/ কয়রায় জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ৩০টি বিদ্যালয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান

কয়রায় জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ৩০টি বিদ্যালয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান

ওবায়দুল কবির সম্রাট, কয়রা(খুলনা): খুলনার কয়রা উপজেলায় মোট ১৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ, শ্রেণি কক্ষ সংকট, হিসেবে চিহ্নিত করেছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়। কোন ভবনের ছাদে ফাটল। কোনটিতে খসে পড়ছে পলেস্তারা। কোনটিতে বেরিয়ে পড়েছে ভেতরের রড ও ইট। পিলারেও ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আতঙ্কে থাকেন। অতিরিক্ত ভবন বা শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ওই ভবন গুলোগুতেই পাঠদান করতে হচ্ছে প্রায় ৯ হাজার শিশু শিক্ষার্থীদেরকে। ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম। এতে যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনগুলোতে শিক্ষার্থীদেরকে পাঠদান করতে দেখা যায়। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে এসব বিদ্যালয় ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে রড বেরিয়ে গেছে। দরজা-জানালা অনেক আগেই খুলে পড়ে গেছে, কোথাও কোথাও ছাদের বিমেও দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। বর্ষায় ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। যেকোনো মুহূর্তে ভবন ধসে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এরপরও পাঠদান কার্যক্রম চলছে এসব বিদ্যালয়ে। কোন কোন বিদ্যালয়ে অস্থায়ী টিনের শেড তৈরি করে পাঠদান করা হচ্ছে।এছাড়া বিদ্যালয়গুলোতে নেই সিমানা প্রাচীর, নেই উপযুক্ত খেলার মাঠ, বেঞ্চ ও অন্যান্য উপকণেরও অভাব রয়েছে।

অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, পূর্ব চৌকুণি সপ্রাবি, বাঁশখালী সপ্রাবি, মদিনাবাদ মডেল সপ্রাবিও, নাকশা সপ্রাবি, ইসলামপুর সপ্রাবি, জোড়শিং সপ্রাবি, মদিনাবাদ মধ্যপাড়া সপ্রাবি, মহেশ্বরীপুর শেখপাড়া সপ্রাবি, মালিখালী সপ্রাবি, শহিদ এম গফুরা সপ্রাবি, উত্তর মদিনাবাদ সপ্রাবি, চৌকুনি কালিকাপুর সপ্রাবি, বালিয়াডাঙ্গা সপ্রাবি, বেদকাশী বীণাপাণি সপ্রাবি, ২নং কয়রা সপ্রাবি, দক্ষিণ মঠবাড়ী সপ্রাবি, দক্ষিণ হড্ডা পল্লি উন্নয়ন সপ্রাবি, বারোপোতা চটকাতলা সপ্রাবি, গোলখালী সপ্রাবি, দঃ ভাগবা সপ্রাবি, বগা পশ্চিমপাড়া সপ্রাবি, মঠবাড়ী শান্তিময়ী সপ্রাবি, ফরেকাটি নারানপুর সপ্রাবি, মসজিদজুড় সপ্রাবি, কয়রা মনোরমা সহাবি, আউলিয়াঘাটা বেদকাশী বড়বাড়ী সপ্রাবি, মহেশ্বরীপুর সপ্রাবি, গোবরা যাটাখালী সপ্রাবিসহ উপজেলায় ৩০ প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ,কক্ষ স্বল্পতা ও অস্থায়ী শেডে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে। সম্প্রতি ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় থেকে একটু দূরে এক কক্ষের একটি টিনশেড ঘরে ঠাসাঠাসি করে লেখাপড়া করছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আসমা খাতুন, মাসুম বিল্লাহ, হুমাইয়ারা বেগম, আরিফ বিদ্যালয়সহ একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করতে গিয়ে তাদের আতঙ্কে থাকতে হয়। বৃষ্টির সময় পড়ে পানি। গরমে ভোগান্তি। তাছাড়া তারা আরও জানায় পরীক্ষার সময় তাদের পরীক্ষা দিতে খুব কষ্ট হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রধান শিক্ষক বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয়ের ভবন অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ঝুঁকির মধ্যে পাঠদানে শিক্ষার্থীদের কারোই মন বসে না। অনুপস্থিতির সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। কারণ পরিবেশের সাথে পাঠদান কার্যক্রমের একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষা উপকরণ ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সংরক্ষণে রাখতে বেগ পেতে হয়। এ অবস্থায় কোনো রকমে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম শুধু চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তাই যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। তারা দ্রæত নতুন ভবনের দাবি জানান।

১৪নং এস ইসলামপুর সপ্রাবি এর প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান বলেন, বিদ্যালয়টি কয়েকবার উপজেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় হিসাবে স্বীকৃতি পায়। এ বিদ্যালয়ে ভবন সংকট চরমে পৌঁছেছে। বিদ্যালয়ে ৪৯২ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১০-১২টা ক্লাস রুমের প্রয়োজন তার বিপরীতে আছে ২টা পাকা ক্লাস রুম। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ১টি ও উপজেলা পরিষদ থেকে ১টি অস্থায়ী টিনশেড দেয়া ঘরে বর্তমানে ক্লাস নেয়া হচ্ছে খুব কষ্টে। গরমের সময় খুব গরম আবার বৃষ্টির সময় বৃষ্টিতে ভিজে যায় শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়টির ভবন সংকট নিরসনের কথা জানিয়ে দীর্ঘদিন বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করা হলেও মিলছে না কার্যকর সমাধান। তিনি দ্রæত একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান।

কয়রা মদিনাবাদ মডেল সপ্রাবি প্রধান শিক্ষক শহিদ সরোয়ার বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয়ের ভবন সংকট ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শিশুর সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক অভিভাবক ভাল পরিবেশের অভাবে তার সন্তানকে বিদ্যালয়ে না এনে বাসায় পড়ান। জরুরি সংস্কার করে শিক্ষার মৌলিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা না গেলে শিশুরা আরও স্কুল বিমুখ হবে এবং ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।

উপজেলার মদিনাবাদ মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল্লাহ জানান, তার বিদ্যালয়ে একটি ভবন সেই একটি ভবনই খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকার কারণে ওই ভবনতেই শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে হয় বলে জানান তিনি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তপন কুমার কর্মকার বলেন, পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ভবনের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। নতুন বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া বিকল্প উপায়ে পাঠদানের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু বিদ্যালয়ে ইতিমধ্যে অস্থায়ী শেড করা হয়েছে পাঠদানের জন্য৷