়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে পরিচালনা সংμান্ত নির্দেশনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। চলতি মাসের শেষ নাগাদ নির্দেশনাটি প্রকাশ করার উদ্যোগ রয়েছে
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। নতুন নির্দেশনা প্রকাশ হওয়ার পর এই নির্দেশনা অনুসরণ করে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাণিজ্যিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হবে।
ভোক্তা স্বার্থে নির্দেশনার বাইরে কারও ব্যবসা করার কোন ধরনের সুযোগ থাকছে না। ডিজিটাল ব্যবসা দ্রুত দেশে সম্প্রসারণ হ”েছ। অনেকে ফেসবুকের মাধ্যমে
ব্যবসা করছেন। এখন সবাই এর সুযোগ নি”েছন। আইনী কাঠামোর বাইরে যে কোন ব্যবসা বা বাণিজ্যিক কর্মকান্ড অবৈধ। এ কারণে এই ব্যবসা পুরোপুরি আইনী
কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে কাজ করা হ”েছ। জানা গেছে, ফেসবুকে আইডি খুলেই কয়েক লাখ প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এর বাইরে
নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট খুলে হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স বাণিজ্যিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। সরকারের হিসাবে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত প্রতিষ্ঠান হ”েছ মাত্র ১
হাজার ৩০০টি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই তেরোশ’টি প্রতিষ্ঠানের দিকে নজর দিতে পারছে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে পরিচালনা করা হয় তার কোন তথ্য নেই
সরকারের কাছে। ফলে দেশের বিভিনড়ব ¯’ানে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে অনলাইন প্রতিষ্ঠান। μেতারা এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হ”েছন। এ কারণে পুরো ব্যবসাটি আইনী কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা না গেলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সঙ্কট তৈরির আশঙ্কা আছে সংশ্লিষ্টদের। ইতিপূর্বে এমএলএম কোম্পানি খুলে ডেসটিনি, যুবকসহ অসংখ্য কোম্পানি প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে আইন করে
এসব প্রতিষ্ঠান ¯’ায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। ই-কমার্স ব্যবসাকেও আইনী কাঠামো ও পলিসি সহায়তা দেয়া না গেলে এ খাতেও অপতৎপরতা ও কারসাজির
সুযোগ নিতে পারে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকের পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠায় সেগুলো তদন্ত করে দেখা হ”েছ। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন বলেন, যে কোন ব্যবসা পরিচালনা করতে হলে নীতিমালা ও এ সংμান্ত আইন-কানুন মেনে করতে হবে। ডিজিটাল ব্যবসা যা’
নতুন এক ধরনের ব্যবসা দেশে দ্রুত সম্প্রসারণ হ”েছ। অনেকেই এ খাতে বিনিয়োগ করছেন, ভোক্তাদেরও সাড়া পাওয়া যা”েছ। আর এ কারণে ডিজিটাল ব্যবসা পরিচালনা সংμান্ত কয়েকটি নীতিমালা প্রণয়নের কাজ করছে বাণিজ্য
মন্ত্রণালয়। শীঘ্রই ই-কমার্স ব্যবসা সংμান্ত নির্দেশনা প্রকাশ করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ভোক্তা ও গ্রাহক স্বার্থ সবার আগে। আর এ কারণে নির্দেশনা মেনেই
ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের মতে, সামগ্রিক অর্থনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ডিজিটাল বাণিজ্য। করোনা পরি¯ি’তির কারণে অনেক
ব্যবসা-বাণিজ্যই এখন অনলাইনমুখী হয়েছে। চাহিদার প্রয়োজনে ই-বাণিজ্যের দ্রুত প্রসার হ”েছ অভ্যন্তরীণ বাজারে। আমরা মনে করি, দেশে ই-কমার্স ব্যবসার প্রসারের ফলে এ ব্যবসার ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিš‘ নানা অনিয়ম ও ভোক্তাকে ঠাকানোসহ নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ই-কমার্স বাণিজ্য একটি আইনী কাঠামোর মধ্যে আনার জন্য নির্দেশনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এটা যতো দ্রুত সম্ভব কার্যকর করা দরকার। আমরা এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হোক-এটা প্রত্যাশা করি।