স্টাফ রিপোর্টার ঃ একশ’ বেডের হাসপাতালে অতিরিক্ত ৩০ বেড দিয়েও সংকুলান করা যাচ্ছেনা। রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে দেড়শ’। আবার গতকালও খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। চার ঘন্টা ২৫ মিনিটের ব্যবধানে ওই চারজনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে খুলনার একজন আর বাগেরহাটের তিনজন রয়েছেন।
এদিকে, খুলনা করোনা হাসপাতালে রোগী সংকুলান না হওয়ায় খুলনা জেনারেল হাসপাতালকে পূর্ণাঙ্গ করোনা হাসপাতাল করার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার বাস্তবায়ন কাজও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। গতকাল থেকে হাসপাতালের রোগীদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে আগামী শুক্রবারের মধ্যে তাদের সকলকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে। জেনারেল হাসপাতালের নতুন ভবনে ৭০টি বেড করোনার রোগীদের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে উল্লেখ করে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও খুলনার সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, শুক্রবারের মধ্যে রোগীদের খুমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করে রবি বা সোমবার নাগাদ করোনা রোগীদের ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া শুরু করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ হাসপাতালের নতুন ভবনে যেখানে জরুরি বিভাগ পরিচালিত হচ্ছিল সেখানেই অক্সিজেন সরবরাহের জন্য ইতোমধ্যে প্লান্ট বসানো হয়েছে। স্পেক্ট্রা অক্সিজেন কোম্পানীর এ প্লান্টটি স্থাপন করেছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর(এইচইডি)। আপাতত: ৭০টি বেডের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করা যাচ্ছে উল্লেখ করে সিভিল সার্জন বলেন, এজন্য এখন সর্বোচ্চ ৭০জন রোগী ভর্তি করা যাবে। হাসপাতালের বর্তমান জনবল দিয়েই কোভিড হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা হবে বলেও তিনি জানান। তবে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কাছে কিছু ডাক্তার পদায়নের জন্য চাওয়া হয়েছে। অবশ্য নার্স যা আছে তাতেই হবে বলেও তিনি জানান।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাসপাতালের পুরাতন ভবনে যেখানে প্রশাসনিক ভবন রয়েছে সেখানে কোন রোগী রাখা হবে না। তবে প্রশাসনিক কার্যক্রম ছাড়াও এ ভবনে ইপিআই, ভ্যাকসিন ও করোনার নমুনা সংগ্রহের কার্যক্রম চলবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আওতাধীন পরিচালিত করোনা হাসপাতালের মুখপাত্র ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, গতকালও এ হাসপাতালে ১৫৪জন রোগী ভর্তি ছিলেন। মৃত্যুও হয়েছে চারজনের। এরা হলেন, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার পাঁচ বুনিয়ার শেখ মোকছেদ আলী(৭০), খুলনার তেরখাদা উপজেলার মধুপুর এলাকার জুলেখা বেগম(৬৫), বাগেরহাটের মংলা উপজেলার মারুফা বেগম(৪০) এবং মোড়েলগঞ্জের চিংড়িখালির ফারুক তালুকদার(৫৫)।
রামপালের শেখ মোকছেদ আলী ৭ জুন ভর্তি হয়ে গতকাল দুপুর একটা ২০ মিনিটে, তেরখাদার জুলেখা বেগম ১৩ জুন ভর্তি হয়ে গতকাল বিকেল পৌনে তিনটায়, মংলার মারুফা বেগম ৬ জুন ভর্তি হয়ে গতকাল চারটা ৫৫ মিনিটে এবং মোড়েলগঞ্জের ফারুক তালুকদার ১৪ জুন ভর্তি হয়ে গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় মৃত্যুবরণ করেন বলেও হাসপাতালের রেকর্ডে উল্লেখ রয়েছে।
অপরদিকে, খুলনা মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবেও গতকাল রেকর্ড সংখ্যক করোনা শনাক্ত হয়েছে। গতকাল ৫৩৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২শ’ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে বলে কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ বলেন। তিনি বলেন, গতকাল যে ৫৩৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয় তার মধ্যে খুলনার নমুনার সংখ্যা ছিল ৩৭৫টি। শনাক্ত হওয়া ২শ’ জনের মধ্যে খুলনার ১৪৯জন, বাগেরহাটের ৩১জন, সাতক্ষীরার পাঁচজন, যশোরের পাঁচজন, নড়াইলের চারজন এবং ঝিনাইদহের ছয়জন রয়েছেন।
খুলনার বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: রাশেদা সুলতানা গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত বিভাগীয় করোনা বিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, বিগত ২৪ ঘন্টায় বিভাগের ১০ জেলায় সর্বমোট ১৩জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় দু’জন, বাগেরহাটে একজন, সাতক্ষীরায় তিনজন, যশোরে দু’জন, ঝিনাইদহে দু’জন এবং কুষ্টিয়ায় তিনজন মৃত্যুবরণ করেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ২৪ ঘন্টার রিপোর্টে এটি এ যাবতকালের মধ্যে বিভাগের সর্বোচ্চ বলেও বিগত দিনের প্রতিবেদনে দেখা যায়।
এছাড়া বিভাগের ১০ জেলায় এ পর্যন্ত ৪১ হাজার ২৮জনের করোনা শনাক্ত হয়। এর মধ্যে সুস্থ্য হয়েছেন ৩৩ হাজার ৩৯১জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৭৩৯জন।