করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির (লকডাউন) প্রথম ৬৬ দিনে (২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে) দেশে ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। এতে করে দেশের জিডিপির ২ লাখ ৯৮ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি সভাপতি ড. আবুল বারকাত।
সোমবার ‘করোনায় মহাবিপর্যয়ে থেকে মুক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ বিনির্মাণে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা’ শীর্ষক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান তিনি।
আবুল বারকাত বলেন, লকডাউনে ৫ কোটি ৯৫ লাখ মানুষের শ্রেণি কাঠামোর পরিবর্তন হয়েছে। নতুন করে ২ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ হতদরিদ্র হয়েছেন। তবে অতি ধনির অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে।
কোভিড-১৯ এর ক্ষয়ক্ষতি তুলে ধরে আবুল বারকাত বলেন, লকডাউনে সেবা খাতে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৬ কোটি, শিল্প খাতের ১ লাখ ২ হাজার ৪১ কোটি এবং কৃষি খাতে ২৬ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ সময় প্রত্যাশিত জিডিপির পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৫৮ হাজার ২৬ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৩৫ শতাংশ। আর ক্ষতি হয়েছে ৬৫ শতাংশ।
করোনার আগে দেশে মোট ৬ কোটি ১ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান ছিল। চাকরির হারানোর মধ্যে সেবা খাতে চাকরি হারিয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ, শিল্প খাতের ৯৩ লাখ এবং কৃষি খাতের ১ কোটি ১৪ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। অন্যদিকে উচ্চ মধ্যবিত্ত ও মধ্য-বিত্তদের মধ্যে থেকে ৫ কোটি ৯৫ লাখ মানুষের আয় কমে দরিদ্র হয়ে গেছেন।
এ অবস্থা থেকে উত্তোলনে নিন্মআয়ের ৪৭ শতাংশ মানুষের জন্য এককালীন ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়ার প্রস্তাব করেন আবুল বারকাত।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট হবে করোনা মোকাবেলার উল্লেখ করে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি সভাপতি বলেন, গ্রাম পর্যায়সহ দেশের ৮২ ভাগ মানুষের কাছে করোনার সেবা পৌঁছায়নি। দায়সারা কাজ হয়েছে। এই মুহূর্তের জন্য প্রয়োজন ছিল শক্তিশালী স্বাস্থ্য সেবা। কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্য সেবা অত্যন্ত নাজুক। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোলনে স্বাস্থ্য খাতের জন্য আগামী বাজেটে ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের কথা জানিয়েছি।
আইএমএফের মতে করোনায় পৃথিবীর ৫০ ভাগ মানুষ জীবিকা হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০২০-২১ অর্থবছরের সংকোচনমূলক বাজেট চাই না, চাই সম্প্রসারণমূলক বাজেট।’
সমিতির সহ-সভাপতি জেড এম সালেহের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক জামালউদ্দিন আহমেদ।