‘বেড না থাকলে করোনা
হাসপাতালে ভর্তি নয়’

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিনশ’তে। আর বিভাগের ১০ জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীর সংখ্যা সাতশ’ ছাড়ালো। বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় খুলনায়।
এদিকে, বেড না থাকায় খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোগী ভর্তির ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। আগে যেখানে রোগী আসলেই ভর্তি করে অতিরিক্ত বেড দেয়া হতো গতকাল থেকে বেড খালি না থাকলে রোগী ভর্তি করা হবে না মর্মে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে কেউ ফ্লোরে থাকতে রাজী হলে তাকে ভর্তি করা হবে বলে করোনা হাসপাতালের মুখপাত্র ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার জানিয়েছেন। গতকাল সকালে করোনা হাসপাতালের রিপোর্টে ১৪৩জন ভর্তির তথ্য দেয়া হয়। যেটি এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া বৃহস্পতিবার রাতে এ হাসপাতালে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।
খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের যাত্রা শুরুর পর থেকে দেড় বছরের মধ্যে গত ছয় মাসেই অর্ধেকেরও বেশি রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গত বছর এপ্রিল মাস থেকে নূর নগরের ডায়াবেটিক হাসপাতালে করোনা হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়ে নভেম্বর পর্যন্ত চলছিল। ওই আট মাসে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪৮ জনের মৃত্যু হয়। এরপর থেকে খুমেক হাসপাতালের আইসিইউ ভবনে করোনা হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়ে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটা পর্যন্ত অর্থাৎ সাড়ে ছয় মাসে মৃত্যু হয়েছে ১৫৩জনের। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টায় মৃত্যুবরণ করেন সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের রতনপুরের মনিন্দ্র নাথ ঘোষ(৫৫), রাত সাড়ে নয়টায় মৃত্যুবরণ করেন বাগেরহাটের মংলার দিগরাজের মরিয়ম বেগম(৭৩) এবং গতকাল সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় মৃত্যুবরণ করেন, মংলার জয়মনির মঈনুদ্দিন শেখ(৬৫)। এ তিন জনের মৃত্যুর মধ্যদিয়েই করোনা হাসপাতালে মৃত্যুর তালিকা তিনশ’ ছাড়ালো।
এছাড়া খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের দৈনন্দিন করোনা বিষয়ক প্রতিবেদনেও গতকাল সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় ৭০১ জনের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর মার্চ থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় যে ৭০১ জনের মৃত্যু হয় তার মধ্যে খুলনারই রয়েছেন ১৯২ জন। এছাড়া মৃত্যুর দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কুষ্টিয়া অর্থাৎ ১২৭জন। অন্যান্য জেলার মধ্যে যশোর ৮৫, চুয়াডাঙ্গা ৬৪, ঝিনাইদহ ৫৭, বাগেরহাট ৫৩, সাতক্ষীরা ৫০, নড়াইল ২৭ এবং মাগুরা ও মেহেরপুরে ২৩জন করে মারা গেছেন।
বিভাগীয় করোনা বিষয়ক তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৮ হাজার ৬৮৯ জনের। এর মধ্যে ইতোমধ্যে সুস্থ্য হয়েছেন ৩২ হাজার ৭৩৬জন। গত ২৪ ঘন্টায় বিভাগের ১০ জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫৯৯জনের এবং সুস্থ্য হয়েছেন ২০৪জন।
খুলনা মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবে গতকাল শুক্রবার ৩৭৬টি নমুনা পরীক্ষার পর ১৩৫জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে খুলনার ১১৬জন, বাগেরহাটের ১৩জন, সাতক্ষীরার তিনজন, যশোরের দু’জন এবং পিরোজপুরের একজন রয়েছেন। খুলনা মেডিকেলের পিসিআর ল্যাবে করোনা শনাক্তের গতকালকের হার ছিল ৩৫ দশমিক ৯০ শতাংশ।
অপরদিকে, খুলনায় করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুহার দিন দিন বেড়ে চলার ফলে স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি প্রশাসনের মধ্যেও ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। করোনা সংক্রান্ত জেলা কমিটির গতকালকের বৈঠক থেকে খুলনার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আসার আহবান জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। যাতে তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারেন। ওই সভা থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশাপাশি খুলনা জেনারেল হাসপাতালকেও পূর্ণাঙ্গ কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সভায় জানানো হয়, খুমেক হাসপাতালের আওতাধীন ১০০ বেডের করোনা হাসপাতালে বর্তমানে ১৪৩ জন রোগী থাকার জন্য জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে সেখানের স্বাস্থ্যসেবা বিঘিœত হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন যে হারে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে তা’ পরীক্ষার জন্য একমাত্র খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবের পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও একটি আরটি পিসিআর ল্যাব চালু করা যায় কি না তার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল আজ শনিবার খুবিতে যাবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত হয়।