স্টাফ রিপোর্টার ঃ একদিন পর আবারো খুলনায় ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। খুলনা মহানগরীতেই একদিনে সনাক্ত হয়েছেন ২৫জন। এছাড়া জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন তিনজন। গতকাল শনিবার খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে মোট ২৯ জনের করোনা সনাক্ত হলে তার ২৮জনই খুলনা মহানগরীসহ জেলার। বাকী একজন বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সার্বিক সমন্বয়কারী এবং খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ বলেন, গতকাল খুলনা ল্যাবে ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়। এর মধ্যে ২৯জনের পজেটিভ হয়। যার মধ্যে ২৮জনই খুলনার এবং একজন বাগেরহাটের। আবার খুলনা জেলার ২৮ জনের মধ্যে ২৫ জন মহাগনরীর এবং বাকী তিনজন জেলার রূপসা উপজেলার।
নগরীর আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন কেডিঘোষ রোডের ২০ বছরের এক তরুণী, নুর নগরের ৩৮ বছরের এক ব্যক্তি, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দু’জন নারী চিকিৎসকসহ পাঁচজন চিকিৎসক, সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার ৩৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তি, গোবরচাকা মেইন রোডের ৪০ বছর বয়সী একজন, জিরো পয়েন্টের ৫২ বছর বয়সী একজন, জোড়াগেট পুলিশ স্টাফ কোয়ার্টারের ৫০ বছর বয়সী একজন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ৫০ বছর বয়সী একজন, টুটপাড়া দিলখোলা রোডের ৪৫ বছর বয়সী একজন, নুর নগরের ৩৪ বছর বয়সী এক নারী, জেলা কারাগারের ২৪ বছর বয়সী একজন, খালিশপুরস্থ খালিশপুর(পিপলস) জুট মিল এলাকার ২৫ বছর বয়সী এক নারী, হরিণটানা থানাধীন মোহাম্মদনগর এলাকার ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি, খালিশপুর হাউজিং এস্টেট এলাকার ৫২ বছর বয়সী এক ব্যক্তি, বয়রা ভাঙ্গাপোল এলাকার ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি, দক্ষিণ টুটপাড়ার ৫৫ বছর বয়সী একজন, বয়রা মেইন রোডের ২৫ বছর বয়সী একজন।
আরও এক করোনা রোগীর মৃত্যু ঃ এদিকে, খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও এক করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তার নাম মো: আলী মিয়া(৬০) এবং তিনি নড়াইলের নড়াগাতি থানার খাশিয়াল এলাকার বাসিন্দা। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম।
খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের সমন্বয়কারী ডা: শেখ মো: ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ১৩ মে সনাক্ত হওয়া নড়াইলের মো: আলী মিয়া ২৫ মে করোনা হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকালে তার মৃত্যু হয়।
তথ্য গোপন করে ভর্তি হওয়া একজনের মৃত্যু ঃ অপরদিকে, যশোর জেলার অভয়নগর থানাধীন নওয়াপাড়া এলাকার আমীর হোসেন(৭৫) নামের এক ব্যক্তি নগরীর গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দুপুরে মৃত্যুবরণ করেন। শুক্রবার খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে তার নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ হয়। কিন্তু তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা সেটি গোপন রাখেন।
গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. গাজী মিজানুর রহমান বলেন, স্ট্রোক ও কিডনি রোগে আক্রান্ত যশোরের নওয়াপাড়া এলাকার আমীর হোসেন এক সপ্তাহ আগে এই হাসপাতালে ভর্তি হন। শনিবার দুপুরে তিনি মারা যান।
যশোরের অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুর রহমান রিজভি জানান, গত ৩০ মে আমীর হোসেনের নমুনা সংগ্রহ করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে পাঠানো হয়। শুক্রবার তার রিপোর্ট করোনা পজেটিভ আসে। এরপর শনিবার তিনি মারা যান।
এ নিয়ে খুলনা ল্যাবের পরীক্ষায় সনাক্ত হওয়া আট ব্যক্তির করোনায় মৃত্যু হলো। এর আগে খুলনার রূপসা উপজেলার ৩ জন ও দিঘলিয়া উপজেলার একজন, বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার একজন এবং মোড়েলগঞ্জ উপজেলার একজনের মৃত্যু হয়। সবশেষে গতকাল যশোরের নওয়াপাড়ার একজন এবং নড়াইলের নড়াগাতির এক ইমামের মৃত্যু হয়।
খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবের সূত্র মতে, গত ৭ এপ্রিল থেকে শুরু করে গতকাল শনিবার পর্যন্ত এ ল্যাবে সাত হাজার ৫৯৭টি নমুনা পরীক্ষা হয়। এর মধ্যে করোনা পজেটিভ হয় ৩২৯জনের। আর মৃত্যু হয় আটজনের। গতকাল রাত পর্যন্ত করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৪১জন করোনা রোগী।