লিফট নেই, সিঁড়ি দিয়ে রোগী
ওঠাতে হবে চার তলা পর্যন্ত

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ আজকের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে সব রোগী। তবে সার্জারী করা কয়েকজনকে পোষ্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে আরও কয়েকদিন রাখা লাগতে পারে। নতুন ভবনে যেখানে ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল করা হবে সেখানে বেশকিছু বেড গতকাল বসানো হয়েছে। বাকী বেডগুলো আজকের মধ্যে হয়তো বসানো হবে। সাইনবোর্ডও তৈরি হবে শীঘ্রই। আগেই স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে বসানো হয়েছে অক্সিজেন প্লান্ট। আগামী রোববার বা সোমবার থেকে এখানে রোগী ভর্তি করার জন্য চেষ্টা চলছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
এভাবেই ঐতিহ্যবাহী খুলনা জেনারেল হাসপাতালকে ব্যবহার উপযোগী করা হচ্ছে করোনার রোগীদের জন্য। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটকে ১৩০ বেডে উন্নীত করার পর খুলনায় এটি হবে করোনা হাসপাতালের আরও একটি ইউনিট। এখানে থাকবে ৭০ বেড। অর্থাৎ খুলনায় করোনা রোগীদের জন্য এই ২শ’ বেডের ব্যবস্থা আপাতত: হচ্ছে। রোগীর চাপ যে হারে বাড়ছে তাতে এতেও সংকুলানা হয় কি না সেটি যেমন চিন্তার তেমনি জেনারেল হাসপাতালে অন্যান্য রোগীদের সেবাও বন্ধ হওয়ায় ভিড় বাড়বে খুমেক হাসপাতালে। যেটি সেখানকার প্রশাসনের জন্য আর একটি বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালের নাম আপাতত: পরিবর্তন হয়ে করা হবে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল। এমনটিই জানিয়েছেন এখানকার মুখপাত্র ডা: কাজী আবু রাশেদ। যিনি এ হাসপাতালের নাক-কান-গলা(ইএনটি) বিভাগের কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, এখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত। তার মধ্যেও করোনা হাসপাতালের কার্যক্রম করতে হচ্ছে। কেবল রোগী ছেড়ে দিয়ে হাসপাতাল খালি করা হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত বেশকিছু রোগী ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আজকের মধ্যে পুরোপুরি খালি করা হবে হাসপাতাল। এরপর করোনার রোগীদের জন্য ৭০টি বেড বসিয়ে ডেডিকেটেড হাসপাতালের জন্য উপযোগী করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অবশ্য খুলনা জেনারেল হাসপাতালের যে ভবনে করোনা রোগীদের রাখা হবে সেখানে কোন লিফট নেই। চার তলা পর্যন্ত প্রতিটি তলায়ই রাখা হবে রোগী। কিভাবে রোগী নিয়ে ওঠানামা করা হবে সেটি নিয়েও শংকিত অনেকে। তাছাড়া এখানে করোনার উপসর্গ নিয়ে কাউকে ভর্তি করা হবে না। শুধুমাত্র পরীক্ষার পর পর যাদের করোনা শনাক্ত হবে তাদেরকেই রাখা হবে। আবার এর মধ্যে যদি কারও আইসিইউ বা এইচডিইউ’র প্রয়োজন হয় তখন তাকে নিতে হবে খুমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে। যেটি আরও একটি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
এ প্রসঙ্গে খুলনার সিভিল সার্জন এবং জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, আইসিইউ-এইচডিইউ প্রয়োজন হবে এমন কোন রোগীকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হবে না। শুধুমাত্র খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের সাথে সমন্বয় করে করোনা পজেটিভ তবে তুলনামূলক ঝুঁকিমুক্ত এমন রোগীদেরই এখানে রাখা হবে। এটি করা হচ্ছে শুধুমাত্র খুমেক হাসপাতালে সংকুলান হচ্ছে না বলে।
করোনা হাসপাতালের জন্য প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, সকল জনবলকে নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বৈঠক হয়েছে। যেখানে সকলকে একটি সংক্ষিপ্ত ওরিয়েন্টেশন দেয়া হয়। যেখানে খুমেক হাসপাতালের অভিজ্ঞজনেরাও ছিলেন। গতরাতের মধ্যে এ হাসপাতালের সব রোগীকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টিও সকলকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আগেই জরুরি বিভাগের সামনে নোটিশ দিয়ে ভর্তি কার্যক্রম আপাতত: বন্ধ রাখার কথা জনসাধারণকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এখানে করোনা ছাড়া অন্য রোগী ভর্তি বা বহি:বিভাগেও সেবা দেয়া হবে না। তবে করোনার প্রভাব কমলে আবারো সাধারণ রোগী ভর্তি করা হবে বলেও তিনি জানান। সবদিক দিয়ে উপযোগী করে আগামী রোববার নাগাদ করোনা রোগীদের ভর্তি করা হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একান্ত যদি সম্ভব না হয় তাহলে সোমবার থেকে ভর্তি করে করোনা রোগীদের সেবা দেয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে, কাগজে-কলমে আড়াইশ’ শয্যা থাকলেও খুলনা জেনারেল হাসপাতালে জনবল আছে মাত্র একশ’ শয্যার। ১৯৩৫ সালে স্থাপিত এ হাসপাতালটি ৫০ শয্যা দিয়ে প্রথমে যাত্রা শুরু করে। এরপর একশ’ শয্যা, তারপর দেড়শ’ শয্যা এবং সর্বশেষ আড়াইশ’ শয্যা ঘোষণা দিয়ে চলছে এর কার্যক্রম। পুরাতন কয়েকটি ভবন ভেঙ্গে দিয়ে বর্তমানে সেখানে ১২তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ কাজ করছে খুলনার গণপূর্ত অধিদপ্তর। শহরের একেবারেই প্রাণকেন্দ্রে বলে এখানে এক সময় সংক্রামকব্যাধি হাসপাতাল থাকলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জনস্বার্থে সেটি স্থানান্তর করা হয়। যার কার্যক্রম চলছে নগরীর ফুলবাড়িগেটে। সংক্রামকব্যাধির চেয়েও সাম্প্রতিককালের করোনাভাইরাস মহামারী রূপ ধারণ করেছে। কিন্তু অন্য কোথাও জায়গা না পাওয়ায় জনবহুল এলাকার এ হাসপাতালটিকেই করতে হচ্ছে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল। ঝুঁকি থাকলেও করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবাকে প্রাধান্য দেয়ার লক্ষ্যেই এ সিদ্ধান্ত বলে খুলনার সিভিল সার্জন জানিয়েছেন।