স্টাফ রিপোর্টার ঃ করোনায় মৃত্যুহার ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় বিগত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু হয়েছে ৬০ জনের। যেটি বিগত দেড় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আবার সংক্রমণের হারও বেড়েছে। আগের যে কোন দিনের চেয়ে বিগত ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তর জানিয়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকেই যাচ্ছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: রাশেদা সুলতানা গতকাল সকালে জানান, বিগত ২৪ ঘন্টায় বিভাগের ১০ জেলায় যে ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে তার মধ্যে খুলনারই রয়েছে ২১জন। সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল কুষ্টিয়া অর্থাৎ ১১জন। এছাড়া ঝিনাইদহে ৭, যশোর ৬, চুয়াডাঙ্গায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়। শুধুমাত্র সাতক্ষীরা ছাড়া বিগত ২৪ ঘন্টায় বিভাগের অন্য সব জেলায়ই করোনায় মৃত্যু হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি জানান, বিগত ২৪ ঘন্টায় বিভাগে করোনা শনাক্ত হয়েছে এক হাজার নয়শ’ জনের। এ নিয়ে বিভাগে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৭৯৯জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৪৩ হাজার ৩৭৮জন আর মোট মৃত্যুবরণ করেন এক হাজার ৩৬৫জন।
চার হাসপাতালে ২১ মৃত্যু ঃ খুলনার তিনটি সরকারি ও একটি বেসরকারি হাসপাতালে বিগত ২৪ ঘন্টায় মোট ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে গতকাল সকালে জানানো হয়েছে। আবার মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে গতকাল বুধবার রাত সোয়া আটটা পর্যন্ত শুধুমাত্র খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয় বলে হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
খুমেক করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মুখপাত্র ডাঃ সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, সেখানে বিগত ২৪ ঘণ্টায় নয় জনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন, বাগেরহাটের ফকিরহাটের সুনীল রায় (৭৫), বটিয়াঘাটার নারায়ন চন্দ্র (৮০), যশোরের ঝুমুর বেগম (৪৫), নড়াইলের এসএম বোরহান (৪৫), যশোরের কেশবপুরের সুকান্ত কুন্ডু (৫৫), সোনাডাঙ্গার ঝর্ণা বেগম (৬০), বাগেরহাটের আব্দুল হামিদ (৮৭), কেশবপুরের শরিফা (২৭) ও লবণচরার রুমানা বেগম (৭১)।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা: কাজী আবু রাশেদ বলেন, সেখানে বিগত ২৪ ঘন্টায় পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। এরা হলেন, নগরীর সোনাডাঙ্গার রেজাউল (৭০), তেরখাদার আকলিমা (৭৫), যশোরের পদ্মা রাণী (৬৪), বাগেরহাটের প্রভু নাথ (৫০) ও রামপালের রুহিকরণ (৬০),
শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডাঃ প্রকাশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, সেখানে বিগত ২৪ ঘণ্টায় পাইকগাছার আব্দুল হালিম (৫০) ও সাতক্ষীরার শেখ আব্দুল মজিদ (৬৫) নামের দু’জনের মৃত্যু হয়।
বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ গাজী মিজানুর রহমান বলেন, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২৪ ঘন্টায় পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। এরা হলেন, নগরীর মুসলমান পাড়ার নাসরিন আরা বেগম (৪৫), সোনাডাঙ্গার আব্দুল হাই (৬৭), নড়াইলের লুৎফুর রহমান (৬২), ডুমুরিয়ার উম্মে কুলসুম (৭০) ও টুটপাড়ার নাসিমা বেগম (৪৬)।
এক দিনে এক হাসপাতালেই ৫জনের মৃত্যু ঃ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটা ৫০ মিনিট থেকে গতকাল রাত সোয়া আটটা পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বলে সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়। এরা হলেন, যশোরের কেশবপুরের শরিফা খাতুন(২৭), খুলনার রূপসা উপজেলার মকবুল খা(৮০), নগরীর সদর থানা এলাকার মাহবুবুর রহমান(৫৫), নগরীর লবণ চরা এলাকার নিলুফা ইয়াসমিন(৪০) এবং খুলনার ফুলতলার দীপক কুমার দে(৬২)।
খুমেক ল্যাবে শনাক্ত ১৬২ জন ঃ খুলনা মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবে গতকাল বুধবার ৩৭৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৬২জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে বলে কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ জানিয়েছেন। এর মধ্যে খুলনার ১১৮জন, বাগেরহাটের ২৭জন, যশোরের পাঁচজন, নড়াইলের দু’জন, গোপালগঞ্জের একজন, পিরোজপুরের একজন এবং ঝিনাইদহের আটজন রয়েছেন বলেও তিনি জানান।