অর্থ বছর শেষ হচ্ছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি
মাত্র ১০দিনের মধ্যেই শেষ হচ্ছে জুন মাস। এর মধ্যে ভিসি নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার কোন সুযোগ নেই। অর্থাৎ প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনেই শুধু প্রভাব পড়বে তাই নয়, বরং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের(কুয়েট) উন্নয়ন কর্মকান্ড যেমন স্থবির হয়ে পড়বে তেমনি রাজস্ব খাতের অর্থও অব্যবহৃত থাকবে বলে আশংকা সংশ্লিষ্টদের। সব মিলিয়ে চার মাস অতিবাহিত হলেও কুয়েটের অচলাবস্থার অবসান হচ্ছেনা শুধুমাত্র শিক্ষকদের ক্লাস বর্জনের কারনে। এমতাবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে কুয়েটের একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে আপদকালীন দায়িত্ব দিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন পদক্ষেপের লক্ষণ নেই। বরং শিক্ষা উপদেষ্টাও শর্ত জুড়ে দিয়ে নাকি বলেছেন ‘আগে শিক্ষকদের ক্লাসে ফিরতে হবে, পরে আলোচনা’। অবস্থা এমন যে, প্রথমে শিক্ষার্থীরা ভিসি বিরোধী একদফার দাবিতে মেযনটি অনড় ছিলেন পরে শিক্ষকরা তাদের লাঞ্ছনার বিচার দাবিতে অন্তর্বর্তীকালীন ভিসিকেও মেনে নিতে পারেননি। এক পর্যায়ে তাকে পদত্যাগই করতে হলো। আর এখন আবার শিক্ষা উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাতের জন্য কুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় এমন শর্তের কথা। সব মিলিয়ে কুয়েটের পরিস্থিতি যে কোনদিকে যাচ্ছে সেটি বলা মুশকিল।
শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের পক্ষ থেকে যেমন ক্লাস ও পরীক্ষা শুরুর দাবি জানানো হয়েছে তেমনি শিক্ষকরাও এখন কোন একটি সিদ্ধান্ত বা কোন পক্ষের সাথে আলোচনা ছাড়া পিছু হটতে পারছেন না। কিন্তুএমন কোন পক্ষ নেই যার বা যাদের আহবানে উভয় পক্ষকে নিয়ে অন্তত: একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান করা হবে। যে কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থীকে। এমনকি আগামী মাস থেকে যে পোস্ট গ্রাজুয়েটদের নতুন শেসনে ভর্তির কথা রয়েছে সে ব্যাপারেও নেই কোন উদ্যোগ।
কুয়েটের এমন পরিস্থিতে সবচেয়ে আর্থিক সংকটে পড়তে হয়েছে প্রায় সাড়ে চারশ’ কর্মচারীকে। কেননা তারা মে মাসের বেতন ও ঈদ-উল-আযহার বোনাস না পাওয়ায় তাদের পরিবারেও অভাব দেখা দিয়েছে। তাছাড়া জুন মাস শেষ হতে যাওয়ায় কুয়েটের প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের বিল যেমন আটকে যাচ্ছে তেমনি রাজস্ব খাতে প্রায় ১৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও অর্থ বছরের মধ্যে পরিশোধ না করায় তা’ ফেরত যেতে পারে এমন আশংকাও করেন সংশ্লিষ্টরা।
কুয়েটের ২৩০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের জন্য নিয়োজিত ঠিকাদারও জুন মাসের মধ্যে বিল পাবেন কি না সে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। এজন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের বিল দিতে না পারায় সেসব পরিবারেও দুরাবস্থা বিরাজ করছে।
সূত্রটি জানায়, ঈদের ছুটি শেষে কুয়েট চালু হলে গত ১৫জুন কুয়েটের কর্তৃপক্ষীয় বৈঠকে সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য শিক্ষা উপদেষ্টার সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য চেষ্টাও করা হয়। কিন্তু উপদেষ্টার সাক্ষাৎ মেলেনি। কুয়েটের প্রতিনিধি দল শিক্ষা উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাতের অনুরোধ জানিয়ে উপদেষ্টার পিএস-এর সাথে সম্প্রতি যোগাযোগ করলে জানানো হয়, ক্লাস শুরু হয়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি আসলেই শিক্ষা উপদেষ্টার সাক্ষাৎ মিলবে। কুয়েটের একজন সিনিয়র শিক্ষক এমনটি জানিয়েছেন। এজন্য এই মুহূর্তের কুয়েট সমস্যার সমাধান দিতে পারে একমাত্র ক্লাস শুরু করা।
কিন্তু শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরবেন কি না সে সিদ্ধান্ত হয়নি এখনও। এজন্য কথা বলা সম্ভব হয়নি কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ সাহিদুল ইসলামের সাথেও। কেননা তার ব্যবহৃত মোবাইলটি হয়নি।
কুয়েটের প্রধান প্রকৌশলী এবিএম মামুনুর রশিদ বলেন, কুয়েটের অচল পরিস্থিতিতে শুধু যে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হচ্ছে তাই নয়, বরং সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ যেমন বন্ধের পথে তেমনি রাজস্ব খাতের অনেক অর্থও অব্যবহৃত থাকছে। বিশেষ করে কুয়েটের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী ড. জুলফিকার হোসেন জুয়েল বলেন, নতুন ভিসি নিয়োগ প্রক্রিয়া জুলাই মাসের আগে হচ্ছে না এমনটিই মনে হচ্ছে। কেননা সম্প্রতি ভিসি নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজের ক্ষেত্রে জুনের এই কয়েকটি দিন হচ্ছে একটি সংকটজনক সময়।
উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রæয়ারি কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে বহিরাগতদের সংঘর্ষের পর থেকেই মূলত: অচলাবস্থা চলছে। ওই ঘটনার পর থেকে একাধিকবার সিন্ডিকেট বৈঠক, শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ, হল ত্যাগের নির্দেশসহ নানা কর্মকান্ড হয়। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার দায়ে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের একদফার কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। একদফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন পর্যন্ত পালন করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে শিক্ষা উপদেষ্টাও আসেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে। কিন্তু তাদের দাবিতে তারা অটল থাকেন। শেষ পর্যন্ত ২৫ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ভিসি-প্রোভিসি উভয়কেই অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপরই ওইদিন গভীর রাতে শিক্ষার্থীরা অনশন ভঙ্গ করার পর পয়লা মে অন্তর্বর্তীকালীন ভিসি নিয়োগ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু তিনিও কার্যক্রম শুরু করতে পারেননি। বরং ৪ মে থেকে শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষকরা ক্লাস বর্জন করায় ২২ মে পদত্যাগ করেন অন্তর্বর্তীকালীন ভিসিও। সেই থেকে এখনও অভিভাবকহীন কুয়েট।