শেষ বেলায়ও দেখা
হলোনা পিতা-পুত্রের

স্টাফ রিপোর্টার ঃ করোনায় আক্রান্ত হয়ে পিতা এক হাসপাতালে আর একমাত্র পুত্র অন্য হাসপাতালে। শেষ পর্যন্ত করোনার কাছে হেরে গেলেন পিতা। মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে। পিতা এক সময়ের বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকসাইটে নেতা ছিলেন। নাম আবুল হোসেন চৌধুরী। বুধবার দিবাগত রাত ১০টা ৪২ মিনিটে যখন তার মৃত্যু হয় তখন একমাত্র পুত্র প্রকৌশলী রিয়াদ হোসেন চৌধুরী চিকিৎসাধীন ছিলেন নগরীর সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পিতার মৃত্যুর পর লাশ নেয়া হয় গ্রামের বাড়িতে। জানাজা-দাফন সবই হয় কিন্তু পিতার জানাজা-দাফনে অংশ নিতে পারেননি একমাত্র প্রকৌশলী পত্র। অর্থাৎ শেষ বেলায়ও দেখা হলোনা পিতা-পুত্রের।
মৃত্যুকালে আবুল হোসেন চৌধুরীর বয়স হয়েছিল ৬৬বছর। তার স্ত্রী, এক পুত্র ও দুই কন্যাসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন। তার একমাত্র পুত্র বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ও পুত্রবধূ চিকিৎসক।
আবুল হোসেন চৌধুরী শুধু খুলনাঞ্চলের বিদ্যুৎ শ্রমিকদেরই নেতা বা অভিভাবক ছিলেন না, বরং দেশব্যাপী তার খ্যাতি ছিল। এক সময় আবুল হোসেন চৌধুরী এই নামটিই ছিল অনেকের কাছে একটি পরিচিত মুখ। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে এসবিএ হিসেবে চাকরীতে যোগদান করলেও পরে বিউবো ভেঙ্গে যখন কোম্পানী করা হয় তখন তিনি যোগ দেন ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানীতে। কোম্পানী থেকেই অবসরগ্রহণ করেন প্রবীন এই শ্রমিক নেতা। অবসরগ্রহণ করলেও শেষ পর্যন্তই তিনি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ওজোপাডিকো বিদ্যুৎ শ্রমিক কর্মচারী লীগ বি-২১৩৮এর।
ওই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ আলমগীর বলেন, আবুল হোসেন চৌধুরী আমৃত্যু ২১৩৮এর কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি তাদের অভিভাবক হিসেবে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। বুধবার দিবাগত রাত ১০টা ৪২ মিনিটে খুমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হলে তার ভাইসহ আত্মীয়-স্বজনরা তাকে প্রথমে নগরীর মুজগুন্নি আবাসিক এলাকার বাসভবনে নেন এবং পরে তাকে রাতেই নেয়া হয় তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের শিবচরের সূর্যনগর গ্রামে। গতকাল সকালে নামাজে জানাজা শেষে সেখানেই পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। আবুল হোসেন চৌধুরীর একমাত্র প্রকৌশলী পুত্র যেমন করোনা আক্রান্ত হয়ে অন্য হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তেমনি তার ছোট মেয়েও জামাইসহ অবস্থান করছেন জাপানে। মৃত্যুকালে বড় মেয়ে ও জামাতা এবং অন্যান্য ভাইয়েরাই ছিলেন তার লাশের সঙ্গী।
শ্রমিক নেতা শেখ আলমগীর আরও বলেন, আবুল হোসেন চৌধুরী ছিলেন সকলের কাছেই শ্রদ্ধার একজন ব্যক্তিত্ব। সাংগঠনিকভাবে তিনি ছিলেন একজন দক্ষ অভিভাবক। এক সময় বিউবো’র শ্রমিক সংগঠন একতা সংঘ শ্রমিক সংঘের নির্বাচিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। পরে বিউবো’র শ্রমিক সংগঠন জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগ বি-১৯০২এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওজোপাডিকো গঠনের পর বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন ওজোপাডিকো বিদ্যুৎ শ্রমিক কর্মচারী লীগ বি-২১৩৮এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি এবং খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ওই দায়িত্বে থাকা অবস্থায়ই তিনি চাকরী জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। কিন্তু ওজোপাডিকোর সিবিএ নির্বাচনের সময় যে কমিটি ছিল সেই কমিটির প্রধান উপদেষ্টা করা হয় তাকে। তার নির্দেশনা নিয়েই বর্তমান নেতৃত্ব পরিচালিত হচ্ছিল। শেখ আলমগীর বলেন, আবুল হোসেন চৌধুরীর মৃত্যুতে খুলনার বিদ্যুৎ শ্রমিকরা সত্যিকারের একজন অভিভাবক হারালো। এজন্য তিনি তার জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন।
ওজোপাডিকো বিদ্যুৎ শ্রমিক কর্মচারী লীগ বি-২১৩৮এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সৈয়দ তারিকুল ইসলাম বলেন, বিগত একমাস আগে আবুল হোসেন চৌধুরীর সাথে তার কথা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার শরীরটা বেশি ভালো যাচ্ছে না, কিডনি সমস্যা রয়েছে। যদি আমার মৃত্যু হয় সবাইকে বলবেন আমাকে যেন ক্ষমা করে দেন’। এজন্য তিনিও মরহুমের জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করেছেন।
দোয়া মাহফিল ঃ ওজোপাডিকো বিদ্যুৎ শ্রমিক কর্মচারী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান উপদেষ্টা আবুল হোসেন চৌধুরীর মৃত্যুতে সংগঠনের পক্ষ থেকে আজ শুক্রবার সকাল থেকে কোরান খতম ও বাদ জুম্মান নগরীর শেরে বাংলা রোডস্থ ওজোপাডিকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১এর জামে মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট সকলকে উপস্থিত থাকার আহবান জানিয়েছেন ২১৩৮এর কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ তারিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আলমগীর।