মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে বড় ক্ষতি হয়ে গেল ক্রীড়াঙ্গনের। করোনায় বাতিল হয়ে গেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপসহ একাধিক সিরিজ। ফুটবল-হকিসহ অন্যান্য ইভেন্টের অনেক আন্তর্জাতিক, ফ্রাঞ্চাইজি এমনকি ঘরোয়া প্রতিযোগিতাও বন্ধ হয়ে গেছে।

২০০০ সাল থেকে ক্রিকেট বিশ্বে প্রতি বছর গড়ে ৪৫টি টেস্ট ও ১৩৫টি ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। অথচ এ বছর সব দল মিলে ২৫টি টেস্ট এবং ৫০টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে। ১৯৮০ সালের পর এই প্রথম এত কমসংখ্যক ম্যাচ দেখল ক্রিকেট বিশ্ব।

তবে আশার কথা হল করোনার ঝুঁকি এড়িয়ে ধীরে ধীরে মাঠে ফিরছে খেলা। মার্চে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর গত ৮ জুলাই ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার টেস্ট ম্যাচের মধ্য দিয়েই করোনাকালীন খেলা শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি এখনকার চেয়ে আরও খারাপ না হলে নতুন বছরে প্রতিটি দেশই হয়তো পুরোদমে খেলাধুলার আয়োজন করবে।

করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়ে গেল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। এ বছরই রেকর্ডসংখ্যক টেস্ট ম্যাচ খেলার কথা ছিল টাইগারদের কিন্তু করোনায় সেই সুযোগ নষ্ট হয়ে গেছে।

চলতি বছরের এপ্রিলে একটি ওয়ানডে ও একটি টেস্ট ম্যাচ খেলতে পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ দলের। মে মাসে আয়ারল্যান্ড সফরে তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার কথা ছিল। জুনে দুটি টেস্ট খেলতে বাংলাদেশে আসার কথা ছিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার। জুলাই মাসে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে যাওয়ার কথা ছিল শ্রীলংকায়। এরপর আগস্টে দুই টেস্ট খেলতে আসার কথা ছিল নিউজিল্যান্ডের। করোনায় এতগুলো সিরিজ বাতিল হয় যাওয়ায় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

ক্রিকেট বোর্ডের রাজস্ব আয়ের ৫০ ভাগই আসে আইসিসির টুর্নামেন্ট থেকে। সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানে এশিয়া কাপ আর অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনায় তা স্থগিত হওয়ায় দেশের ক্রিকেটের কোষাগারে বড় ধাক্কাই লাগে। শুধু তাই নয়, খেলা না হওয়ায় মাঠের স্পন্সরের পাশাপাশি জার্সির স্পন্সর থেকে রাজস্ব আয় বঞ্চিত বিসিবি। এখন দেখার বিষয় নতুন বছরে এ ক্ষতি কতটা পুষিয়ে নিতে পারে ক্রিকেট বোর্ড।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মতো অন্যান্য ফেডারেশনও অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এ বছর আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপও ছিল কিন্তু করোনায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। গত নভেম্বরে ফিফার অনুমতিসাপেক্ষে নেপালের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ আয়োজন করে বাফুফে। দ্বিপাক্ষিক সেই সিরিজে ১-০ ব্যবধানে জয় পায় স্বাগতিক বাংলাদেশ দল।

নেপাল ম্যাচ দিয়ে ফুটবল মাঠে গড়ালেও মার্চের পর থেকে এখন কোনো বিদেশি দলকে ঢাকায় আনতে পারেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। তবে জানুয়ারিতেই বাংলাদেশ সফরে আসছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল। তারা ঢাকার মাঠে ওয়ানডে ও টেস্ট সিরিজে অংশ নেবে।

করোনাকালীন সিরিজ আয়োজন প্রসঙ্গে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন কিছু দিন আগে বলেছেন, এফটিপিতে এ বছর আমাদের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যেসব সিরিজ ছিল তারা সবাই আমাকে নিশ্চিত করেছে খেলাগুলো হবে। নতুন করে সূচি করতে হবে। শুধু অস্ট্রেলিয়া সিরিজের জন্য সময় বের করা যাচ্ছে না। আর সামনে যে সিরিজগুলো হওয়ার কথা সেগুলো ঠিকই আছে। জানুয়ারিতে বাংলাদেশে আসবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফেব্রুয়ারিতে আমরা নিউজিল্যান্ড যাব। মার্চে আসবে শ্রীলঙ্কা। পরিস্থিতি ভালো থাকলে সিরিজগুলো হবে।