ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।

কমিটির প্রধান সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব তরুণ কান্তি শিকদার বুধবার যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তদন্তের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করে অতিরিক্ত সচিব বলেন, প্রতিবেদনটি সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব স্যারকে দেওয়া হয়েছে। উনি তা মন্ত্রী মহোদয়কে দেবেন। পরে এ বিষয়ে মন্ত্রী মহোদয় কাল (বৃহস্পতিবার) গণমাধ্যমে ব্রিফ করতে পারেন।

এর আগে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে যা উঠে আসবে- তা জানিয়ে দেওয়া হবে।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের ভেতরেই মুশতাক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে কারা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত ৮টা ২০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মুশতাক নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার ছোট বালাপুর এলাকার মো. আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। ঢাকা মেট্রোপলিটনের রমনা মডেল থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গত বছরের ৬ মে ঢাকা জেলে এবং পরে ২৪ আগস্ট থেকে তিনি কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন।

তার আকস্মিক এই মৃত্যু নিয়ে নানামহলে প্রশ্ন উঠে। বিষয়টি তদন্ত করতে বিভিন্ন সংগঠন দাবি জানায়। পরদিন শুক্রবার মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর কারণ জানতে ‘প্রয়োজনে’ তদন্ত কমিটি করা হবে বলে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এর পরদিন শনিবার লেখক মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের গাফিলতি ছিল কি না, তা খুঁজে বের করে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব তরুণ কান্তি শিকদারকে প্রধান করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এছাড়া কমিটির সদস্য করা হয় গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল কালাম, ময়মনসিংহের কারা উপমহাপরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবির ও গাজীপুর জেলা কারাগারের সহকারী সার্জন ডা. কামরুন নাহারকে। কমিটির সদস্য সচিব করা হয় সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব আরিফ আহমদকে। কমিটিকে চার কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

তদন্ত কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, মুশতাক আহমেদ কারাগারে আসার পর তার কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ অবহিত ছিল কি না, যদি থাকে সে বিষয়ে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কি না, যদি না হয়ে থাকে তবে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। কমিটি তার নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিল।