দেশের প্রতিটি উপজেলার প্রতিটি গ্রাম, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নকে শতভাগ পরিকল্পনার অধীনে আনার লক্ষ্যে উপজেলাভিত্তিক মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ হাতে নিয়েছে সরকার। আগামী ছয় মাসের মধ্যে একটি পরিপূর্ণ মাস্টারপ্ল্যান তৈরির জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরকে (এলজিইডি) নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়নে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতি ইঞ্চি জমি পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে কাজে লাগাতেই ‘উপজেলা পর্যায়ে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন’ নামে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। আশা করছি, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্যে তৃণমূলের চেহারা পাল্টে দেয়া যাবে। সূত্র জানায়, সিটি কর্পোরেশন পৌরসভা বা বিভাগীয় শহরসহ জেলা শহরের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ইতোপূর্বে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করলেও উপজেলা পর্যায়ে এমন কোন পরিকল্পনা ছিল না। এই প্রথমবারের মতো উপজেলা পর্যায়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতের সার্বিক উন্নয়নের জন্য মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের প্রতিটি ইঞ্চি জমি একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার আওতায় আনতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অতি গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে। এ লক্ষ্যে আগামী ৬ মাসের মধ্যেই একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে এলজিইডিকে নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সরকারের গৃহীত আমার গ্রাম আমার শহর মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই এই মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হবে। বৈদেশিক কারিগরি সহায়তায় উন্নত বিশ্বের ন্যায় এই মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হবে। হাওড়, পাহাড়, চর ও নদ-নদী সমৃদ্ধ এলাকার জন্য পৃথক মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে সরকার। এই মাস্টারপ্ল্যান তৈরিতে দেশের সকল স্থানে একযোগে কাজ করা হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, কয়েকটি করে উপজেলাভিত্তিক মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে দীর্ঘ সময় লাগে বিধায় এই প্রথমবারের মতো সারাদেশে একই সময়ে দেশীয় অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বিদেশী কারিগরি সহায়তা নিয়ে একসঙ্গে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হবে। এরই অংশ হিসেবে মন্ত্রণালয় টেকনিকেল এসিটেন্ট প্রপোজাল পারফর্মার (টিএপিপি) তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। পরিকল্পনা প্রণয়নের পর সরকার দেশী ও বিদেশী উদ্যোগে ও অর্থায়নে এসব মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করার কাজ শুরু করবে। সরকার এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন আগামী ২০৩০ সালের মধ্যেই করতে চায়। সেই অনুযায়ী কয়েক ধাপে এসব মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানা গেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের সকল স্থাপনার নির্মাণকাজের গুণগত মান বজায় রাখতে এবং উন্নত বিশ্বের ন্যায় দেশের সকল স্থানকে শতভাগ পরিকল্পনার আওতাধীন করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় উপজেলা পর্যায়ে এ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানা গেছে, মাস্টারপ্ল্যানের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ থাকবে উপজেলা পরিষদের কার্যকরী কমিটির হাতে। কমিটির সদস্যগণ কর্তৃক এ মাস্টারপ্ল্যানের সার্বিক কর্মকান্ড পরিচালিত হবে। মূলত সরকার আমার গ্রাম আমার শহর বাস্তবে রূপ দিতে ও উপজেলা পরিষদকে কার্যকরী করতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উপজেলা পরিষদের কার্যাবলী সংশ্লিষ্ট আইনে উপজেলাভিত্তিক মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কথা থাকলেও তা’ বাস্তবায়ন করা হয়নি এত বছরেও। এই প্রথমবারের মতো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ডেল্টাপ্ল্যানের ৫ হটস্পট রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে তা’ বাস্তবায়নে তৈরি করা হবে এসব মাস্টারপ্ল্যান। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যেই মাঠ পর্যায়ে শতভাগ বাস্তবায়নে সরকার বদ্ধপরিকর। তবে মাস্টারপ্ল্যান প্রতিটি বিভাগ ও অঞ্চলভিত্তিক আলাদা আলাদা এ পরিকল্পনা প্রণয়ন বাস্তবায়ন করা হবে। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়নে উপজেলা পরিষদের একটি নির্বাহী কমিটি থাকবে। যে কমিটি তার উপজেলায় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সঠিকভাবে হচ্ছে কি না তা’ মনিটরিং করবে ও কেউ তা’ বাস্তবানে ব্যাঘাত সৃষ্টি করলে তাও নিয়ন্ত্রণ করবে। এ মাস্টারপ্ল্যানের বাইরে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এমনকি সরকার নিজেও কোন প্রকার স্থাপনা নির্মাণ বা কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারবে না। এমনকি কেউ মাস্টারপ্ল্যানের বাইরে কাজ করলে বা ব্যত্যয় ঘটালে তার বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা মনে করি, উপজেলাভিত্তিক মাস্টারপ্লান একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। আমাদের উপজেলাগুলো ক্রমশ মিনি শহরের রূপ পরিগ্রহ করছে। এ মুহূর্তে যদি মাস্টারপ্লান না করা হয় তবে ভবিষ্যতে অপরিকল্পিতভাবে সেখানে শহর গড়ে উঠবে। তবে দেশের এই বিপুল সংখ্যক মাস্টারপ্লান প্রণয়নের আগে দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা বিপুল সংখ্যক নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা বা আঞ্চলিক পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি ও পরিবেশ গ্রাজুয়েটদের কাজে লাগানো দরকার। অন্ততঃপক্ষে স্থায়ী নিয়োগ না হলেও এ প্রকল্প প্রণয়নকালে তাদের যে কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট করা গেলে তারা অবদান রাখতে পারবে। আর এ তিনটি শ্রেণির গ্রাজুয়েট বা বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করা হোক সেটাও সময়ের দাবি।