খুলনা বিসিক

এ এইচ হিমালয় ঃ নব্বইয়ের দশকে খুলনার বিসিক শিল্প নগরীর ১০ কাঠার দুটি প্লট (বি-৫৯ ও ৬০) নিয়ে বিবিধ পণ্যের কারখানা নির্মাণ করা করে বারী ইন্ট্রাস্ট্রিজ লিমিটেড। এ জন্য বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হয়। কিন্তু ঋণ নিয়েই বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠান। এ ঘটনায় ২০০০ সালের ২২ জুন প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সেই মামলা এখনও চলছে। ২১ বছর ধরে বন্ধ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।
শুধু বারী ইন্ডাস্ট্র্রিজই নয়, শিল্প নগরীর প্লট দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে খোঁজ নেই ১৪টি কোম্পানির। শিল্পনগরীর বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৫৪টি প্লট তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। প্লট বরাদ্দ পাওয়ার পর ঋণ নিয়েছে তারা। কিছুদিন কারখানাও চলেছে। এরপর সবকিছু বন্ধ।
ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য আদালতে মামলা চলায় বিসিক কর্তৃপক্ষ সেই প্লট বাতিলও করতে পারছে না। তাই বছরের পর বছর অব্যবহƒত পড়ে আছে ৫৪টি প্লট। এসব প্লটে থাকা ১৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এখন ৫টি যন্ত্রাংশ বিক্রি করে কারখানা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে পুরোপুরি বন্ধ ১৪ প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনে (বিসিক) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা শিল্প নগরী প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয় ১৯৬৫ সালের ৮ মার্চ। ১৯৬৬ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে এর কাজ শেষ হয়। এখানে মোট জমি ৪৪ দশমিক ১০ একর। মোট প্লট ২৪০টি। এসব প্লটে ৮৬টি শিল্পকারখানা স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে ৬৩টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে রয়েছে। এর মধ্যে ২৩টি কেমিক্যাল, ১৫টি খাদ্যজাত, ১২টি প্রকৌশল, ১টি পাটজাত, ৪টি বনজ ও ৪টি প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠান। চালু কারখানাগুলোতে কাজ করছে আড়াই থেকে তিন হাজার শ্রমিক।
বিসিক সূত্র মতে, বন্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে-মেসার্স এ আর ফ্লাওয়ার্স মিলস, বারী ইন্ডাস্ট্র্রিজ লিমিটেড, সোহানা ইন্ডাস্ট্র্রিজ লিমিটেড, মধুমতি কোক অ্যান্ড ব্রিকস ইন্ডস্ট্র্র্রিজ (প্রা.) লিমিটেড, মডার্ন পিপি ব্যান্ড ইন্ডাস্ট্র্র্রিজ (প্রা.) লিমিটেড, সায়েরা এগ্রো ইন্ডাস্ট্র্র্রিজ (প্রা.) লিমিটেড, জামান অ্যাসোসিয়েট ইন্ডাস্ট্র্র্রিজ (প্রা.) লিমিটেড, মহাসিন টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, খুলনা পেপার বোর্ড অ্যান্ড প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্র্র্রিজ লিমিটেড, অর্ক লেদার ইন্ডাস্ট্র্র্রিজ (প্রা.) লিমিটেড, অ্যাকুয়া রিসোর্স লিমিটেড, এশিয়ান প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্র্র্রিজ, এশিয়ান স্পুুল ইন্ডাস্ট্র্র্রিজ ও জুট স্পিনার্স লিমিটেড।
খুলনা-যশোর মহাসড়কের শিরোমনি এলাকায় বিসিক শিল্প নগরীর অবস্থান। শিল্পনগরীর ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়ে সারি সারি কারখানা। বেশির ভাগেই উৎপাদন চলছে। জুট স্পিনার্সের সামনের সড়কটির অবস্থা খুবই নাজুক। শিগগিরই এটির সংস্কার কাজ শুরু হবে। অন্যগুলো চলাচল উপযোগী। বন্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া শিল্প নগরীতে কোনো প্লটই ফাঁকা নেই।
সার্বিক বিষয়ে বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা শেখ রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক ঋণ ও লোকসানের কারণে ১৪টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ। মামলার কারণে প্লটগুলো অন্য প্রতিষ্ঠানকেও বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংক ও বিসিক মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে মামলা নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, আগে শিল্পনগরীর ভেতরের কিছু সড়ক ভাঙ্গাচোরা ছিল। গত কয়েক বছরে অধিকাংশ সড়ক মেরামত করা হয়েছে। বর্তমানে একটি সড়ক খারাপ রয়েছে। সেটি মেরামতের জন্য ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। দ্রুত সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হবে।
॥ বন্ধ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ নেই বিসিকের ॥
মাসের পর মাস বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ নেই বিসিকের। তাদের কাছে কোম্পানির মালিক বা প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগের নম্বরও নেই। বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী চিঠিও প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিতে পারে না সংস্থাটি। প্লট বরাদ্দ দেওয়া ঠিকানাায় চিঠিও পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায় না। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ব্যাংকের বিরোধ নিরসনের কোনো নেওয়া যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা শেখ রিয়াজুল ইসলাম বলেন, বন্ধ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের মালিক বা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কোনো উপায় নেই। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের কোনো কেয়ারটেকারও নেই। এজন্য বিসিকের অনেক জরুরী চিঠি তাদের দেওয়া যায় না।
বিসিক শিল্পনগরী ঘুরে এসব প্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে। বিসিকের কাছেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগের ঠিকানা ও নম্বর না থাকায় বন্ধ প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।