কাটা পড়বে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ৪টি সড়কের ১২ কিলোমিটার অংশ

আগামী ১০ বছরের মধ্যে খুলনার পানি, বিদ্যুৎ, টেলিফোন,

ইন্টারনেট, গ্যাস ও পয়ঃনিস্কাশন লাইন যাবে ভূগর্ভ দিয়ে

সেবা সংস্থার খনন কাজে এখনই সমন্বয় না করলে

ভবিষ্যতে জটিলতা আরও বাড়বে

উন্নত বিশ্বের আদলে সড়কের নিচে ইউটিলিটি সার্ভিস

লেন/পাইপ স্থাপনের দাবি

এ এইচ হিমালয় : সড়ক খুঁড়ে খুলনা ওয়াসার পাইপ বসানোর দুর্ভোগ এখনও শেষ হয়নি। যেনতেনভাবে ভরাট করা সড়ক দিয়ে চলাচল করতে এখনও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নগরীর বয়রা এলাকার মানুষ। খালিশপুর এলাকার মানুষের কষ্ট আরও বেশি। ওয়াসার খোঁড়ার পর সড়কটি সংস্কার হয়েছিলো।
কিন্তু ৬ মাসের মধ্যে গ্যাসের পাইপ বসাতে সেই সড়ক আবারও সড়ক খোঁড়ে নর্থ ওয়েস্টার্ন পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল)। প্রায় এক বছর দুর্ভোগ পোহানোর পর ওই সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)।
আশংকার খবর হচ্ছে সংস্কার ও সংস্কারের অপেক্ষায় থাকা এসব সড়কগুলো ফের খোঁড়া শুরু করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। নগরীর খালিশপুর গোয়ালপাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন যাবে বটিয়াঘাটার হোগলাডাঙ্গা উপ-কেন্দ্রে। পুরোটাই যাবে মাটির নিচ দিয়ে।
এজন্য খালিশপুর থেকে নতুন রাস্তা মোড়, সেখান থেকে মুজগুন্নী মহাসড়ক হয়ে বয়রা মোড়, বয়রা মোড় থেকে জলিল স্মরণী হয়ে মোস্তর মোড়, সেখান থেকে রূপসা শহর বাইপাস হয়ে জিরোপয়েন্ট, সেখান থেকে খুলনা-সাতক্ষীরা সড়ক দিয়ে হোগলাডাঙ্গা পর্যন্ত সড়ক খুঁড়তে হবে। গোপালপাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে হোগলাডাঙ্গা উপ-কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার। সড়কের ১ দশমিক ৭৫ মিটার নিচ দিয়ে যাবে বিদ্যুতের তার। এতে প্রতিটি সড়কই গভীরভাবে খুঁড়তে হবে।
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প এবং সংস্থাগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে খুলনার পানি, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, ইন্টারনেট, গ্যাস ও পয়ঃনিস্কাশন লাইন যাবে ভূগর্ভ দিয়ে যাবে। এর মধ্যে ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প ইতোমধ্যে একনেকে অনুমোদন হয়েছে। আগামীবছরই সড়ক খুঁড়ে পয়ঃনিস্কাশন পাইপ বসানোর কাজ শুরু করবে ওয়াসা। এরপর মাটির ওপরের সব বৈদ্যুতিক তার মাটির নিচে নিতে ওজোপাডিকোর একটি প্রকল্পের নকশা তৈরির কাজ চলছে। এর আগে বিটিসিএল টেলিফোন ও ইন্টারনেট ক্যাবল মাটির নিচে দিয়ে নিয়েছে। এই ক্যাবল বাড়ি বাড়ি পৌঁছানোর প্রকল্প আসছে আগামীতে। শিল্প কলকারখানার গ্যাস সংযোগ দিতে বিভিন্ন প্রস্তাব জমা হচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য পৃথকভাবে সড়ক খুঁড়তেই হবে। এ অবস্থায় সরকারি উন্নয়ন কাজে সমন্বয়ের পাশাপাশি সড়কের নিচে ইউটিলিটি সার্ভিস লেন অথবা পাইপ স্থাপনের দাবি জোরালো হচ্ছে।
সূত্রটি জানায়, পৃথিবীর অনেক দেশেই সড়কের নিচে পৃথক পাইপ লাইন থাকে। পানি, বিদ্যুৎ, সুয়্যারেজ, ইন্টারনেটসহ সেবা সংস্থার এই পাইপের ভেতর দিয়ে যায়। যার কারণে সেবা সংস্থার মেরামত কাজের জন্য সড়ক খুঁড়তে হয়। পাইপ লেনের চেম্বার থেকেই সংস্কার করা যায়। এতে অর্থের অপচয় বন্ধ করা যায়, দুর্ভোগও কমে যায়।
এ ব্যাপারে কেসিসির প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও নগর পরিকল্পনাবিদ আবির উল জব্বার বলেন, উন্নয়ন কাজে সমন্বয় না করলে ভবিষ্যতে ভূগর্ভ দিয়ে যাওয়া এসব ইউটিলিটি সার্ভিস লাইন নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে। দেখা যাবে, পানি লাইন মেরামত করতে গিয়ে কেউ বৈদ্যুতিক তার কেটে ফেলছে। ইন্টারনেট লাইন মেরামত করতে গিয়ে কেউ পানির লাইন কেটে ফেলছেন। এজন্য এখন উপযুক্ত সময় সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার।
॥ সড়ক খুঁড়ছে পিডিবি ॥
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (পিডিবি) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর খালিশপুরে নির্মাণ হচ্ছে ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল-ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ যাবে হোগলাডাঙ্গা উপ-কেন্দ্রে। সেজন্যই বর্তমানে সড়ক খোঁড়া হচ্ছে।
প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী কাজী মাসুদ মিয়া পূর্বাঞ্চলকে জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারপাশে আবাসিক এলাকা। সেখানে টাওয়ার বসিয়ে ওপর দিয়ে সঞ্চালন লাইন নেওয়ার সুযোগ নেই। এজন্য মাটির নিচ দিয়ে তার নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে হোগলাডাঙ্গা পর্যন্ত মোট ১২ দশমিক ৬ কিলোমিটার সড়ক খোঁড়া হবে। শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতাল মোড়, নতুন রাস্তা মোড়, বয়রা বাজার, জিরোপয়েন্ট ও খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের নতুন রেললাইন এলাকায় এইচডিডি প্রযুক্তিতে মাটির নিচ থেকে লাইন নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, কাজ শুরুর আগে কেসিসি ও সড়ক বিভাগের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। সড়ক খোঁড়া ও দ্রুত সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণও দেওয়া হবে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী খান বলেন, ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। পিডিবি দিতে সম্মত হয়েছে। তিনি বলেন, মুজগুন্নী মহাসড়ক ও জলিল স্মরণী সংস্কারের জন্য কেসিসির প্রকল্প রয়েছে। পিডিবির কাজ শেষ হলে দ্রুত সড়ক দুটি সংস্কার করা হবে।
নগরীর বয়রা রায়েরমহল এলাকায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ক্লিন-এর কার্যালয়। সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী পূর্বাঞ্চলকে বলেন, ওয়াসা খুঁড়ে রাখার পর গত দুই বছরে জলিল স্মরণি সড়কটি সংস্কার করা হয়নি। অথচ খোঁড়ার আগেই ওয়াসা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে বলে শুনেছি। সড়ক একবার খুঁড়লে আর সংস্কার হয় না। উন্নত বিশ্বে সড়কে সেবা সংস্থার ক্যাবল, পাইপ লাইনের জন্য সার্ভিস লাইন থাকে। সবকিছু ওই লাইনের মধ্য দিয়ে যায়। এতে দুর্ভোগ কমে এবং অর্থ সাশ্রয় হয়।
তিনি বলেন, বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকা হিসেবে বিবেচ্য রায়েরমহলে দেড় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করতে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। নতুন করে সড়ক খোঁড়ার সংবাদে আমরা উদ্বিগ্ন।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, ওয়াসার পর গ্যাস কোম্পানি সড়ক খুঁড়েছে। এখন খুঁড়ছে পিডিবি। এরপর স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জন্য ওয়াসা আবার সড়ক খুঁড়বে। এরপর মাটির ওপরের সব বৈদ্যুতিক তার মাটির নিচে নিতে ওজোপাডিকোর একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। অর্থ্যাৎ সড়ক খোঁড়া এবং সংস্কারের খেলা কবে শেষ হবে কেউ জানে না।
তিনি বলেন, সংস্থাগুলো সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করলে বিপুল পরিমাণ ব্যয়ের সঙ্গে নাগরিক দুর্ভোগ কমানো সম্ভব। এছাড়া শেরে বাংলা সড়কসহ নির্মাণাধীন সড়কের নিচে ইউটিলিটি সার্ভিস পাইপলাইন বসানো যেতে পারে। না হলে কোটি কোটি টাকা নিয়ে সড়ক নির্মাণের আবার ওই সড়ক খোঁড়া অর্থের অপচয় এবং সড়কটি নষ্ট হবে।