স্থানীয়দের আশংকা, অর্থ ব্যয় হলেও জলাবদ্ধতা কমবে না

এ এইচ হিমালয় : সামান্য বৃষ্টি হলেই খুলনার গুরুত্বপূর্ণ কেডিএ অ্যাভিনিউতে হাঁটু পানি জমে যায়। বর্ষার পুরো সময়টাই দুর্ভোগের শেষ থাকে না ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করা হাজারো মানুষ এবং পূর্বপাশের বাসিন্দাদের। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সড়কটির দুই পাশে চওড়া ড্রেন নির্মাণ এবং দ্রুত পানি নিষ্কাশনে চারটি কালভার্ট নির্মাণ করছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। এতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১৩ কোটি টাকা।
এদিকে পানি নিস্কাশনের এসব ড্রেন ও কালভার্টের নকশা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন ওই এলাকার মানুষ। তাদের দাবি, তেঁতুলতলা মোড়ের যেই অংশ দিয়ে ৮০ ভাগ পানি নিষ্কাশন হয় সেখানে কালভার্ট হচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় ছোট। আর যে সব অংশ দিয়ে অল্প পানি নিষ্কাশন হয়-ওই সব এলাকায় কালভার্ট হচ্ছে বড়। ফলে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হবে। বৃষ্টি হলেই ড্রেন উপচে পানি চলে আসবে সড়কে। পুরাতন সেই দুর্ভোগ থেকেই যাবে।
কেসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, কেডিএ অ্যাভিনিউয়ের শিববাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু চত্বরের (ময়লাপোতা মোড়) পূর্বপাশ কেসিসির ২০ নম্বর ওয়ার্ডের ভেতরে পড়েছে। ওই ওয়ার্ডের শিববাড়ি মোড়, বাগান বাড়ি, পুরাতন শেখপাড়া, আবুল সড়ক, সঙ্গীতা মোড়, লোহাপট্টি, শেখপাড়া বাজার, বি কে রায় রোড, শেরে বাংলা সড়কের একাংশের পানি বিভিন্ন ছোট ড্রেন ঘুরে কেডিএ অ্যাভিনিউতে চলে আসে। এরপর তেতুলতলা মোড়ের বক্স কালভার্ট দিয়ে গোবরচাকা এলাকার ভেতরের বড় ড্রেন দিয়ে পল্লীমঙ্গল স্কুল হয়ে পানি নবীনগর খাল ও পাশের আরেকটি বড় ড্রেন দিয়ে ময়ূর নদীতে চলে যায়।
স্থানীয়রা জানান, গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বৃষ্টি হলেই সড়কের পূর্বপাশে পানি জমে যায়। তাদের মতে এর কারণ হচ্ছে, শেখপাড়ার পূর্বপাশটি অন্যান্য অংশের চেয়ে নিচু। যার কারণে বৃষ্টি হলে আশপাশের সব এলাকার পানি কেডিএ অ্যভিনিউয়ের পূর্বপাশে চলে আসে। একসঙ্গে এতো পানির চাপ ড্রেন নিতে পারে না, ফলে ড্রেন উপচে পানি সড়কে চলে আসে।
এছাড়া তেঁতুলতলা মোড়সহ পানি নিষ্কাশন কালভার্টগুলো ছিল দীর্ঘদিনের পুরাতন। ময়লা-আবর্জনা ভরে থাকা এবং চওড়া কম হওয়ায় তা’ দিয়েও প্রয়োজনমতো পানি নিষ্কাশন হয় না। ফলে বৃষ্টির পুরো পানিটাই সড়কে জমে থাকে। ৪-৫ ঘণ্টা পর ধীরে ধীরে এই পানি নিস্কাশন হয়।
এই দুর্ভোগ থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে সড়কটির দুই পাশের ড্রেন এবং কালভার্টগুলো পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। এই প্যাকেজের ব্যয় হচ্ছে ১৩ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। ইতোমধ্যে অনেক এলাকায় ড্রেনের কাজ শেষ হয়েছে। সম্প্রতি পানি নিষ্কাশন কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। তখনই নকশার এই অসঙ্গতি ধরা পড়েছে।
কেসিসির ড্রেন ও কালভার্ট নির্মাণের নকশায় দেখা গেছে, পানি নিস্কাশনের জন্য সড়কে মোট ৪টি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। ৪টি কালভার্ট করা হচ্ছে ৪ ফুট ৪ ইঞ্চি চওড়া করে। এই নকশার পেছনে পরামর্শকদের যুক্তি ছিলো, ৪টি কালভার্ট সমান হওয়ায় বৃষ্টির পানি সমান ভাগে ভাগ হয়ে ৪টি কালভার্ট দিয়ে বের হয়ে যাবে। আর ড্রেনগুলো সব একই মাপের হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রবাহমান পানি কি কখনও উঁচু দিকে যায় ? যেখানে নিচু অঞ্চলে আশপাশের পানি এসে জমা হয় সেখানে একই মাপের ড্রেন বা কালভার্ট তৈরি করলে সেই পানি কি উল্টো দিকে প্রবাহিত হবে ? এটা তো বাস্তবতা বিবর্জিত একটি নকশা।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ কেসিসির ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মোঃ গাউসুল আজমও। পূর্বাঞ্চলকে তিনি বলেন, এই এলাকায় আমরা ছোট থেকে বড় হয়েছি। কাজ শুরুর আগে বলেছি, যে সব এলাকা নিচু এবং পানির চাপ বেশি সেখানে ড্রেন আরও চওড়া করে নির্মাণ করতে। তখন নকশার দোহাই দিয়ে কেউ কথা শোনেনি। এখন পানি নিষ্কাশনের মূল কালভার্টটিও যদি একইভাবে নির্মাণ করে তাহলে জলাবদ্ধতার সমস্যার আদৌ সমাধান হবে না। আর এতো টাকা ব্যয়ের পরও যদি কাজ না হয় এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু নেই।
এ ব্যাপারে খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার পূর্বাঞ্চলকে বলেন, ভৌগলিক অবস্থা এবং বাস্তবতা বিবেচনায় না নিয়ে কাজ করলে এর থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। এর আগে ২০১৩ সালে একইভাবে খুলনা নগরীর বড় বড় খালগুলোকে কংক্রিটের ড্রেনে রূপান্তরিত করা হয়। তখন এর প্রতিবাদ করলে বলা হয়েছে, বিদেশীরা নকশা করেছে এখন কিছু করার নেই। মাত্র ৬ বছর পর এর কুফল মানুষ দেখতে পাচ্ছে।
এ ব্যাপারে কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী এজাজ মোর্শেদ চৌধুরী পূর্বাঞ্চলকে বলেন, নকশা তৈরি হয়েছে অনেক আগে। এখন কাজ শুরুর সময় নকশার বাইরে গিয়ে কিছু করা যাবে কি-না বুঝতে পারছি না। আমরা সরেজমিন গিয়ে দেখে, এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেব।
সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের প্রকৌশলীরা নকশা করেছেন। এর বাইরে গিয়ে কিছু করা ঠিক হবে কি-না আলোচনা করে দেখছি।