আট মাসের মাথায়
আদেশ পরিবর্তন

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ আটমাস ছয়দিনের মাথায় পরিবর্তন হলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা। পাল্টে গেলো আগের আদেশ। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নয়, এখন থেকে আবারো আগের ন্যায় খুলনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্পর্কিত যাবতীয় কাজ করবে গণপূর্ত অধিদপ্তর। আর এ আদেশের কারণে গত বছর ৫ সেপ্টেম্বরের আদেশ বাতিল হয়ে গেলো। খুমেক হাসপাতালের যাবতীয় কাজ এখন থেকে আবারো এককভাবে করার সুযোগ পাবে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
গত বছর ৫ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব মুহাম্মদ শাহাদত খন্দকার এক নির্দেশনায় বলেছিলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার এবং অবকাঠামো উন্নয়ন সম্পর্কিত যাবতীয় কাজ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মেইনট্যানেন্স খাতায় অন্তর্ভুক্ত করা হলো। উক্ত দু’টি হাসপাতালের পরিচালকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলেও পত্রে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু গত ১১ মে’র অপর এক আদেশে একই কর্মকর্তা জানান, খুলনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্পর্কিত যাবতীয় কাজ নিদের্শক্রমে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পরিবর্তে গণপূর্ত অধিদপ্তরের মেইনট্যান্সে খাতায় অন্তর্ভুক্ত করা হলো। তবে আগের আদেশে খুলনার পাশাপাশি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কথা উল্লেখ থাকলেও এবারের আদেশে শুধুমাত্র খুমেক হাসপাতালের কথা বলা হয়। এর ফলে গত বছর ৫ সেপ্টেম্বরের ওই আদেশ অনুযায়ী শুধুমাত্র সাতক্ষীরা মেডিকেলের কাজই করবে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বা এইচইডি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গণপূর্ত বিভাগের কাছ থেকে হাসপাতালের কাজগুলো এইচইডিকে দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে প্রথমে পত্র লেখেন খুমেক হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ডা: মুন্সী মো: রেজা সেকেন্দার। ২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তিনি ওই পত্রে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে খুমেক হাসপাতাল ও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণ কাজ এইচইডিকে দিয়ে করানোর অনুরোধ জানান। এ ব্যপারে তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ একাধিক জায়গায় অনুলিপি দেন। ওই পত্রের আলোকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ৫ সেপ্টেম্বর গণপূর্ত অধিদপ্তরের পরিবর্তে এইচইডিকে দিয়ে উক্ত দু’টি প্রতিষ্ঠানের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করার আদেশ দিলেও পরে খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবর গত বছর ২০ সেপ্টেম্বর পত্র দেন। ওই পত্রে তিনি যেমন খুমেক হাসপাতালের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ গণপূর্ত অধিদপ্তরের আওতায় রাখার অনুরোধ জানান তেমনি ব্যবহারকারীরাও গণপূর্ত বিভাগের পক্ষে প্রত্যয়নপত্র দেন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো: রবিউল হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রত্যয়ণ পত্রে খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-১এর কাজের প্রশংসা করা হয়। একই দিনে একই কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত অপর একটি পত্রে গণপূর্ত বিভাগ-১এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে ধন্যবাদ জানানো হয়। ওই পত্রে ভবিষ্যতে গণপূর্তের এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখারও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। এছাড়া অবসরে যাওয়া খুমেক হাসপাতালের পরিচালাক ডা: এ টি এম এম মোর্শেদও একটি প্রত্যয়ণ পত্র দিয়ে তাতে গণপূর্ত বিভাগের কাজের প্রশংসা করে উন্নয়নের স্বার্থে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। খুলনা মেডিকেল কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: মো: আব্দুল আহাদ স্বাক্ষরিত অপর একটি প্রত্যয়ণ পত্রেও গণপূর্ত বিভাগের কাজের প্রশংসা করা হয়। এভাবে খুলনা শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এমনকি খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষও প্রত্যয়ণপত্র দেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের আওতায় তাদের প্রতিষ্ঠানের কাজগুলো রাখার জন্য। যার আলোকে বিগত আট মাস পর এ নতুন আদেশ জারি করা হয়।
নতুন আদেশের ব্যাপারে গণপূর্ত-১, খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার বিশ^াস বলেন, মন্ত্রণালয়ের যে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তারা বদ্ধপরিকর। মন্ত্রণালয় আগের আদেশ কিভাবে বা কেন দিয়েছিল তা নিয়ে তার কোন মন্তব্য নেই। তবে গণপূর্ত অধিদপ্তর যে একটি গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান সেটিই নতুন এ আদেশের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় বলেও তিনি মনে করছেন।
গণপূর্ত অধিদপ্তর-১, খুলনা’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, গণপূর্ত বিভাগের কাজের মান সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের সন্তোষনজক প্রতিবেদন এবং সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েই মন্ত্রণালয় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অপরদিকে, এইচইডি, খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ কর্মকার বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে তারা যেমন কাজের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তেমনি এখন বাতিল হয়েছে এতেও তাদের কোন মন্তব্য নেই। কেননা, সরকারী কাজ যে কোন প্রতিষ্ঠান দিয়ে সরকার করাতে পারে। সেটি নিয়ে তাদের কিছুই বলার থাকার কথা নয়।