এ এইচ হিমালয় : নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাপাড়া, জিন্নাহপাড়া ও দক্ষিণ টুটপাড়া এলাকার প্রায় ১৫/২০ হাজার বাসিন্দার যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি মতিয়াখালী খালের (কংক্রিটের ড্রেন) পাশে। অতি বৃষ্টিতে বিশাল উন্মুক্ত ড্রেনের পানি উপচে সড়কে চলে আসে। একাকার হয়ে যায় ড্রেন ও সড়ক। বোঝার উপায় থাকে না, কোথায় ড্রেন, কোথায় সড়ক। তখন সড়কটি চলাচলের সময় আতংকে থাকেন এলাকাবাসী।
আবার শুষ্ক মৌসুমেও ড্রেনের পানি নিচে নেমে যায়। সড়কের পাশেই বিশাল ড্রেনটি মনে হয় গর্তের মতো। রিকসা, ইজিবাইক ঝাঁকি খেলেই আতকে ওঠে মানুষ, এই বুঁঝি কাত হয়ে ড্রেনে পড়লেন। রাতে বিশাল উন্মুক্ত ড্রেনের পাশ দিয়ে যাতায়াত করতে শরীর ভয়ে ছমছম করে।
এমন আতংক নিয়েই প্রতিদিন যাতায়াত করেন ওই এলাকার মানুষ। সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরীর চশমা খালের পড়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর এই আতংক আরও বেড়েছে।
শুধু মতিয়াখালী খালই নয়; খুলনার পানি নিষ্কাশনের বড় বড় যে খালগুলোকে কংক্রিটের ড্রেনে রূপান্তরিত করা হয়েছে, তার বেশিরভাগই উন্মুক্ত। এসব উন্মুক্ত ড্রেনের পাশ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ওই এলাকার মানুষ। অতীতে এসব ড্রেনে রিকসা, সাইকেল উল্টে পড়েছে। তবে নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। এজন্য তেমন সতর্কতাও নেওয়া হয়নি। চট্টগ্রামে ড্রেনে পড়ে মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনার পর টনক নড়েছে সবার।
কেসিসি থেকে জানা গেছে, নগরীতে ১ হাজার ২০৫ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে। এর মধ্যে কতোটুকু ড্রেন উন্মুক্ত তার পরিসংখ্যান দিতে পারেনি কেসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের মতিয়াখালী, ক্ষেত্রখালী খাল, গোড়া খাল, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নবীনগর খাল, বাস্তুহারা খালের একাংশসহ বিভিন্ন এলাকার অনেকগুলো কংক্রিটের ড্রেনই উন্মুক্ত।
সম্প্রতি টুটপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মহিরবাড়ি খালের ওপারের যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি ড্রেনের পাশে। পুরো ড্রেন উন্মুক্ত। রাস্তা থেকে ড্রেনের উচ্চতা কোথাও এক ফুট, কোথাও কিছুটা বেশি। ড্রেনটি ১৫-২০ ফুট চওড়া। কয়েকটি স্থানে ড্রেনের প্রশস্ততা সড়কের দ্বিগুণ। প্রায় ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মতিয়াখালী খালের কোথাও নিরাপত্তা বেষ্টনী দেখা যায়নি। কোনো সতর্কতা সাইনবোর্ডও নেই। পরিবেশ দেখে বোঝা যাচ্ছিলো, এই ড্রেনে কেউ পড়ে গেলে ওঠার কোনো উপায় নেই।
বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলে কর্মরত দক্ষিণ টুটপাড়া মোল্লাপাড়া এলাকার বাসিন্দা জাকারিয়া তুষার বলেন, ভারী বর্ষণ হলে ড্রেন ও সড়ক এলাকার হয়ে যায়। তখন রাস্তায় নামতেই ভয় করে। রাতের বেলায় বাড়ি ফিরতেও ভয় লাগে।
একই অবস্থা ক্ষেত্রখালী খাল এলাকার। লবণচরা এলাকার বেশিরভাগ মানুষকে চলাচল করতে হয় এই খালের পাশ দিয়ে। অথচ বিশাল এই ড্রেন উন্মুক্ত। ড্রেনের পাশে কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই।
কেসিসির ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আরিফ হোসেন মিঠু বলেন, ড্রেনে কয়েকবার বাচ্চারা পড়ে গেছে। সবাই মিলে উঠেয়েছি। হাস-মুরগি প্রায় পড়ে যায়। তবে চট্টগ্রামে কয়েকজন মারা যাওয়ার পর সবার হুঁশ ফিরেছে। অবিলম্বে ড্রেনের পাশে রেলিং দেওয়ার দাবি জানিয়েছি।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, যে সব খাল বা ড্রেনের পাশে ব্যস্ততম সড়ক রয়েছে, সেখানে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়া জরুরী। চট্টগ্রামের মতো দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায় কে নেবে ?
এ ব্যাপারে কেসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ আবদুল আজিজ বলেন, নগরীর ভেতরের সব ড্রেনের ওপর স্লাব দেওয়া হচ্ছে। ভেতরের কোনো ড্রেন উন্মুক্ত থাকবে না। তবে বিশাল দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের খালে স্লাব দেওয়া অনেক ব্যয়বহুল। এজন্য মতিয়াখালী ও ক্ষেত্রখালী খালের পাশে রেলিং দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পে ৭ কিলোমিটার রেলিংয়ের অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগামী বছর কাজ শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।