ভেঙ্গে ভেঙ্গে বিক্রি করা
হচ্ছে বিভিন্ন অংশ

শেখ মনিরুল ইসলাম, দিঘলিয়া (খুলনা) ঃ প্রফুল্লচন্দ্র সেন ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয় মুখ্যমন্ত্রী। পৈত্রিক বাড়ি খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটী গ্রামে। সরকারের পরিত্যাক্ত সম্পত্তির তালিকায় রয়েছে তার বাড়িটি। কিন্তু একটি গোষ্টি বাড়িটি কুরে কুরে খাচ্ছে। প্রসাদোপম প্রফুল্লচন্দ্র সেনের বসতবাড়িটির এখন রয়েছে ভগ্নাংশমাত্র। দখলকারিরা বাকি অংশ ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নিলে বাধসাধেন স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মিরা। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়। বর্তমানে ওই গোষ্টি আবারো সোচ্চার হয়েছে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেনের বাড়ির বাকি অংশ ভেঙে ফেলার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এক একর দশ শতাংশ জমি জুড়ে প্রফুল্লচন্দ্র সেনের পৈত্রিক বাড়িটিতে এখনো রয়েছে ব্রিটিশ আমলের ঘাট বাঁধানো পুকুর ও দ্বিতল বাড়ির ভগ্নাংশ। এখানের মানুষ এখনো এটি মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি হিসেবে জানেন। একটি গোষ্টি সরকারের পরিত্যাক্ত সম্পত্তির এই বাড়িটি বার্ষিক ইজারা(ডিসিআর) নিয়ে পর্যায়ক্রমে প্রসাদোপম বাড়ির বৃহৎ অংশ ভেঙ্গে ভেঙ্গে বিক্রি করে দিয়েছে।
বাকি রয়েছে দ্বিতল ভবনের সিঁড়ি ঘরের একটি অংশ। অতি সম্প্রতি দখলকারি সিঁড়ি ঘরের অংশটুকু ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নিলে বাধসাধেন স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মিরা। স্থানীয় গণমাধ্যমের দু’জন কর্মি বিষয়টি সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মাহাবুবুল আলমকে অবগত করলে তিনি তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো: মাহমুদুর রহমান সরেজমিন গিয়ে দখলকারিকে মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেনে’র বাড়ির কোন অংশের ক্ষতিসাধন না করার নিদের্শ দেন।
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো: মাহমুদুর রহমান জানান, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেনের পৈত্রিক বাড়িটি বর্তমানে সরকারের পরিত্যাক্ত সম্পত্তি। এক একর ১০শতাংশের এই বাড়িটি জনৈক ব্যক্তি বার্ষিক ইজারা (ডিসিআর) নিয়ে বসবাস করছেন। তিনি জানিয়েছেন স্মৃতি বিজরিত সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেনের পৈত্রিক বাড়িটি নতুন করে ইজারা দেওয়া হবে না। বাড়িটি সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয় মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেন খুলনার সেনহাটী গ্রামে ১৮৯৭সালের ১০ এপ্রিল জন্মগ্রহন করেন। পিতা গোপাল চন্দ্র সেনের চাকুরির সুবাদে প্রফুল্লচন্দ্র সেনের ছোট বেলা কাটে ভারতের বিহারে। কোলকাতার স্কটিস চার্চ কলেজ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে বিএসসি পাশ করেন। সেনহাটী গ্রামে এই কৃতি সন্তান উচ্চ শিক্ষার জন্য বিলেত যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় কোলকাতায় মহাত্মা গান্ধীর ভাষন জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় তরুণ প্রফুল্লচন্দ্র সেনের। হয়ে ওঠেন একজন ভারতীয় বাঙালী রাজনীতিবিদ ও স্বাধীনতা সংগ্রামী গান্ধীবাদি নেতা। ১৯৪৮সালে তৎকালিন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় প্রফুল্লচন্দ্র সেনকে কৃষি মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন। ১৯৬২ সালে মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের মৃত্যু হলে সেনহাটী গ্রামের এই কৃতি সন্তান প্রফুল্লচন্দ্র সেন পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয় মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি পরলোকগমন করেন।