প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে খুলনায় একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য সংসদে ‘শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিল-২০২১’ পাস হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) সংসদে বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

এ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হলে দেশে এধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হবে পাঁচটি। এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে খুলনা অঞ্চলের মধ্যে যত মেডিকেল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট বা অন্যান্য চিকিৎসা সংক্রান্ত ইনস্টিটিউট আছে সবই খুলনা শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলে আসবে। বিলে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, এখতিয়ার এবং ক্ষমতার বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে চিকিৎসা শাস্ত্রে মানোন্নয়নে উচ্চ শিক্ষা, গবেষণা, আধুনিক জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্র সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সময়ের প্রয়োজনে এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা অতি প্রয়োজনীয় ও যুক্তিযুক্ত।

বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো উত্থাপনের সময় বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) এবং বিএনপির সংসদ সদস্যরা স্বাস্থ্যখাতের সমালোচনা করেন। বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, নাম ও কামের মিল থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর নামে যে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টি হয়েছে, সেটি কোনো গ্রেডেই নেই। দলীয় পরিচয়ে নিয়োগ করা হয়। তিনি বলেন, মন্ত্রী ১১২টি মেডিকেল কলেজের তথ্য দিলেন। কিন্তু এর কোয়ালিটি কী? সংখ্যা দিয়ে কী করব, যদি মান না থাকে? করোনার ভ্যাকসিন কত দামে কিনলাম? বাণিজ্য হচ্ছে কিনা জানা দরকার। হাসপাতালগুলোতে ডাক্তাররা ঠিকমত কাজ করছে কিনা? ডিউটির সময় অন্য জায়গায় প্র্যাকটিস করে। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বসে হাসপাতালের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুর্নীতির ডিপো হয়ে গেছে।

বিএনপির সংরিক্ষত আসনের রুমিন ফারহানা বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় করে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হয়ত কমবে। কিন্তু স্বাস্থ্যখাতে অপ্রতুল বরাদ্দ, চরম দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা সেগুলো কী কমবে? ব্যক্তিখাতে চিকিৎসার খরচ বাংলাদেশে বাড়ছে।

জাপার পীর ফজলুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণায় বেশি আত্মনিয়োগ করা উচিত। বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে বিশেষ করে বিশেষায়িত সেবার ক্ষেত্রে মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। দুর্নীতি কমানো দরকার। মন্ত্রণালয়ের কাজে স্বচ্ছতা দরকার।

গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি সংবাদে আসছে। কারা করছে? এই দুঃসাহস কীভাবে পায়? যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সব দোষ আসে মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে। কিন্তু আমলাদের কিছু হয় না। তারা এত শক্তিশালী! অথচ দুর্নীতি হয় প্রকল্প পরিচালক লেভেলে। আজ পর্যন্ত একজন সচিব বা প্রকল্প পরিচালকের কিছু হয়নি।

এসব কথার জবাব দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্যখাতের অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, চিকিৎসা সুরক্ষা আইন খুব তাড়াতাড়ি সংসদে আনবো। অনেকে বলে করোনায় অব্যবস্থা। কেউ কিছুই জানতো না। যখন জানা গেল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। করোনাকালে রোগীর পেছনে প্রতিদিন ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যারা আইসিইউতে ছিল, ৫০ হাজার টাকা প্রতিদিন খরচ করেছে। আমরা কাউকে ছাড় দিইনি। সবচেয়ে কম দামে ভ্যাকসিন পেয়েছি। চুক্তিতে আছে ভারত যে দামে টিকা নেবে আমাদেরও সেই দামে দেবে। ত্রিপক্ষীয় চুক্তি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডেন্স অনুযায়ী আমরা করোনা ফেইজ আউট পর্যায়ে চলে আসছি। আমাদের এখন ৩ শতাংশ সংক্রমণের হার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডেন্সে বলে ৩ শতাংশের নিচে যখন আসতে থাকে তখন করোনা আস্তে আস্তে দেশ থেকে ফেজ আউট হয়ে যায়। কাজেই সেই পর্যায়ে চলে আসছি।