/ এই সরকারের একমাত্রম্যান্ডেট নির্বাচন করা

এই সরকারের একমাত্রম্যান্ডেট নির্বাচন করা

এই সরকারের একমাত্র ম্যান্ডেট নির্বাচন করা

খুলনায় বিশাল সমাবেশে সালাউদ্দিন আহমেদ

এ এইচ হিমালয় : বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, এই সরকারের ম্যান্ডেট একটি স্বচ্ছ নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে করে তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনুস আপনার নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের পরে সাংবিধানিকভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু মনে করবেন না রোজ কেয়ামত পর্যন্ত আপনাদেরকে আমরা এই জায়গায় দেখতে চাইবো।
তিনি শনিবার বিকালে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে তারুণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলো থেকে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা যোগ দেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, এখন মানুষ বলছে আপনার সরকার এনসিপি মার্কা সরকার। আপনার সরকারে এনসিপির ২ জন প্রতিনিধি বিদ্যমান। তারা উপদেষ্টা, তারা আবার এনসিপি সংগঠন করে। যদিও অফিসিয়ালি করেন না, কিন্তু সবাই সবকিছু জানে, ওপেন সিক্রেট। যদি আপনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান তাহলে এনসিপি মার্কা ২ জনকে পদত্যাগ করতে বলুন, যদি পদত্যাগ না করে আপনি বিদায় করুন।
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আপনার সরকারে একজন বিদেশি নাগরিককে আপনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছেন। আপনার কি সেই আক্কেল জ্ঞান নেই। একজন বিদেশী নাগরিকের কাছে এই দেশের সেনাবাহিনী নিরাপত্তা সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রদান করবে, এটা কিভাবে ভাবলেন? তিনি রোহিঙ্গা করিডরের নামে, মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চায়। বাংলাদেশের মানুষের সাথে আপনি কথা বলেননি, এদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কোন আলাপ-আলোচনা করেননি। অত্যন্ত ‘অ্যারোগ্যান্টলি’ আপনার সেই উপদেষ্টা বলছেন তাতে নাকি কিছু যায় আসে না।
তিনি বলেন, আমরা দাবি করছি সেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে আপনি বিদায় করুন। সেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হয় নিজে পদত্যাগ করবে, না হয় আপনি তাকে বিদায় করবেন। এই দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো জাতীয় দায়িত্ব বিদেশী নাগরিকের হাতে থাকতে পারে না। এই নাগরিক ষড়যন্ত্র করছে বাংলাদেশে একটি অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য, আমরা তা হতে দেবো না।
সরকারের একমাত্র ম্যান্ডেট দেশে একটি সাধারণ নির্বাচন করা উল্লেখ করে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচনমুখী যেসব জরুরি সংস্কার করা দরকার তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। আপনি আশ্বস্ত করেছিলেন, আবার আপনি সরে গেলেন, আপনি মনে করছেন আপনাকে জনগণ অসীম ক্ষমতাশীল বানিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো পরামর্শ আপনার মানার দরকার নেই। যদি তাই মনে করেন আপনার নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ হবে, ইতোমধ্যে কিছু কিছু উপদেষ্টা আপনার নিরপেক্ষতা ক্ষুণœ করে উচ্চাভিলাস প্রকাশ করছে। তাদের উদ্দেশ্য অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত অনির্বাচিতভাবে যেন এই সরকার থাকতে পারে। আপনার কী উদ্দেশ্য তা অবশ্য আমরা জানি না।
তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যদি কোনোদিন নির্বাচনের দাবিতে এই সরকারকে ঘেরাও করতে হয়, তা হবে আমাদের জাতির জন্য একটি দুর্ভাগ্য। আপনি কি চান এই নির্বাচনের জন্য আপনার সাথে আমাদের কোনো দ্বিধা দ্ব›দ্ব সৃষ্টি হোক। এ দেশের জনগণ জনগণ যমুনামুখী লংমার্চ করুক।
তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনুস আপনি সম্মানের সাথে ডিসেম্বরের মধ্যে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করুন। সংস্কার এবং বিচার চলমান প্রক্রিয়া, তা চালু থাকবে যারাই সরকারে আসুক না কেন। অনন্তকাল ধরে আপনি বিচার এবং সংস্কারের বাহানা দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কণ্ঠকাকীর্ণ করবেন না।
সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার সমালোচনা করে তিনি বলেন, যাদের পরামর্শে আপনি বিভ্রান্ত হচ্ছেন সেই ফ্যাসিবাদের দোসরদেরকে আপনার উপদেষ্টা পরিষদ থেকে অপসারণ করুন। আমরা আগেও বলেছিলাম আপনার উপদেষ্টা পরিষদে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর আছে, আমরা চিহ্নিত করে দিয়েছিলাম। এখন কিছু বিদেশীদের দোসর আছে। এখন আমরা তাদের অপসারণের কথা বলছি। আর যারা এনজিও মার্কা উপদেষ্টা আছে, যারা আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের কথা শোনার প্রয়োজন নেই, তাদেরকে অপসারণ করুন। না হলে সসম্মানে বিদায় নিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ পর্যন্ত এ রকম ৪ থেকে সাড়ে ৪ কোটি তরুণ ভোটার কেউ গণতন্ত্রের স্বাদ নিতে পারেনি।
তিনি বলেন, দেশে খুনের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি একদিনে হয়নি। জাতিসংঘ স্বীকৃতি খুনী, বিশ্ব খুনী শেখ হাসিনা স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সমস্ত গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার হরণ করেছিল। ১৪০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে মারণাস্ত্রের মাধ্যমে। সামরিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। হেলিকপ্টারের গানশিপ থেকে গুলি চালানো হয়েছে। শেখ হাসিনা এই গণহত্যা চালানোর পরও তার মধ্যে এবং এই দলের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। তারা ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। উল্টো দিল্লিতে বসে এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকারীদের অপরাধী হিসেবে তকমা দিচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমরা দাবি করেছিলাম আওয়ামী লীগের বিচার করা হোক। সরকার তা করেছে, তবে অনেক পানি ঘোলা করে। আওয়ামী লীগের ১৫-১৬ বছরের ইতিহাসে তারা শুধু জুলাই গণহত্যা হত্যা করেনি, ৭ হাজার মানুষকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে। অত্যাচার করে হত্যা করেছে, গুম করেছে, অপহরণ করেছে। গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের জন্য সীমাহীন নির্যাতন নিপীড়ন করেছে। অত্যাচার নিপীড়নের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটেছে ঢাকার মাটিতে, আর দাফন হয়েছে দিল্লিতে।
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না। বিশেষ বক্তা ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। সঞ্চলনা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাকিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।
সমাবেশস্থলে বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন, জেলা বিএনপির আহŸায়ক মনিরুজ্জামান মন্টুসহ বিভিন্ন জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।