অশোক মুখার্জি, কলাপাড়া(পটুয়াখালী): কলাপাড়া সরকারী মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজের শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি অনিয়ম, বিপুল সম্পদ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
গত মঙ্গলবার দুদক, পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক তানভির আহমেদের নেতৃত্বে দুদকের একটি অনুসন্ধান টিম দিনভর মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজে অবস্থান করে কলেজের দুর্নীতি-অনিয়ম, বিপুল সম্পদ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করে। টিমের সদস্যরা কলেজের ক্যাম্পাস পরিদর্শন শেষে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে গিয়ে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ফাইল, অর্থ সংক্রান্ত হিসাব-নিকাশ পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন বলে জানিয়েছে কলেজের একটি সূত্র।
এদিকে, সরকারী মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজের অধ্যক্ষ ড. ফাতেমা হেরেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের আকস্মিক কলেজ পরিদর্শন ও তদন্তের সত্যতা স্বীকার করলেও কলেজের দুর্নীতি অনিয়ম ও অর্থ-সম্পদ আত্মসাতের ঘটনা তাঁর আমলের না বলে দাবি করেন।
অভিযোগ রয়েছে, পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে কলেজের পুরাতন ৩ তলা বিশিষ্ট সাইক্লোন সেন্টার ও দ্বিতল টিন শেড ব্যবহার যোগ্য অধ্যক্ষ কোয়াটার বিক্রী করে ১৭ লক্ষ টাকা আত্মসাত, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্র ফি’র ৩ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা, অনার্স শাখার বিভিন্ন বিভাগের ৪০ লক্ষ টাকা দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সাবেক অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে।
এছাড়া কলেজের উন্নয়নে ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে পিআইও অফিস ও ডিসি অফিস থেকে সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত ১ লক্ষ ৬৯ হাজার টাকা, কলেজ উপাধ্যক্ষ বাসগৃহের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করন প্রকল্পে জেলা পরিষদ, পটুয়াখালী থেকে বরাদ্দকৃত ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা, কলেজ অডিটোরিয়াম নির্মাণের জন্য ২০ লক্ষ টাকার কাজে অনিয়ম, কলেজের শ্রেনিকক্ষ উন্নয়ন ও আসবাবপত্র মেরামত ও সংস্কারের ২ টন চাল, কলেজ জামে মসজিদ, ছাত্রাবাস, ছাত্রাবাস রান্নাঘর ও শিক্ষক ম্যাচ সংস্কার এবং মেরামত প্রকল্পের জেলা পরিষদের বরাদ্দকৃত ৪ লক্ষ সরকারী অনুদানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে কলেজের শিক্ষার্থী মো. মিজানুর রহমান একটি মামলা দায়ের করেন।
২০২৩ সালের ২২ মার্চ পটুয়াখালী সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে এ মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলায় সাবেক অধ্যক্ষ দোলোয়ার হোসেন, সাবেক অধ্যক্ষ লিয়াকত মোল্লা, উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার মো. মনিরুজ্জামানসহ অজ্ঞাত নামা ৮/৯ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
পরে ওই বছরের ৪ এপ্রিল পটুয়াখালী সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক (ভারপ্রাপ্ত) একেএম এনামুল করিম মামলার অভিযোগের বিষয়ে দুদক, মহাপরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত), সেগুন বাগিচা, ঢাকাকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
আদালতের নির্দেশে দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে সমন্বিত জেলা কার্যালয়, পটুয়াখালীকে অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগের অভিযুক্ত নেতাদের তদ্বিরে মামলাটি স্থিতি অবস্থায় থাকার পর ফের সচল হয়েছে। তবে আসামীদের মধ্যে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুবুর রহমান ইতোমধ্যে পরলোক গমন করেছেন এবং অন্যরা বর্তমানে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন।
দুদক, পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক তানভির আহমেদ বলেন, ’সরকারী মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজের দুর্নীতি, অনিয়মের বিষয়ে আমাদের তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। দ্রæত আমরা রিপোর্ট দিয়ে দেবো। প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে পরবর্তী আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে।