পাটকল শ্রমিক স্মরণ সমাবেশে বক্তারা
‘পাটকল রক্ষায় শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদ’-এর উদ্যোগে গতকাল বিকেল ৪টায় পাটকল শ্রমিক স্মরণ সমাবেশ খালিশপুর পিপলস গোল চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়।
স্মরণ সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ থেকে স্বৈরাচারী বিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পাটকল শ্রমিকসহ বহু শ্রমিক জীবন দিয়েছে। তাঁদের আত্মত্যাগ এবং শ্রমের বিনিময় দেশের শাসক শ্রেণির উন্নয়ন হলেও স্বাধীনতার ৪৯ বছরে শ্রমজীবী মানুষেরা এখনও দুঃসহ অবস্থায় জীবন-যাপন করছে। আওয়ামী লীগ সরকার করোনাকালীন সময়ে গত জুন মাসে রাষ্ট্রায়ত্ব ২৫টি পাটকল লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে বিনা নোটিশে বন্ধ করে দিয়েছে। পাটশিল্পে নিয়োজিত প্রায় ৩ কোটি মানুষ কর্মহীন করে বেকার করে দিয়েছে। দেশের ৬টি চিনিকল বন্ধ করে দিয়ে হাজার শ্রমিক ও আখচাষীদের পথে বসিয়েছে। সরকারের ছত্রছায়ায় লুটেরা গোষ্ঠী প্রতি বছর যেখানে এক লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে, সেখানে পাটকলগুলো আধুনিকায়ন না করে ভারতের ব্যবসায়ী এবং দেশীয় লুটেরাদের স্বার্থে মিলগুলো লীজের নামে ব্যক্তির হাতে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। দীর্ঘ ৬ মাস পার হলেও এখন অনেক স্থায়ী, বদলী ও অস্থায়ী শ্রমিকদের বকেয়া মজুরী প্রদান করা হয়নি। শ্রমিকরা যখন তাদের রুটি-রুজির আন্দোলনে নামছে তখনই সরকার প্রশাসন ও পুলিশ দিয়ে হামলা করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে আন্দোলনকে দমন করছে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ও সংগ্রামের মাধ্যমে এ সরকারকে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল খুলতে বাধ্য করতে হবে। পাটকল লোকসানের জন্য দায়ী মাথাভারী প্রশাসন এবং বিজেএমসি’র দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিচারের দাবিতে স্বোচ্ছার হতে হবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, এ রাষ্ট্র ও পুঁজিবাদী সমাজে সব ক্ষমতা বড়লোক শ্রেণির। তারা সমাজের সংখ্যালঘিষ্ঠ হয়ে সংখ্যাগুরু শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষকে শোষণ করছে। এই দুর্বৃত্তায়ন বড়লোক শ্রেণির রাষ্ট্র ও সমাজকে পাল্টিয়ে শ্রমিকশ্রেণির রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাটকলসহ সকল শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের সার্র্বিক মুক্তি সম্ভব। সভাশেষে কবিতা, গণসঙ্গীত, পুঁথি পাঠ এবং নাটক ‘শোষণের যন্ত্র’ প্রদর্শন করা হয়।
শ্রমিকনেতা রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেনÑশ্রমিকনেতা আলমগীর হোসেন, মোশররফ হোসেন, নূর মোহাম্মদ, ইলিয়াস হোসেন, শহিদুল ইসলাম, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল খুলনা জেলা সম্পাদক এম হুমায়ুন কবির, বিপ্লবী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় সভাপতি আতিফ অনীক, ছাত্রনেতা নাঈমুর রহমান, নেওয়াজ মুর্শিদ দোলন, কৃষক-মজুর ফেডারেশন নেতা হংসশুভ্র হালদার, বাংলাদেশ লেখক শিবির খুলনা জেলা সম্পাদক বরত আলী প্রমুখ।
সভার শুরুতে স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে সর্বশেষ মজুরি কমিশনের আন্দোলনে নিহত শহীদ আব্দুস সাত্তার, সোহরাব হোসেনসহ যে সকল শ্রমিকরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের স্মরণে ১ মিনিট দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।-খবরঃ বিজ্ঞপ্তির।