খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পবিত্র ঈদ-উল-আযহার ছুটি শেষে আজ রবিবার থেকে অফিসিয়াল কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। তবে এখনও অভিভাবকহীন রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যলয়টি। উপাচার্য (ভিসি) নিয়োগের জন্য সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রক্রিয়া শেষ করে ভিসি নিয়োগ হতে আগামী মাসের(জুলাই) মধ্য সময় পর্যন্ত লাগতে পারে।
এদিকে, আগে থেকেই শিক্ষকদের ক্লাস বর্জনও চলমান রয়েছে। শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরবেন কি না সে সিদ্ধান্ত হবে আজ। এ বিষয়ে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ সাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কাল(রবিবার) আসি দেখি কি করা যায়।’
এর আগে গত ২২ মে থেকে কুয়েটে আনুষ্ঠানিক কোন অভিভাবক নেই। অন্তর্বর্তীকালীন ভিসি ওইদিন(২২ মে) পদত্যাগ করায় এ শূণ্যতা সৃষ্টি হয়। বেতন-বোনাসে স্বাক্ষর করার একমাত্র এখতিয়ার ভিসির। কিন্তু ভিসি না থাকায় এবার ১২শ’ জনবলের মে মাসের বেতন যেমন হয়নি তেমনি ঈদের বোনাসও পাওয়া যায়নি। এর ফলে আনন্দের পরিবর্তে অনেক পরিবারে ছিল হতাশা। বিশেষ করে প্রায় সাড়ে চারশ’ কর্মচারীর পরিবারে ছিলনা কোন প্রকার ঈদের আনন্দ।
গত ১৮ ফেব্রæয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের ফরম বিতরণকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল। বহিরাগতদের সহায়তায় হামলা করা হয়েছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর। ওই হামলায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হয় এমনটিও দেখা গেছে ভিডিও ফুটেজে। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ওই হামলায় অন্তত: দেড়শ’ শিক্ষার্থী আহত হন। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠণ করা হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যখন একদফায় রূপ নেয় এবং শেষ পর্যন্ত ২৫ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় তৎকালীন ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাছুদ ও প্রোভিসি প্রফেসর ড. মোঃ শরীফুল আলমকে অব্যাহতি দেয় সেটিকে মেনে নিতে পারেননি শিক্ষকদের একাংশ। এজন্য কুয়েট শিক্ষক সমিতির ব্যানারে পাল্টা আন্দোলন শুরু হয়। যে কারণে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেমে গেলেও শিক্ষক লাঞ্ছিতের বিচারের দাবিতে শিক্ষক সমিতি পাল্টা আন্দোলন শুরু করে। এজন্য অন্তর্বর্তীকালীন ভিসি ৪ মে থেকে কার্যক্রম শুরু করতে চাইলেও শিক্ষকরা ক্লাস বর্জন শুরু করায় এক পর্যায়ে খুলনা ছাড়তে এবং পদত্যাগে বাধ্য হন চুয়েট থেকে আগত অধ্যাপক ও কুয়েটের অন্তর্বর্তী ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ হযরত আলী। সেই থেকে এখনও কুয়েট ভিসিবিহীন থাকায় কোনরূপ বেতন-বোনাসের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেউ নেই। যে কারনে নতুন করে এ সংকট তৈরি হয়েছে।
শিক্ষকদের পাল্টা আন্দোলনের মুখেই গত ১৯ মে খুলনা ত্যাগ করে ২২ মে পদত্যাগ করেন অন্তর্বর্তী ভিসি অধ্যাপক ড. মোঃ হযরত আলী। তখন থেকে এখনও সংকটের মধ্যে রয়েছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(কুয়েট)।
কুয়েট কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাসিব সরদার বলেন, ‘কুয়েটের ইতিহাসে এই প্রথম বেতন-বোনাসবিহীন ঈদ করতে হলো শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এটি ইতিহাসের পাতায় একটি কলংকজনক অধ্যায় হিসেবে রয়ে গেলো।’