খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি

কাজী আমিনুল হক

* গৌরবের পদ্মা সেতু, আর বাকী ৮ দিন

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি আলহাজ¦ কাজি আমিনুল হক বলেছেন, পদ্মা সেতু শুধুমাত্র একটি চলাচলের সড়ক বা সেতু নয়, বরং একটি দিখন্ডিত দেশকে একত্রিত করার মাধ্যমও বটে। পদ্মা নদীর কারণে বাংলাদেশ দু’টি ভাগে এতোদিন বিভক্ত ছিল। আগামী ২৫ জুন এর অবসান হতে যাচ্ছে। এর ফলে গোটা দেশ চলে আসবে একটি যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায়। যেটি যে কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে সামনে রেখে দৈনিক পূর্বাঞ্চলকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। খুলনার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের এই নেতার মতে পদ্মা সেতু হলে মংলা বন্দরেও ফিরে আসবে প্রাণচাঞ্চল্য। এ অঞ্চলে তৈরি হবে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান। যা দেশের জাতীয় অর্থনীতিতেও রাখবে অনন্য ভূমিকা।
আগামী ২৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। এটিকে সামনে রেখে সারাদেশে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এ সেতুর জন্য সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করবে খুলনার মানুষ। এজন্য খুলনার মানুষই সর্বপ্রথম মাওয়ায় পদ্মা সেতুর জন্য আন্দোলন করেছিল। ওই আন্দোলন থেকে বাদ যায়নি এ অঞ্চলের কোন শ্রেণির মানুষ। উন্নয়ন কমিটির পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, শিক্ষক, আইনজীবীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ সেদিন আন্দোলনে রাজপথ কাপিয়েছিল। যার ফলে আজ পদ্মা সেতু বাস্তব। ওই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত একজন ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মাহেন্দ্রণের এই আগাম মুহূর্তটি আপনার কাছে কেমন লাগছে জানতে চাইলে খুলনা চেম্বার সভাপতি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন বলেই আজ পদ্মা সেতু হলো। দীর্ঘদিন ধরে শুধু শুনেই আসছি পদ্মা সেতু হবে, কিন্তু বাস্তবে রূপ নেবে সেটি কেউ চিন্তাও করেনি। তাও আবার নিজস্ব অর্থায়নে’। কাজি আমিনুল হক বলেন, অর্থায়ন থেকে বিশ^ব্যাংকের চলে যাওয়ার পর জাতি হতাশ ছিল। তার পরও আল্লাহর রহমতে সেতু হয়েছে। এর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একুশ জেলায় ব্যাপক শিল্পায়ন হবে। সেই সাথে সৃষ্টি হবে নানা কর্মসংস্থানের।
পদ্মা সেতুর ফলে মংলা, ভোমরা, বেনাপোল বন্দরের আমদানীকারকরা বেশি সুফল পাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নদী পার হয়ে এ অঞ্চল থেকে পণ্য ঢাকায় পাঠাতে গেলে অনেক কষ্ট হয়। এখন দিনে দিনেই রাজধানীসহ অন্যান্য জেলায় পাঠানো যাবে পণ্য সামগ্রী। অর্থাৎ পদ্মা সেতুর ফলে শুধু ২১ জেলার নয়, বরং সার্বিকভাবে গোটা দেশের উন্নয়ন হবে। খুলনাঞ্চলের চেয়ে দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোরও খরচ কমে যাবে। তারাতো সুফল বেশি পাবে। মংলা, পায়রা, বেনাপোল, ভোমরা থেকে আমদানীকৃত পণ্য সামগ্রী যদি অন্যান্য জেলায় কম সময়ে ও কম খরচে পৌঁছে যায় তার সুফলতো তারাই পাবে। আবার এ অঞ্চলের মাছ, সবজি, তরমুজসহ ফলমূল কম খরচে এবং কম কষ্টে ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগে পৌঁছে যাবে। যার সুফল পাবে গোটা বাংলাদেশ। বিশ^ ব্যাংকের সাথে চ্যালেঞ্জ করে এ সেতু করার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেবলমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেই এটি সম্ভব হয়েছে। তার কাছে জাতি এমনটিই প্রত্যাশা করেছিল। অর্থাৎ ২৫জুন হবে দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণেরও দিন। পদ্মা সেতু নির্মাণে যারা বিরোধিতা করেছিল তাদেরকেও তিনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সরকারতো সবাইকেই দাওয়াত দিচ্ছে।
পদ্মা সেতু হলে বিমান বন্দরের চাহিদা আরও বেড়ে যাবে উল্লেখ করে খুলনা চেম্বার সভাপতি বলেন, যশোরের বিমান বন্দরের চাহিদা হয়তো কিছুটা কমতে পারে, কিন্তু বাগেরহাটের খানজাহান আলী(রহ:) বিমান বন্দরের চাহিদা আরও বেড়ে যাবে। কেননা তখন খুলনার মানুষের যাতায়াতের ক্ষেত্রে মাওয়ার পদ্মা সেতুই হবে প্রধান রুট। আর তখন খুলনা-মংলায় শিল্পায়নের জন্য আসা দেশি-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য বিমানই হবে প্রধান বাহন। এজন্য তিনি খানজাহান আলী(রহ:) বিমান বন্দরের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানান। একইসাথে তিনি পদ্মা রেল সেতুর কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে রেল সংযোগ খুলনা পর্যন্ত করার দাবি জানান।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সাথে সাথে খুলনাঞ্চলের সড়কগুলোর ওপর যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে উল্লেখ করে কাজি আমিনুল হক বলেন, এজন্যই সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যমান সড়কগুলো সম্প্রসারণ এবং বিকল্প কিছু সড়ক নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। যেগুলো বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব বলেও তিনি মনে করেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু সচল রাখতে যতগুলো হাইওয়ে দরকার সেগুলো যেন দ্রুত করা হয়। প্রথম যে ধাক্কা সেটি ছিল পদ্মা সেতু। যেটি প্রধানমন্ত্রী করে দিলেন। এখন সড়কগুলোর কোনটি চার লেন আবার কোনটি ছয় লেন করা উচিত বলেও তিনি মনে করেন। আর বিকল্প সড়ক নির্মাণ হলে পদ্মা সেতু পার হয়ে খুলনা থেকে ঢাকায় যেতে সময় লাগবে মাত্র তিন ঘন্টা। সেই পরিকল্পনা নিয়েই সরকার এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি এজন্য সরকারের যেসব সংস্থা রয়েছে সেগুলোকে আরও তৎপর হয়ে কাজগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান।