স্টাফ রিপোর্টার ঃ গত বছর করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করলে তড়িঘড়ি করে খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা দিয়ে কার্যক্রম শুরু করা হয়। চলে ওই বছর নভেম্বর পর্যন্ত। এরপর আবারো ডায়াবেটিক হাসপাতালটি খুলনা ডায়াবেটিক সমিতির কাছে ছেড়ে দিয়ে করোনা হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন আইসিইউ ভবনে। শুরুতে বেডসংখ্যা কিছুটা কম থাকলেও গত ৩০ মে থেকে একশ’ বেডে উন্নীত হয়। কিন্তু এই দু’টি প্রতিষ্ঠানে দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা হাসপাতাল পরিচালিত হয়ে আসলেও এতো বেশি রোগী কখনই ছিলনা, যেটি ছিল গতকাল রোববার। অর্থাৎ বেড একশ’ থাকলেও গতকাল এ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ছিল ১২৫জন। অতিরিক্ত বেড দিয়ে তাদেরকে সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে, রোগীর সংখ্যা বাড়লেও সে তুলনায় নেই জনবল। যে কারণে রোগীর সেবা দিতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের। সব মিলিয়ে খুলনা করোনা হাসপাতালে এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী থাকায় গতকালকের চিত্র ছিল অনেকটা ভিন্ন।
অপরদিকে, শনিবার রাত সোয়া ১১টা থেকে গতকাল রোববার সন্ধ্যা সোয়া সাতটা পর্যন্ত বিগত ২০ ঘন্টায় খুলনা করোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে শনিবার রাত সোয়া ১১টায় মৃত্যু হয় ফুলতলার দামোদরের ওসমান সরদার(৭৪)। করোনায় আক্রান্ত হলে তাকে গত ২ জুন এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এছাড়া ওইদিন রাত সোয়া ১২টার দিকে মৃত্যু হয় নগরীর টুটপাড়া এলাকার বাসিন্দা খন্দকার রফিকুল আলমের(৬৭)। তাকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল ৩১ মে। অপর দু’জনের মৃত্যু হয় গতকাল রোববার বিকেলে ও সন্ধ্যায়। এরা হলেন, নগরীর টুটপাড়ার আমেনা খাতুন(৬৫) ও সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মোহাম্মদ আলী(৭৫)। টুটপাড়ার আমেনা খাতুনকে গতকালই এ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে তার মৃত্যু হয় আর শ্যামনগরের মোহাম্মদ আলীকে গত ৩ জুন ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় তার মৃত্যু হয়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও) এবং করোনা হাসপাতালের মুখপাত্র ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার এটি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, গতকাল করোনা হাসপাতালে ভর্তি থাকা ১২৫ জনের মধ্যে রেডজোনে ৯৫ এবং ৩০ জন ছিলেন। এছাড়া আইসিইউ ও এইচডিইউ’র ৩০টি বেড ছিল পরিপূর্ণ।
খুমেক হাসপাতালের করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা বিষয়ক কমিটির সার্বিক সমন্বয়কারী ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ বলেন, খুলনায় করোনা হাসপাতাল হওয়ার পর একসাথে ১২৫ জন রোগি ভর্তি এই প্রথম। এর আগে ১০০ রোগির কাছাকাছি ভর্তি হয়েছে। তবে এবার যে পরিমাণ রোগি ভর্তি হচ্ছে তা আগে কখনও হয়নি। এতো রোগির চাপ সামলাতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
এছাড়া তিনি গতকালকের আরটি পিসিআর ল্যাবের নমুনা পরীক্ষার পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, গতকাল খুলনা মেডিকেলের ল্যাবে ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৫০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এর মধ্যে খুলনার ৩৯জন, বাগেরহাটের ছয়জন, সাতক্ষীরার দু’জন এবং যশোরের তিনজন রয়েছেন।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিভাগের মধ্যে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় চুয়াডাঙ্গায় গত বছরের ১৯ মার্চ। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় শনাক্ত হয় ৩৫ হাজার ৯৮৪ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৩১ হাজার ৮৫৪ জন আর মৃত্যুবরণ করেন ৬৭২ জন।