ভারত থেকে অক্সিজেন না
আসলে সংকটের আশংকা

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ করোনাভাইরাসের কারণে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে অক্সিজেনের চাহিদা। খুলনায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ করে মাত্র দু’টি কোম্পানী। এর মধ্যে স্পেক্ট্রা অক্সিজেন লিমিটেড নামের কোম্পানীটি সিংহভাগ অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। এর বাইরেও বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা খুলনা অক্সিজেন কোম্পানীর পক্ষ থেকেও কিছু লিকুইড অক্সিজেন ঢাকা থেকে এনে বোতলজাত করে বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়। বেশিরভাগ অক্সিজেন সরবরাহকারী স্পেক্ট্রা কোম্পানীর হিসাব অনুযায়ী করোনার কারনে খুলনাঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের চাহিদা আগের চেয়ে প্রায় তিনগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হলেও ভারত থেকে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় ভবিষ্যতে সংকটে পড়তে হতে পারে বলে আশংকা সংশ্লিষ্টদের। এছাড়াও চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন মজুদ থাকলেও রয়েছে সিলিন্ডারের সংকট। সুতরাং ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানী নিশ্চিত করা এবং সিলিন্ডার সংকট দূর করতে সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
স্পেক্ট্রা অক্সিজেন কোম্পানীর খুলনা বিক্রয় কেন্দ্রের ভান্ডার কর্মকর্তা সজিব রায়হান বলেন, আগে যেখানে ৬.৮ সাইজের অক্সিজেন সিলিন্ডারের দৈনিক চাহিদা ছিল মাত্র ৮০ থেকে একশ’টির মতো, এখন সেখানে লাগছে দুই শতাধিক। এছাড়া ১.৩৬ সাইজের সিলিন্ডারের দৈনিক চাহিদা আগে ছিল ১৩০ থেকে ১৪০টি, এখন সেখানে লাগছে প্রায় আড়াইশ’টি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে তাদের কোম্পানীতে যে অক্সিজেন মজুদ রয়েছে তাতে আপাতত: ঘাটতি না থাকলেও ভারত থেকে অক্সিজেন সরবরাহ না করা হলে অদূর ভবিষ্যতে সংকটে পড়তে হতে পারে। এজন্য দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়ার জন্যও তিনি দাবি জানান।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা জেনারেল হাসপাতাল, খুলনা ও বাগেরহাট সিভিল সার্জনের আওতাধীন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও খুলনার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও স্পেক্ট্রা কোম্পানী অক্সিজেন সরবরাহ করে বলে তিনি জানান। এর বাইরে লিন্ডে অক্সিজেন কোম্পানী নামের একটি প্রতিষ্ঠান এবং খুলনা অক্সিজেন কোম্পানীও কিছু বোতলজাত অক্সিজেন সরবরাহ করে খুলনাঞ্চলের বিভিন্ন হাসপাতালে। তবে তাদের পরিমান খুবই কম।
খুলনাঞ্চলের হাসপাতালগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এ হাসপাতালে লিন্ডে অক্সিজেন কোম্পানীর পক্ষ থেকে আগেই লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করে দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে প্রথমে অপারেশন থিয়েটার ও পোষ্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড কাম আইসিইউ বিভাগে অক্সিজেন সরবরাহের মাধ্যমে রোগীর সেবা দেয়া হতো। সাম্প্রতিক সময়ে হাসপাতাল অভ্যন্তরে নব নির্মিত আইসিইউ ভবনে ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল স্থাপন করায় সেখানেও পাইপ লাইনের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। যদিও করোনা ইউনিটের জন্য বসুন্ধরা থেকে আনা প্লান্ট স্থাপন সংক্রান্ত মালামাল দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখা হয়েছে। অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রস্তাবনাটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ফেরত দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিজস্ব উদ্যোগে সেটি স্থাপনের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে বলে সংস্থাটির স্থানীয় নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ কর্মকার জানিয়েছেন।
বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারও করোনাভাইরাস আক্রান্তের হালকা উপসর্গ দেখা দিলে দেখতে হবে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে কি না। সর্বোচ্চ ১০০ শতাংশ বা একটু কম থাকলে ঠিক আছে। কিন্তু ৯৫ শতাংশের নিচে নেমে গেলে বুঝতে হবে হাসপাতালে যাওয়া দরকার। আর হাসপাতালে গেলে ওই রোগীকে সিলিন্ডারের অক্সিজেন দিয়ে সাপোর্ট দেয়া সম্ভব না হলে পাইপ লাইনের অক্সিজেন দিতে হয়। এরপর আরও অক্সিজেন প্রয়োজন হলে তাকে হাইফ্লো ন্যাজল ক্যানোলা মাধ্যমে অক্সিজেন দিয়ে শ^াস-প্রশ^াস নিতে সহায়তা করা হয়। সর্বশেষ রোগীকে নেয়া হয় আইসিইউতে। এসব ক্ষেত্রে প্রচুর অক্সিজেনের প্রয়োজন বলেও বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
খুমেক হাসপাতাল থেকে সদ্য অবসর গ্রহণকারী এনেসথেসিয়া বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা: শেখ মো: ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, খুমেক হাসপাতালে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বসুন্ধরা থেকে আনা ফেলে রাখা স্পেক্ট্রা কোম্পানীর প্লান্টটি স্থাপন করা। তাহলে হয়তো রোগীদের অনেকটা সাপোর্ট দেয়া সম্ভব হবে।
খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও) এবং করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মুখপাত্র ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, করোনা রোগীদের জন্য বেড সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি অবশ্যই অক্সিজেন সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করা উচিত। তা না হলে রোগীদের সেবা দেয়া দু:সাধ্য হয়ে পড়তে পারে।
উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণ চলাকালীন শিল্প প্রতিষ্ঠানে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। বিস্ফোরক পরিদফতরের নির্দেশের ভিত্তিতে শিল্প কারখানায় এখন সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ বলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। গত ২৩ এপ্রিল প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত নির্দেশে বলা হয়, শুধু হাসপাতাল-ক্লিনিকে মেডিক্যাল অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে।